দূর্নীতির সংবাদ ছাপতে যখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে!-কালিদাস রায়

0
590
কালিদাসএনকে

“দূর্নীতির সংবাদ ছাপতে যখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে!”

-কালিদাস রায়

একটা ছোট্ট গল্প দিয়েই শুরু করি। দুই তিন ধরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক স্টাফ মহা সমস্যায় পড়ে গেলেন। সমস্যা উত্তরনের চিন্তা করে করে তা বুদ্ধিনাশ হবার উপক্রম। উনি হাসপাতালে মূলত পিয়ন বা অফিস সহকারি পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। অনেক দিন হলো তার চাকরীর বয়স। কিন্তু তাকে দিয়ে পিয়নের কাজ করানো হয় না। তিনি ডাক্তারকে সহযোগীতা করেন। ওয়ার্ড কিংবা ইমার্জেন্সিতে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

হাসপাতালের ডিউটির রোস্টার পরিবর্তন হয় সময়মত। কিন্তু তার দাবি, অবৈধভাবে, অন্যায়ভাবে তাকে ভিন্ন জায়গায় ডিউটিতে ফেলা হয়েছে। এই ছোট ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, হাসপাতালে শুধু বাইরের লোকজন বা রোগীরাই ঝামেলায় পড়েন না, হাসপাতালের স্টাফদের ভিতরেও ঠেলাঠেলা চলে।

স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, শৃঙ্খলা আনতেও নাকি সংবাদ পরিবেশনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। তারা দাবি করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান আছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের উপর দূর্নীতির সংবাদ প্রচারিত হওয়ার কারনেই এই মামলা গুলো হয়ে থাকতে পারে। এখন কথা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দূর্নীতিকে প্রশয় দিবেন বা তাদের অগোচরে দূর্নীতিবাজরা দূর্নীতি করতেই থাকবে, আর সেটা সংবাদপত্রে ছাপতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে, এটা কেমন কথা? স্বাস্থ্যখাতে যে কি পরিমাণ দূর্নীতি হয় তা সকলেই কমবেশি জানেন। এখন কথা হলো, দূর্নীতির সংবাদ প্রচার হয়েছে বলেই অনেক দূর্ণীতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

যদি সাংবাদিকরা ওই দূর্নীতির রিপোর্ট করতেই না পারে তবে, এটা নিশ্চিত হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যখাতে দূর্ণীতির পরিমাণ আরো বাড়বে, বৈ কমবে না। দূর্নীতিকে ক্ষমতার চাদরে ঢেকে দিয়ে কখনও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতে দূর্নীতি রোধ করা সম্ভব হলে, হাসপাতালে এমনি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। রোগীরা ভালো সেবা পাবে, হয়রানী মুক্ত হবে।

এব্যাপারে সিনিয়র সাংবাদিকরা মনে করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বস্তুনিষ্ঠতা বিষয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অবাধ তথ্য প্রবাহের অন্তরায়। সংবাদকর্মীরা সাংবাদিক নীতি মালা মেনেই সংবাদ করেন। তাহলে কি ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, দূর্নীতির মামলা ঠেকাতেই কি এই নির্দেশনা প্রদান করা হলো? সর্বোপরি, আইন করেন আর কঠোর নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্যসেবাখাত দূর্নীতিমুক্ত হোক, রোগীদের স্বল্প খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত হোক, রোগী ও তার স্বজনরা হয়রানীমুক্ত পরিবেশ সেবা পাওয়ার অধিকার ফিরে পাক এই হোক প্রত্যাশা।

লেখক-সংবাদকর্মী ও সমাজ উন্নয়নকর্মী।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধইমাম গাজ্জালী (রাঃ) -পর্ব-০১
পরবর্তী নিবন্ধ“আওয়ামী লীগের শত্রু-মিত্র”-স্বকৃত নোমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে