কবি সুপ্তি জামান’এর একগুচ্ছ কবিতা

0
819
Shupti Jaman

করোনার যতসব অসাড় থিওরি

অনেক থিওরি এলো গেলো
করোনা করোনার জায়গাতেই থাকলো।
কেউবা বললো বিসিজি টিকার কথা,
কেউ বললো গরম আর আদ্রতার কথা
কেউ বললো ভৌগলিক অবস্থানের কথা
কেউ বললো গরীব দেশের মানুষের আছে করোনাজয়ী ইমিউনিটি
কেউ বললো করোনা হলেও বাঙ্গালী কাবু হবে না
মৃত্যুহার অনেক কম
কেউ বললো করোনায় নারীদের আক্রান্তের হার নিতান্তই গৌণ
হলেও মরে না, ও জাতটায় জমেরও অরুচি!
কেউ বললো করোনায় শিশুদের কিছু হয়না
কেউ বললো আমরা হাগ করি না, কিস করিনা
অতএব করোনা হবে না
কেউ বললো করোনা মুসলিমদের জন্য না
কেউ বললো আদা, রসুন, লেবু, টক, ঝাল, জল ও ফল খেলে করোনা দূরে রবে
কেউ বললো এদেশ তারুণ্যে ভরপুর, করোনা তো বয়-বৃদ্ধদের ব্যাধি।
আরো কত থিওরি আসবে যাবে বাজারে
এসবের নেই কোন গবেষণালব্দ ভিত্তি।
প্রতিটি প্রাণ অমূল্য এই পৃথিবীতে
তাই মনগড়া তত্ত্ব কপচিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত করা অনুচিত
করোনা বেড়ে চলেছে আপন গতিতে স্বকীয় তাল লয় ছন্দে
প্রবোধ ছলনায় ভুলাতে নিরাশার দহন
আশার বাণি তখনই বেশি করে আওড়ায় মানুষ
যখন আশা জাগানিয়া সুর আর বাজে না মনে-প্রাণে।
তাই যে যাই বলুক না কেন
যতই শিথিল হোক লকডাউন
খুলে যাক হাট,মাঠ, ঘাট
নিজ নিজ জীবনের সুরক্ষায় নিজেরাই হবো সচেতন
সাধ্য মতো ঘরে থাকবো, করোনা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবো।

উপেক্ষা

উপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম
দিন যাপনের যত গ্লানি তা সব
কূপমন্ডুকদের নব নব আঁচড়ে রক্তাক্ত হতে চাইনি বারংবার
তাই বলে কূপমন্ডুক থেমে নেই
নানা ছলে গভীর থেকে গভীরতর আঁচড়ে খুবলে খায় কলিজা,
আমি উপেক্ষা দেবীর পায়ে দেই অর্ঘ্য
বাঁচাও মোরে দেবী
আর পারিনা সইতে, উপেক্ষা করার আরো শক্তি দাও।
দেবী শুনেছিল সেই করুন রোদন আমার
তাই উপেক্ষিত আজ সোনা ঝরা রোদ
সুমিষ্ট ছুটির আনন্দ
প্রশান্ত দখিনা হাওয়া
আদরের ঘুম
মনের ভিতরের শান্তির পায়রা ছটফট করে
উপেক্ষিত আসমান জমিনের ক্যানভাসে আঁকা সব রঙ।
কূপমন্ডুকদের ধারালো নখের আঁচড়ে হৃদয় জমিনে রক্ত জবা ফোঁটে থরে থরে।
গভীর থেকে গভীরতর সব ক্ষত
পুঁজ হয়, গন্ধ ছড়ায়, পোকা হয়, পাখা হয়,
ছানাপোনা হয়
ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় থেকে মগজে।
উপেক্ষা করতে পারি না কিছুতেই
ক্ষয়ে যাই, ভেঙ্গে যাই, চেয়ে থাকি
নির্বাক নিথর।

রোহিঙ্গা নাও

কিছুই বদলে যায়নি
করোনা কিছুই বদলে দিতে পারেনি
বদলে যাবে এমন স্বপ্নও আমি দেখিনি,
এ মানব জাতি স্ব-স্বভাবে চির অম্লান।
রাজনীতির এমনই ম্যারপ্যাচ
মানুষকে করেছে তার দাসানুদাস।
মার্কিনীরা আজ জীবন দিয়ে দিচ্ছে
নেতা নির্বাচনে অর্বাচিন হওয়ার খেসারত।
স্বপনেও ছিল না জানা
নোবেল শান্তি কন্যা মানুষকে করে দেশ ছাড়া,
বাড়ি ছাড়া, পতাকা ছাড়া।
রোহিঙ্গা ভাসে আজ মাঝ দরিয়ায়
তাই স্বীকৃতিই সব নয়।
করোনা পরবর্তী বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইবে না সেকথা নিশ্চিত।
তাই কোন সুস্বপ্ন নয়
দুনয়নে ভাসে মাঝ দরিয়ায় ভাসা রোহিঙ্গা নাও।
আর কবে কূলহারা মানুষ পাবে কূলের ঠিকানা।
আর কত মৃত্যু দেখলে
নেতারা বুঝবেন
মানুষই অমূল্য, আর কিছু নয়।

রোদের জন্য প্রার্থনা

দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি
দুঃখ ভারাক্রান্ত মেঘলা আকাশ
চারধারে আঁধারের আধো আধো ছায়া
শীত আর উষ্ণতার মন কষাকষি আড়ি
এমন দিনে ব্যাথা বাড়ে
ছড়িয়ে পড়ে শরীর থেকে মনে।
আমি বরাবর রোদ ভালবাসি
রোদ দেখলেই মন চনমন করে
মনে হয় কত দূর থেকে জীবনের জয়-ঢাক
বাজিয়ে রোদ এসেছে এক তোড়া ভালবাসা হাতে নিয়ে।
আজ এই দুঃখ ভারাক্রান্ত শীতল সন্ধ্যায়
আমি রোদের জন্য প্রার্থনা করছি।
রোদ তুমি সকালেই এস ঝলমলে সোনা রোদ সাথে নিয়ে।
তুমি এস জীবনের জয়-ঢাক বাজাতে বাজাতে।
যে সব কুয়াশা এসে ঢেকে দেয়
আমার সোনালী আকাশ তাদের বিনাশ কর।
রোদ তুমি এসে পড় সত্ত্বর
যা কিছু গেছে ছেড়ে
তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাও আরো দূরে
এক ফালি সোনালী রোদ হলেই
আমি ভেসে যাব আলোর বন্যায়।
রোদের জন্য আজ আমার আকূল প্রার্থনা,
আজ না হয় থাকলাম মেঘের সাথে
কাল তুমি ঠিক এসো প্রিয়
চোখের পাতা ছুঁয়ে দিও
দিও তোমার উষ্ণ পরশ ঢেলে।

Advertisement
উৎসShupti Jaman
পূর্ববর্তী নিবন্ধভক্তদের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো শীতলা দেবীর পূজা
পরবর্তী নিবন্ধএ মৃত্যু চাইনা -কবি প্রদীপ সরকার‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে