ইন্টারনেট মূলত মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে…আমীন আল রশীদ
ইন্টারনেট সারা পৃথিবীকে ছোট করে এনেছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ সহজ করেছে। কিন্তু এর বিপরীত হলো, ইন্টারনেট মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং কোনো কিছুতেই সে ঠিকমতো কনসেনট্রেট (মনসংযোগ) করতে পারে না। কোনো একটি লেখাও সে ঠিকমতো শেষ করে না। সেটা ফেসবুকে হোক কিংবা বইয়ে। সে সবকিছু সংক্ষেপে চায়। দ্রুত শেষ করতে চায়। একটু সময় নিয়ে কিছু পড়তে চায় না। এমনকি কোনো ভিডিওর ডিউরেশন বেশি হলে সেটাও দেখতে চায় না।
ইন্টারনেট মানুষকে মূলত ‘ধর তক্তা মার পেরেকে’ উদ্বুদ্ধ করে। বইয়ের বিক্রি কতটা বেড়েছে তা হয়তো পরিসংখ্যানের বিষয়। কিন্তু মানুষের বই পড়ার প্রবণতা যে কমেছে এবং ইন্টারনেটে যুক্ত মানুষ যে একটানা অনেক সময় ধরে এখন আর বই পড়ে না–সে বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কারণ বই পড়ার মধ্যেও মানুষ বারবার মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ফেসবুকে নতুন কিছু এলো কি না। তার পোস্টে নতুন কোনো কমেন্ট বা লাইক পড়লো কি না। ফলে ইন্টারনেটে প্রতি মানুষের এই অতি মনসংযোগ তাকে পৃথিবীর অন্যান্য জিনিস থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
একটি গবেষণায় (প্রতিচিন্তা, জানুয়ারি-মার্চ ২০১৮, পৃষ্ঠা ৬৪) বলা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমগুলো যুবসমাজকে অতিরিক্ত মাত্রায় আত্মসচেতন, উদ্বিগ্ন এবং সবশেষে হতাশ করে ফেলে। সামাজিক মাধ্যমগুলো আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা হরণ করছে এবং মানবিক, শারীরিক ও অনুভূতির সাহচর্যকে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করছে। এই মাধ্যমগুলো আমাদের আত্মসংযম কেড়ে নিয়ে নিজেদের স্বাধীন চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দিয়েছে এবং সেইসব অবান্তর তথ্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাসপ্রবণ করে তুলছে যা আমরা কোনো বাছবিচার ছাড়াই প্রতিনিয়ত গলাধঃকরণ করে চলেছি।