নাটোর কন্ঠ : নাটোরের উত্তরা গণভবনের সামনে মঞ্চায়িত হল পথযাত্রা “নবাবের দরবারে কপিলা”। সঙ্গীতাঙ্গন নাটোর’এর আয়োজনে, পালাকার ফারুক হোসেন‘এর নির্দেশনায়, চলন নাটুয়া’র পরিবেশনায়, শনিবার বিকেলে এই পথ যাত্রাপালা মঞ্চায়িত হয়।
৬০ মিনিটের এই পথযাত্রা উপভোগ করতে উত্তরা গণভবনের সামনে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা বলছে, যাত্রাপালা কাকে বলে জানতাম না, আজ প্রথম দেখলাম। প্রবীণরা বলছেন, দীর্ঘদিন পরে এমন আয়োজন দেখে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া ইকবাল হাসান, যাত্রাপালা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ভিডিও করছে, সে জানালো, “আমার জীবনে আমি কখনো, যাত্রা পালা সরাসরি, এইভাবে দেখিনি, আজই প্রথম দেখলাম। খুব ভালো লাগলো। ’’
মো. খয়ের উদ্দিন নামের প্রবীণ এই ব্যক্তি জানালেন, “ছোটবেলা থেকে আমরা বহু যাত্রা পালা দেখেছি, কালক্রমে যাত্রাপালা এখন হারিয়ে গেছে। প্রায় দুই যুগ পরে এমন আয়োজন দেখে প্রফুল্লতা এল মনে। অন্তরের জানালায় উঁকি দিল অনেক স্মৃতি।’’
সংগীতাঙ্গ নাটোর‘এর সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, “সরকারের উন্নয়নমলুক মূলক কর্মকাণ্ড এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের চরিত্র, সাধারণ মানুষের কাছে, অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা, আমাদের বাঙালি জাতির আদি সংস্কৃতি।
বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই যাত্রাপালা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সুস্থ ধরার সংস্কৃতি মাধ্যমে, নাটোর সঙ্গীতাঙ্গন আবারও সেই যাত্রাপালা উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টায় রয়েছে।
আজ নাটোরের উত্তরা গণভবনের সামনে এই আয়োজন প্রথমবারের মতন করা হয়েছে। পরবর্তীতে নাটোরের বিভিন্ন প্রান্তে, এমন পথযাত্রা অনুষ্ঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পালাকার ও নির্দেশক ফারুক হোসেন বলেন, “চলন নাটুয়ার সপ্তম প্রযোজনা “নবাবের দরবারে কপিলা’’। এই পথযাত্রায় যারা অভিনয় করেছেন তারা প্রত্যেকেই কৃষক, শ্রমিক, স্বল্প আয়ের মানুষ, সখের বসেই
তারা স্বেচ্ছাশ্রমে, দেশের এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে নিরলস ভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই যাত্রাপালাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন।’’
নাটরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মো. ইসহাক আলী বলেন, “ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাক্ষী, আবহমান গ্রাম বাংলার, মাটি ও মানুষের অন্তরে গাথা, এই যাত্রাপালা। অপসংস্কৃতি, অবহেলা, অনাদরে বিলীন হওয়ার পথে।
এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে যেমন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন তেমনি ভাবে ব্যক্তি এবং সংগঠনগুলোর জড়ালো ভুমিকার প্রয়জন বলে মনে হয়। নইলে আগামী প্রজন্ম এই সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হবে।’’
গ্রামীণ এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে, সরকারিভাবে আরো সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন, আয়োজকসহ নাটোরের সুশীল সমাজের নাগরিকরা। তা নাহলে এই যাত্রাপালা একেবারেই হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।