বেণুবর্ণা অধিকারী : সুন্দরবন ছিল আমার স্বপ্ন, এই বনের ৩ ভাগের ২ ভাগ বাংলাদেশের সীমানায় পড়েছে।
ছোটবেলা যখন ভুগোল পড়তাম, দেশের মানচিত্র আঁকতে গেলে দক্ষিনে কেমন এবরোথেবরো করে আঁকিবুকি করতাম, আর মানচিত্রে সেখানে সবুজের ভেতর নীলের হাতছানি সেই তখন থেকেই।
একবার গিয়েছিলাম শুধু করমজল পর্যন্ত। সেটা একসমুদ্র ক্ষুধায় একবিন্দু তৃষ্ণা মেটায়।
সেদিন সুমন যখন তাদের পরিকল্পনা জানালো, মনে হলো আমিতো আসলে ছোট পরিসরেই যাবার অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ বড় টিমের সাথে গেলে, বন নয় আড্ডাটাই সারমর্ম হবে। আমার জানার অদম্য ইচ্ছা এই বনের গাছপালাকে আত্মীকরণ করাও।
বাসাবদলের নানান ঝক্কির মধ্যেই নিয়ে নিলাম এই চান্স। ছুটি মঞ্জুর হতেই ফাইনাল করলাম, এখন টাকা ম্যানেজ করাটাই চিন্তার ছিল। যাক এক বন্ধু অপুদা বললেন আমিও যেতে চাই, তাই আমি তোমারটা দিচ্ছি। তুমি পরে ম্যানেজ করে দিও। কেল্লাফতে আমারে রুধিবে সেই রাবন এখনো জন্মায়নি!!
গ্রুপের প্ল্যান অনুযায়ী ৭ঃ৩০ টার বাসে আমরা রওনা দিলাম। মধ্যরাতে আমরা রায়েন্দা,শরণখোলা, বাগেরহাটে পৌঁছালাম। মাছরাঙা পর্যটন কোম্পানির লঞ্চের সাথে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। ওরাই সেখানে হোটেলে রেস্টের ব্যবস্থা করেছিল।
সকালে উঠে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। হোটেল থেকে বেরিয়ে লঞ্চঘাটে গেলাম অটোতে করে।
সেখানে নাস্তা করে আমরা লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চ আমাদের নানান পথ ঘুরিয়ে প্রথমে কচিখালি অভয়ারণ্যে নিয়ে গেল। সেখানে কিছু এলাকা দেখে, নতুন এক চর ডিমার চরে নিয়ে গেল। এখনো এই চরে তেমন গাছপালা হয়নি, শুধু কাশ আর শন। তবে নানান বৃক্ষের বীজ ভেসে এসেছে। একসময় এরাই এখানে বসতি গড়ে তুলবে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি এইখানে আমাদেরই ফেলা পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক পণ্যে ছেয়ে আছে এই চর। আমরা অসচেতনতায় ক্রমাগত ঠেলে দিচ্ছি আমাদের পৃথিবীকে উষ্ণতার দিকে। আমি নিজে দেখেছি আমাদের লঞ্চ থেকে কেউ একজন প্লাস্টিকের ডায়াপার ফেললো নদীতে। এগুলোই ভেসে ভেসে এইসব চরে আটকা পড়ে।
পর্যটন করতে গিয়ে আমাদের সবারই সচেতনতা কাম্য। নিজ ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলে ব্যাগে বহন করে ময়লার বাস্কেটে ফেললেই হয়।
ডিমার চর থেকে আমাদের লঞ্চে ফিরে দুপুরের লাঞ্চ করলাম। লঞ্চ এগুচ্ছে কটকা দ্বীপের দিকে…
ক্রমশঃ