করোনা ভায়রাসগল্প – ১ ও ২ -এম আসলাম লিটন
আজ দু সপ্তাহ হলো আলাদিন ঘরে আছে। বাইরে যাওয়া নিরাপদ না। এদিকে সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে গেছে। চালের ভাঁড়ার শূন্য। শহর লকডাউন। করোনার সতর্কতা চলছে। সমস্যায় পড়ল আলাদিন। ঘরে খাবার নাই, খাবে কী!!
হঠাৎ মনে পড়ল, তার তো চেরাগ আছে। চেরাগে ঘঁষা দিলেই দৈত্য বের হয়ে আসবে। নিমেষেই ছুটে যাবে। এনে দেবে, চাল ডাল আলু সাবান; যা চাই!!
আলাদিন দেরি করল না। চেরাগ বের করে ঘঁষা দিল। কিন্তু দৈত্য এলো না। আবার ঘঁষল, দৈত্য এলো না। সে অবাক হলো। ঘটনা কী!
সে এক সময় জোরে জোরে ঘঁসতে লাগল। এবার চেরাগ থেকে ধোঁয়া বের হতে লাগল। দৈত্য হেঁসে উঠল বিকট শব্দে। কিন্তু দৃশ্যমান হলো না।
আলাদিন বলল, দৈত্য, তুমি বাইরে আসছ না কেন?
দৈত্য চেরাগের ভেতর থেকে বলে উঠল, হোম কোয়ারেনটাইনে আছি, মালিক। আরব দেশ থেকে এসেছি কী না!!!
করোনা ভায়রাসগল্প- ২
গোপাল ভাঁড় ক’দিন ধরে দরবারে আসছে না। রাজা উদ্বিগ্ন। কিছুটা বিচলিতও।
পরপর কয়েকবার পেয়াদা পাঠালেন, কিন্তু গোপাল বাড়ির দরজাই খুলছে না। অবশেষে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নিজেই গিয়ে হাজির হলেন গোপালের দরজায়। শত ডাকেও সাড়া না পেয়ে বললেন, কী হলো গোপাল, কিছু বলো! অন্তত মুখ তো খোলো !!
গোপাল এবার ভেতর থেকে চেঁচিয়ে বলল, মুখ খুলছি মহারাজ, তবে দরজা খোলা যাবে না। যা বলার বাইরে থেকেই বলেন।
কৃষ্ণচন্দ্র কিছুটা অপমানিত বোধ করলেন, তবু বললেন, গোপাল, তুমি সুস্থ আছো তো? গোপাল বলল, জ্বি মহারাজ, সম্পূর্ণ সুস্থ।
মহারাজ বললেন, সুস্থ আছ, অথচ বাড়ি থেকে বের হচ্ছ না!!
গোপাল বলল, বাড়িতে আছি বলেই তো সুস্থ আছি মহারাজ।
রাজা ঈষৎ রেগে বললেন, তুমি দরবারে আসছ না। রাজ নিয়ম অমান্য করছ। তোমার কিন্তু মাইনে কাটা যাবে।
গোপাল বাড়ির ভেতর থেকে চেঁচিয়ে বলল, আমি নই মহারাজ, রাজ নিয়ম আপনিই ভঙ্গ করছেন।
রাজা হতবাক! কেন? কীভাবে?
গোপাল বলল, রাজ্যে করোনা ভায়রাস সতর্কতা চলছে। সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। অথচ, আপনি বাইরে বেরিয়েছেন। নিজেও ঝুঁকিতে অছেন, অন্যকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।
গোপালের কথায় কৃষ্ণচন্দ্র সম্বিত ফিরে পেলেন। কিছুটা লজ্জিতও হলেন। অনুতপ্ত হয়ে বললেন, তাই তো, তাইতো গোপাল!! আমি এক্ষুনি ঘরে ফিরে যাচ্ছি।
গোপাল খুশি হয়ে বলল, ধন্যবাদ। তবে আরো কিছু রাজআদেশ যে মানতে হবে মহারাজ! বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নেবেন! পারলে গোসল করে নেবেন। আর হ্যাঁ, এ মাসের মাইনেটা আগাম পাঠিয়ে দেবেন!
-এম আসলাম লিটন