করোনা পরিস্থিতি ও সচেতনতা, সঠিক ও কার্যকারী কর্মপন্থা জরুরী- মুন্ডা কালিদাস
আজ একটি নির্ভরযোগ্যসূত্রে জানতে পারলাম, এক প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে কেন যান নাই প্রশ্নে ম্যাজিষ্টেটকে মারতে তেতে আসেন জনৈক এক প্রবাসী। কোথাও কোথাও সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে গা ঢাকা দিচ্ছেন। খবর পেয়ে উক্ত ঘটনাস্থল থেকে সাড়াশী অভিযান চালিয়েও তাদের টিকিটাও উদ্ধার করতে পারেন প্রশাসনের লোকজন। যেন তারা হাওয়ায় মিলিয়ে যান। সরকারীভাবে এত সতর্কতা জারি, সচেতনতা তৈরী ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে তবু আমরা মানছি না। বিষয়টা সত্যি করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্বক।
সত্যি আমরা আজব বাঙ্গালী। নিজেও মরি, অপরকে মারি। হোক শত্রু, হোক স্বজন। কোন নির্দেশনা মানতে আমাদের এতো ঘার তেরামী, এতই ঘাউরা আমরা! যেখানে বলা হচ্ছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেন, চাই শুধু নিজস্ব সচেতনতা ও কিছু নির্দেশনা পালন। সেখানেও আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি বুদ্ধিরামের দেওয়া আক্কেল নিয়ে। সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত ডাক্তার, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, সদস্য, সাংবাদিক কারো জন্যই নিরাপত্তাহেতু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না তা এখনও অস্পষ্ট।
অবস্থা নিতান্তই বেগতিক হলে ডাক্তারাও পালাতে পারেন বা তাদের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে পারে তখন কিন্ত এতটুকু অবাক হব না। তারাও তো মানুষ! খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিভাবে অন্ন পাবে(যদি তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় আসে) এই আপদকালীন সময়ে এবিষয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ দেখা যায় নাই। বিশ্বের অনেক শক্তিশালী দেশ কিন্তু এই মহামারির কারনে কোণঠাসা। কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্র লক ডাউনে আজ। আর আমরা এখনও বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছি। আজ একটি ভিডিওতে দেখলাম, বিদেশে হোম কোয়ারেন্টাইন নির্দেশনা না মানায় এক ব্যক্তিকে মোটা একটি লম্বা মুগুর দিয়ে পেটানো দুই পুলিশ। পিটিয়ে প্রায় ল্যাংটা করে ফেলেছে।
অথচ আমাদের দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার মত যারা তাদের সাথে জামাই আদর দিয়ে কথা বলা হচ্ছে। এমনিতেই আমরা এক আজিব জাতি, এরা জামাই আদরের কথা শুনবে বলে আমার মনে হয় না। জরিমানা করেও যে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টানে রাখা যাবে সেটাও বা বলি কেমনে? অন্যদিকে যারা আক্রান্ত বা সন্দেহের তালিকায় তারা কেন ডাক্তার বা হাসপাতালে যাচ্ছেন না সেটাও দেখা উচিত। আর যাই হোক সবাই তো আর ঘাড় ত্যাড়া নয়। অনেক লোকের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন বা ডাক্তারদের ভূমিকা নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছে।
আমাদের এই দেশটা যেহেতু একটা গুজবের দেশ তাই সমস্যাটা আরো অনেক বেশি প্রকট। আমরা নিজে চিন্তা করে ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে গুজবের কথায় বেশি কান দেই। এতে মনেড় খোরাক হয়, সময়ও বাচে। তাই ডাক্তাররাও রোগীদের প্রতি অনেক বেশি ইতিবাচক হবে এমন প্রত্যাশা সব সময় থাকবে। সকলের মাথায় এটা থাকা উচিত যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই কেউ মারা যাবে না। মনে রাখতে হবে আক্রান্তদের ৮০% মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন। চাই শুধু সচেতনা ও কিছু নির্দেশনা পালন। শরীরে থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই করোনাকে বিনষ্ট করতে অনেকটা সক্ষম।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০জন। সরকারীভবে মৃতের সংখ্যা ২জন। আমরা সচেতন হলাম বাট করোনা প্রবেশের ফুটোটা বন্ধ করতে পারলাম না। আর যখন পারছি তখন দেশে অনেকে আক্রান্ত। হয়তো এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে আমাদের পাগলাটে, উন্মাদ সভাবের কারনে। তাৎক্ষনিকভাবে যদি আমরা সূচ ঢোকার জায়গা টা বন্ধ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের এখন এতো হা হুতাশ করতে হতো না। ক্রমান্বয়ে সন্দেহের তালিকাটাও বাড়ছে।
এখনও আমাদের দেশে এই বৈশ্বিক মহামারি সংকটটা প্রবল আকার ধারণ করেনি তাই একটু স্বস্তিতে আছি। কিন্ত উপরওয়ালা না করুক, যদি আমার এই মহামারি ঠেকাতে ব্যর্থ হয় তবে, সারামাস কারফিউও থাকলে দেশের সকল নাগরিকের সকল দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে, যেমনটা করে দেখিয়েছেন ট্রুডো।
সকলেই সরকারী নির্দেশনা মেনে চলুন, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুণ, প্রচুর পানি পান করুন। নিজে বাচুন, অপরকে বাচান, করোনা প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগীতা করুন। মনে রাখা দরকার, করোনায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন বয়স্করাই ঝুকির তালিকায়। বাকি যারা তাদের এত আতঙ্কের কিছু নেই। মনে সাহস রাখুন। আপনি এটা জয় করতে পারবেন। করোনা প্রতিরোধে এদেশে সেনাবাহিনীর উপর দায়িত্ব দেওয়া হোক। সর্বপরি সবচেয়ে জরুরী সরকারের সঠিক ও কার্যকারী কর্মপন্থা। নইলে ভেং্গে পরবে চেইন অব কমান্ড।