“আমরা শংকর, এটাই আমাদের পরিচয় “- জান্নাত লাবণ্য
আমরা জাতি হিসাবে শংকর। আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন নিম্ন বর্গের সনাতন ধর্মের। আর তাদের সাথে এসে মিশেছে বিবিধ ধর্মের, দেশের, সংস্কৃতির মানুষ। সেই মিশেলে আমাদের জন্ম বলেই আমাদের ভাষা, আচার -আচরণ, সংস্কৃতি, চিন্তা সবকিছুতেই আছে জগাখিঁচুড়ি প্রভাব। আমরা ধারণ করতে পারি না মুসলিম সংস্কৃতি, আবার পালন করতে পারিনা দেশীয় সংস্কৃতিবোধ।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, সাধ, জন্মদিনের অনুষ্ঠান, মুখে ভাত, হাতে খড়ি এরকম বিভিন্ন আচার আমরা পালন করি। অথচ আমাদের ধর্মীয় বোধ এগুলো পালনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আমরা এসব পালন করি। কারন এগুলো আমাদের এমন সব উৎসব যা বিধিনিষেধ সত্ত্বেও আমরা জন্ম থেকেই পালন করা দেখছি। আমাদের সংস্কৃতিতে নাকফুল, টিপ, বিছা, ঘুঙ্গুর পরার রেওয়াজ চলে আসছে আদি থেকে।
কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে চিহ্নিত আছে খারাপ স্বভাবের নারীরা টিপ পরতেন। আমরা দোটানায় পড়ে যায়। আমাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা যে পরিবেশে, স্থানে আমরা সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারিনা । অন্যদিকে আমাদের ধর্মীয় বিবেচনা আচ্ছন্ন করে অপরাধবোধে। আমরা উৎসব পালন করতে ভালোবাসি, জড় হতে ভালোবাসি, নিজেদের বাঙ্গালিত্ব প্রকাশে ভালোবাসি। এই চেতনাই আমাদের শক্তি। এ কারনেই ভাষার জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি। ভাষার উপর আক্রমণ শুধু বাঙ্গালির উপর ঘটেনি। কিন্তু আমরাই পেরেছি প্রমাণ করতে, যে আমরা আমাদের সব অংশকেই আদরে রাখতে চাই, ছিনিয়ে রাখতে চাই।
আমরা প্রিয়জনের কবরে গিয়ে কাঁদি, দোয়া করি। অথচ বিশ্বের এমন ইসলামী দেশ আছে, যারা কবর জিয়ারত করে না। তাদের সংস্কৃতিতে এটা নেই। আমরা শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুল দেয়। পহেলা বৈশাখে জড় হই। হালখাতা করি। এটা আসলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের আচারেরই প্রভাব। বিভিন্ন জাতি আমাদেরকে শাসন ও শোষণ করেছে। তাদের ভাবনা, চেতনা,ভাষা, আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
যেহেতু আমরা শংকর, আমরা সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী সবকিছু থেকেই গ্রহন করেছি, আবার প্রয়োজনে বর্জন করেছি। আমরা হুজুগে, আমরা বেঁধে বেঁধে থাকি। এটাই আমাদের শক্তি । এ কারনেই মাত্র নয় মাসে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের পোশাক বিচিত্র, আমাদের চেহারা রকমারি, আমাদের খাদ্য বৈচেত্র্যময়, আমাদের ভাষা সমৃদ্ধ। আমাদের যা ভালোলাগে তাই গ্রহণ করি। আমরা অনুকরণ করি। এ দায় আসলে আমাদের রক্তের, আমাদের জন্ম ইতিহাসে লুকিয়ে আছে।