উত্তরা গণভবনের ঐতিহাসিক ডাবলডায়ল দুই কাঁটা ঘড়ি বিকল

0
5861
nATORE KANTHO

মেহেদী হাসান বাবু : উত্তর জনপদের ঐতিহাসিক দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন উত্তরা গণভবন দেশ-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষনের শীর্ষে।

রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন নাটোরের উত্তরা গণভবণ। এই স্থাপনার প্রবেশদ্বার ভ্রমন পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ। প্রবেশদ্বারে আছে তৎকালীন ইটালীর ফ্লোরেন্স থেকে আনা বিশেষ মেকানিকাল ডাবলডায়াল দুইকাঁটা ঘড়ি। প্রায় দুইশ বছর ধরে প্রধান ফটকের দুইপাশের সঠিক সময় দিয়ে আসছিল বিরল এই ঘড়িটি। কিন্তু কালের সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী ঘড়িটি হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য।

এক সময় কয়েক মাইল দূর থেকে শোনা যেত যে ঘন্টা ধ্বনি এখন তা নষ্ট হয়ে পরে আছে। ঠিকমত সময় দিচ্ছেনা, বাজে না আর ঘন্টা ধ্বনি। ঐতিহাসিক ঘড়িটি রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অপর দিকে ঘড়ি মেরাতের প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। উত্তরা গণভবন সুত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান ফটকের ঘড়িটি চলছে কিন্তু ঘন্টা বাজছে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজা মিয়া জানান,উত্তরা গণভবনের অন্যতম আকর্ষণ প্রধান ফটকের মাঝখানের ঘড়িটি অনন্য এক প্রাচীন নিদর্শণ। প্রায় দুইশত বছর নিরলস সময় ও ঘন্টা বাজিয়ে সময় জানান দেওয়া ঘড়িটি গত কয়েক দিন ধরে বাজছে। শোনা যাচ্ছেনা প্রতিঘন্টার ধ্বনি। আগে এই ঘড়ির ঘন্টা ধ্বনি ৩-৪ মাইল দূর থেকে শোনা যেত। এখন তো আর ঠিকমত চলে না বলে জানান তিনি।

স্থানীয় এক দর্শনার্থী সাবিনা ইয়াসমিন নাটোর কন্ঠকে জানান, বাবা-মার মুখে শুনেছি এই ঘড়িটা কয়েক’শ বছরের পুরোন। কিন্তু দেখতে এসে ঘড়ি দেখছি, তবে কোন ঘন্টা ধ্বনি শুনতে পাইনি। দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক সবিতা রানী নাটোর কন্ঠকে জানান, খুবই চমৎকার একটি স্থাপনা উত্তরা গণভবন। তবে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টা ধ্বনি বাজলে আরও ঐতিহাসিক মনে হত দর্শকদের জন্য।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন নাটোর কন্ঠকে জানান, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি মাখা উত্তরা গণভবনের রক্ষাবেক্ষনে কোন গাফিলতি করা উচিৎ না। এখানের সব স্থাপনার সঠিক দেখভাল করা অতিব জরুরী। কারন এসব ঐতিহ্য নষ্ট হলে তা আর ফিরানো কঠিন! যেহেতু বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও প্রধান মন্ত্রীর বাস ভবন, তাই বিষয়গুলো আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ঐতিহাসিক এ ঘড়িটি চালক ফারুক হোসেন নাটোর কন্ঠকে জানান, তার জানামতে উপমহাদেশের একমাত্র ডাবলডায়াল দুই কাঁটা ঘড়িটি চালাতে বিদ্যুৎ বা ব্যাটারীর প্রয়োজন হয় না। একবার চাবি দিলেই ঘড়িটি চলে পুরো এক সপ্তাহ আর কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না। মেকানিক্যাল সিস্টেমের ঘড়িটিতে দুটি চাবি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। একটি চাবি সময় ঠিক রাখে অপর চাবিটি প্রতি ঘন্টার ঘন্টা বাজায়। লোহা, তামা যন্ত্রাংশ এবং এক দিকে আট মন ও অপর দিকে বারো মন ওজনের পাথরের সময় ও ঘন্টা বাজাতে প্রতি মুহূর্তে কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, মেকানিক্যাল সিস্টেম দীর্ঘ দিন চলার কারনে লোহা ও তামার বিভিন্ন পিনিয়াম ক্ষয় হয়ে গেছে। এতে ঘড়িটির দুই অংশের একটি বন্ধ। শুধু সময় ঠিক মত চলছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ঘন্টা বাজছে না। স্যারদের নজরে আছে বিষটি। আমরা চেষ্টা করছি নষ্ট যন্ত্রাংশগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেরামত করতে পারব। এই বিরল মেকানিক্যাল ঘড়িটির কাজ খুব সুক্ষ হওয়ায় এটি মেরামত করতে সময় লাগছে বলেও তিনি জানান।

ঐতিহাসিক এ ঘড়ির ঘন্টা নষ্ট থাকার কথা স্বীকার করে এটিকে মেরামত করে আগের মত সচল করতে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ।

ঐতিহ্যবাহী ঘড়ি মেরামত হয়ে আগের মত ঘন্টার ধ্বনিতে মুখর হবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও পর্যটকদের।

bonolota

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধগৌরবোজ্জ্বল ভাষা -মাহফুজা আরা পলক‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধকবি অসিত কর্মকার‘এর একগুচ্ছ কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে