“ছড়ার কথা- তিন”- কামাল খাঁ
কবিরা ছড়া দিয়েই আধিকাংশজন শুরু করেন। পরে এদের ভেতর থেকে যারা কবিতায় সিরিয়াস হয়ে উঠতে চান তারা এই ছড়াগোত্র ত্যাগ করেন।ঠারেঠুরে কীভাবে কীভাবে এইকথা নবীন কবিগণ জানতে পারেন যে – ছড়া লেখলে কবিতার হাত নষ্ট হয়ে যায়, সুতরাং ওটা বাদ থাক, তার’চে কবিতা লেখাই ভালো। সেই থেকে কতিপয় কবির ভেতর ছড়াচর্চাটা একটা নিম্মবর্গীয় শিল্পের কায়-কারবার বলে ধারনা জন্মে। এখন কবি-ছড়াকাদের আবস্থা এরকম যে – ছড়াকারের কবিতা আর কবির ছড়া। তেলেজলে ভাব । কবির ছড়াটার দিকে নজর দেয় ছড়াকার, কীরকম বানাইলো? আর ছড়াকারের কবিতাটার দিকে কবি বিশেষ চোখে তাকায়, না পড়ার কথা বলি নি;এইরকম একটা ব্যাপার আছে কিন্তু । এইভাবে ভাগ-বাটোরা হচ্ছে সাহিত্য। এই ভাগের ফলে একদিকে বিশেষ উন্নতিও হচ্ছে বটে,বাংলা ছড়া আধুনিক ছড়াকারদের হাতে সেই ছোট্ট চারা গাছটি থেকে মহীরুহে পরিনত হয়েছে এটা কোন কবিকে অস্বীকার করবার উপায় নেই । গত শতকের তিরিশের দশক,চল্লিশের দশকের ছড়া ছেলে ভুলানো পর্যায় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে খুব বেশীদূর অগ্রসর হয় নি। যতোটা হয়েছে ঊনসত্তর থেকে আজ পর্যন্ত। আন্দোলন-সংগ্রাম ছড়াকে শাণিত করেছে আবার এটাও ঠিক সংগ্রামের অন্যতম হাতিয়ার হয়েছে ছড়ামাধ্যম।কবিতাও এপথে হেঁটেছে ,শিল্পের অপরাপর মাধ্যমের পাশাপাশি ।
যেমন- আল মাহমুদের এই ছড়াটি:-
ঊনসত্তরের ছড়া
ট্রাক!ট্রাক!ট্রাক!
শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে
দুয়োর বেঁধে রাখ!
কেন বাঁধবো দোর জানালা
তুলবো কেন খিল?
আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে
ফিরবে সে মিছিল।
ট্রাক! ট্রাক! ট্রাক!
ট্রাকের মুখে আগুন দিতে
মতিয়ুরকে ডাক।
কোথায় পাবো মতিয়ুরকে
ঘুমিয়ে আছে সে !
তোরাই তবে সোনামানিক
আগুন জ্বেলে দে। ( চলবে)