করোনা ও সাংবাদিক- রেজাউল করিম খান

0
397
Rezaul

করোনা ও সাংবাদিক- রেজাউল করিম খান

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসজনিত সংক্রমণে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সাংবাদিক সমাজ। দেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কর্মপরিধি সীমিত করার ঘোষণা দিলেও অধিকাংশ সংবাদকর্মীকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশেই কাজ করতে হচ্ছে। দেশের যে সকল জনগোষ্ঠী চলমান পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদের মধ্যে সংবাদকর্মীরা অন্যতম। এই পেশায় জড়িত কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সকল সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে তাদের কর্মীদের জীবনমানের উন্নয়ন ও চলমান বাজার পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি উঠছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটায় সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ডিজিটাল নিউজ পেপার, বার্তা সংস্থার সাংবাদিক কর্মচারীদের কর্তব্য পালন হুমকির মুখে পড়েছে।

ইতিমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শরীরে কোভিড-১৯ পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় গণমাধ্যম পরিবারে তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে, অজানা আতঙ্ক। দাবি উঠেছে সুরক্ষার। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে সরকার প্রায় সব সেক্টরে আর্থিক সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সংবাদকর্মীদের জন্য এখনও তেমন কোনও ঘোষণা আসে নি। প্রথমদিকে সংবাদকর্মী ও মালিকপক্ষ বিষয়টির প্রতি তেমন গুরুত্ব দেন নি। যদিও চীনের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত খরব আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমেই প্রথম জানতে পারি। বর্তমানে গৃহবন্দি মানুষকে সর্বশেষ খবর জানার জন্য টেলিভিশনের সামনেই আসতে হয়। বিস্তারিত জানার জন্য সংবাদপত্র। এছাড়া মোবাইল, টুইটার, ইন্টারনেট, ফেসবুকও আছে। তবে খবরে আস্থা রাখার জন্য দিনশেষে সাংবাদিকের কাছেই যেতে হয়। সেই সাংবাদিক এখন অনেকটাই অরক্ষিত, সংক্রমণ ও আর্থিকভাবেও।

করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক ও কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও বকেয়াসহ বেতন-ভাতা পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। ১১ই এপ্রিল রাজধানীর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ আহ্বান জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার এই বৈশ্বিক দুর্যোগের সময় সংবাদকর্মীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। টেলিভিশন সাংবাদিকদের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। তারা এ কাজটি শুরু থেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।’ এরজন্য তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। তাঁর এই আশ্বাসে সাংবাদিকগণ করতালি দিয়েছেন। তবে কতটা খুশি হয়েছেন, সেই খবর জানা যায় নি। এর আগে গত মার্চ মাস্ইে সাংবাদিক সংগঠনের একাংশের নেতারা মাঠ পর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য দায়িত্বরত সংবাদ কর্মীদের জন্য পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) এবং আর্থিক নিরাপত্তার দাবি তোলেন। এই প্রসঙ্গে অনেকে প্রশ্ন করেন, সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনকে কেন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যেতে হবে? নিরাপদ দূরত্বে না থেকে কেন ত্রাণ বিতরণের ছবি তুলতে হবে? কেন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে ভিআইপির সাংবাদিক সম্মেলনের ছবি তুলতে হবে? এতো গেলো ঢাকার সাংবাদিকদের অবস্থা। অথচ করোনাভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।

দেশের সব জেলা-উপজেলাতেই আছেন বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী। তাঁরাও আছেন ঝুঁকির মধ্যে। কিন্তু তাঁদের কথা তেমনভাবে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। এদেরকে বলা হয় জেলা বা মফস্বল সংবাদদাতা বা প্রতিনিধি। এরা শখের বসে লিখতে শুরু করেন। ছাত্র জীবনে কারও দেখাদেখি, কারও উৎসাহে, ‘সাংবাদিকের’ দৃশ্যমান ক্ষমতার প্রভাব দেখে, রোমাঞ্চিত হয়ে লিখতে শুরু করেন। তবে তিনি সংবাদদাতা হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন না। তার পরিচয় সাংবাদিক। আর এটিকেই কালক্রমে অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। মালিক কর্তৃপক্ষ মফস্বল সাংবাদিকদের সাধারণত নিয়োগপত্র দেন না। দেয়া হয় পরিচয়পত্র। বেতন-ভাতা নেই, আছে সামান্য সম্মানী। তাও সকলে পান না। এখন অবশ্য পত্রিকার প্রতিনিধি হতে গেলে কতো বেশী বিজ্ঞাপন দিতে পারবে তার উপর নির্ভর করে তার ভাগ্য। টিভি প্রতিনিধি হওয়ার জন্য প্রয়োজন নগদ টাকা। তা যেভাবেই সে ‘সাংবাদিক’ হোক না কেন, তারও একটি জীবন আছে, আছে ঘর-সংসার, স্ত্রী-সন্তান। এই সংকটকালীন পরিস্থিতিতে সরকার ও মালিক-কর্তৃপক্ষ এদের কথা কি একটু ভাববেন?

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনলডাঙ্গায় মৃত যুবক করোনা আক্রান্ত ছিলেন না, ৮০ নমুনার সবগুলোই নেগেটিভ
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে করোনার দুর্যোগে ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় চলনবিলের কৃষক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে