একা
প্রত্যহ দ্বিধার পাহাড় বুকে
নির্বাক কত মুখের চলাচল দ্যাখো
আর আকাশ-পাতাল ভাবনায় শীতরাত্রির নিঃসঙ্গ নদীটির মতো ভ্রমণেচ্ছা পুষে রাখো।
বড্ড অসময়ে অনূদিত চোখের পাতার মর্মর
অনুরাগে মুখে আনোনি বলে
আমিও ব্রা-বিহীন স্তনের ডাক উপেক্ষা করে
মাতাল ডোমের মতো নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করি বারংবার।
সেই হাঁটুজলের নদী পেরিয়ে
দূরে, সর্ষে ফুলের হলুদবাটা
প্রান্তরে পাখিরা যেখানে তোমার নাম ধরে ডেকে যায়
মদ মাংস মাৎসর্যের লালচে নয়
সেখানে বসে থাকি নির্জন নিরবতায়।
পৃথিবী তো গোল, ঘুরতে ঘুরতে
ফের যদি হঠাৎ কোনো অচেনা শহরে
ভাবুক বেশে দেখা হয়ে যায় দু’জনার,
যদি ও অধর ছুঁয়ে যায় আমার নিশাস
তবে ডানাওয়ালা পিঁপড়ের গলায় তুমি পরাবে
ঐসব একাকিত্বগুলো
আর আমি পরাবো আমার নির্জনতা
তারপর সান্ধ্য অন্ধকারে
শশ্মান পোড়া ঘ্রাণ নিতে নিতে
জেনে নেবো শুকতারার একা থাকার মাহাত্ম্য।
ভুলে যাবো
একরাশ পোকার ডিম ফুলের বৃন্তে।
মহতের পিছে দ্বেষ ভরা মানুষ।
হাওয়া কি নিয়ে এলো অচেনা ঘ্রাণ;
কালোকেশী মেঘ?
একবারও ঘুরে দেখা হয়নি কত কত ফলের বাগান
খুব গোপনে শুকায় তাঁর বক্ষবন্ধনী
টুপটাপ আপেল পতনে টের পাই মধ্যাকর্ষের!
অন্তরঙ্গ বন্ধুটির কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই
ও কিন্তু, একবারও বলে না,
‘কেমন আছিস দোস্ত?’
পথে-প্রান্তরে এত যে কাঁটা; খানাখন্দ
আমিও ভুলে যাবো ক্ষণিক এ ভ্রমণের কথা।
প্রশ্ন
অপ্রাপ্তিতেই জীবনের যত উপলব্ধি।
প্রতিটি সঙ্গমই যেন এক একটা সফল মৃত্যু।
ব্যপদিষ্ট বাতাসে কি মিলিয়ে গেল ফুলের রেণু;
অধরা সঙ্গম?
তবু, যে অনস্তিত্বের নাম ধরে ডাকছে পাখি
অসময়ের বৃষ্টি
খুব বেশি করল কী ক্ষতি মাঠের ভাঁড়ার?
জানার আগ্রহে অনিমিখ উদাস আঁখি প্যাঁচার
অথচ_ আজ অবধি
ভালো কোনো প্রশ্নই দানা বাঁধেনি বুকের খাঁচায়!
বধির পাতা ঝরছে
দূরের ট্রেনের ঘন্টাধ্বনি
রাত্রি দুপুর
নর্তকী নূপুর
ঝুমুর ঝুমুর
ঘুমহারা দিশেহারা অরণ্যানী।
জাগ্রত বিপ্লবীর সমাধি
শশধর একা
ধনুক বাঁকা
তীরের রেখা
যুঝছে বুর্জুয়া ব্যাধি।
ডাইনি মুখে ধর্মবুলি
সান্ত্রী শয়তান
চাতুরী আসমান
লুণ্ঠন গান
পাপাসন মাথার খুলি।
বোবা নক্ষত্রেরা হাসছে
আঁধার পরস্পর
বুক ধরফর
শীতের ভেতর
বধির পাতা ঝরছে।
অনঘ প্রেরণা
দোয়েলের দূরালাপনী নস্যি মনে করে
কে তুমি অন্ধ শোষক
গলা টিপে ধরেছো অজস্র হাতে?
আঁধারে সমবেত চতুর কালো বেড়াল
আমরা অনুভব করি ঠিক-ই
অথচ, পারি না কিছুই বলতে!
চারিদিকে মিথ্যে, অবিচার-অনাচার
এত যে নীল ছোবল
সবি তাঁর ভেসে ওঠে সরিৎ আরশিতে।
কুমারী যোনী ছিড়ে খায় সিদ্ধপুরুষ
একঘরে বয়াতীর এপাশ-ওপাশ
জল জমে চোখের শার্শিতে!
ঘরে ঘরে আগুনপাখি যদি হাঁকে হায়দরি হাঁক
হ’তেই হবে পুড়ে ছারখার
যদি ও-গানের গোলা লাগে গদিতে।
আমরা রেখেছি পুষে অনঘ প্রেরণা
সংসারে বাঁচার সার্থকতা
শোষক তুমি ঘৃণিত চিরকাল অশোভন মাকালমণিতে।