নাটোরের পুন্ডরী গ্রামবাসি কুমড়ো বড়ি বানিয়ে স্বাবলম্বী

0
336
nATORE KANTHO

মাহিদুল ইসলাম মানিক : ডাল রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় কুমড়ো বড়ি। এই বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পুন্ডরী গ্রামের প্রায় ১০টি পরিবার। কুমড়ো বড়ি তৈরি করে, বিক্রি করাই এখন তাদের পেশা।

আগে শীতকালে এই পণ্যটির বেশি চাহিদা থাকতো। সেই কারণে শুধু শীতকালেই কুমড়ো বড়ি তৈরি হতো। এখন চাহিদা ক্রমশ বেড়েছে। ফলে পরিবারগুলোর ওপর তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে সারাবছরই সরবরাহের জন্য।

সরেজমিনে কলম পুন্ডরী গ্রামে দেখা যায়, বড়ি তৈরি করে শুকানোর জন্য সারি সারি ভাবে রোদে দেওয়া আছে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই কাজ করছেন। এটি তৈরির প্রধান উপকরণ এংকার ডাউল, মাষকলাইয়ের ডাউল, খেসারির ডাউল এবং সামান্য মসলা দিয়ে বানানো হয়।

প্রথমে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা ডাউল পানিতে ভেজাতে হয়। এরপর মেশিনে ভাঙ্গিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তারপর মিশ্রণে বড়ির উপকরণ তৈরি হয়। রৌদ্র উজ্জ্বল ফাঁকা স্থান, বাড়ির আঙিনায় খোলা জায়গায় ভোর থেকে তা তৈরির কাজ শুরু হয়। টিন বা পাতলা কাপড়ে সারি সারি ভাবে রোদে রাখা হয় শুকানোর জন্য। দুই থেকে তিন দিন টানা রোদে শুকালে বিক্রির উপযোগী হয়।

কারিগররা জানান, এই বড়ি দিয়ে বোয়াল, বাইম, কৈ, শিং বা শোল মাছের ঝোলে বেশ মুখরোচক ও জনপ্রিয় খাবার। এটি বানানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন সারাবছরই তৈরি করা হচ্ছে। কলম পূন্ডরী গ্রামের নারীরা সারাবছর ব্যস্ত বড়ি বানানোয়। নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে, চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।

বড়ি তৈরির কারিগর পূন্ডরী গ্রামের রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমার ৮বছরের অভিজ্ঞতা । এই বড়ি বানিয়ে বিক্রি করে গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় হয়। সেটি দিয়ে পরিবার ও নিজের চাহিদা মিটিয়ে থাকি।

আমাদের দেখে এলাকার আরো ১০ জন নারী এই কাজে এখন ব্যস্ত। এবং শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রামে বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। এখানকার বড়ি সুস্বাদু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বগুড়া, রাজশাহী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এগুলো সরবরাহ করা হয়।’

বড়ির কারিগর আলামিন শাহ জানান, ‘এই পেশায় প্রায় ১৫ বছর ধরে আছি। লাভজনক হওয়ায় এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। এই বড়ি মূলত ডাল, মাষকলাই, চালকুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরী দিয়ে তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা করে পাইকারি বিক্রয় করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার এসে আমাদের এই বড়ি কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা বিক্রয় করা হয়।’

বগুড়া জেলা থেকে বড়ি কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মিলটন আলী। তিনি বলেন, ‘এখানকার বড়ি যেমন নরম, তেমনি খেতেও বেশ ভালো লাগে। একবার যে এটি খায়, পরেরবার আবার খুঁজে কিনে নিয়ে যায়। আমার কিছু নিজস্ব খরিদ্দার আছেন, যাদের প্রধান পছন্দ এখানকার বড়ি। অন্য বড়ি কম দামে পাওয়া গেলেও নিতে চান না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়ে তাদের জন্য এখান থেকেই নিয়ে যাই।’

চলনবিল অধ্যুষিত এই গ্রামীণ অঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা একদিকে যেমন কর্মসংস্থান তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যদিকে নাটোরের অর্থনীতিতে রাখছেন বিরল ভূমিকা। তাই এই সমস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের, সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা দরকার বলে মনে করছেন, নাটোরের সুশীল সমাজের নাগরিকরা।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে নিহতের ঘটনায় মামলা : ৫ জন আটক
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে নারদ নদ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে