পৈতৃক পেশা রক্ষায় ফুটপাতে এখনো নরসুন্দর ‘সুপদ’

0
223

মো. মামুনুর রশিদ মাহাতাব : রাজশাহীর বাঘার আড়ানি পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য রক্ষায় ফুটপথে চুলদাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন সুপদ শীল ও সমর শীল। তাঁরা আড়ানি পৌরসভা বাজারে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ফুট পথে বসে চুলদাড়ি কেটে পৈত্রিক পেশার ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছেন।

আগের দিনে গ্রাম-গঞ্জে পথে-ঘাটে হাটে-বাজারে কাঠের পিঁড়ে বা মাটির মোড়ায় খদ্দেরকে বসিয়ে নাপিত (নরসুন্দর) সম্প্রদায়ের পুরুষরা খৌর কাজ করতো। নাপিত ও খদ্দেরের বসার জন্য পৃথক পৃথক দূ’টি মাটির মোড়া থাকতো। তাঁরা মাটির মোড়ায় বসিয়ে পুরুষদের চুলদাড়ি ও শিশুদের চুল কেটে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতেন।

বর্তমান উন্নয়নশীল বিশ্ব আধুনিকতার ছোয়ায় এগিয়ে রয়েছে। আধুনিকতার ছোয়ায় হাট-বাজার ও শহর-বন্দরে আধুনিক সেলুনের দোকান গড়ে উঠেছে। সেলুনে স্বচ্ছ কাঁচঘেরা কক্ষে উন্নত গদিযুক্ত চেয়ারে বসে লোকজন বেশিমূল্যে চুলদাড়ি কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

অপদিকে আধুনিক যুগেও সাধারণত অল্প আয়ের লোকজন স্বচ্ছ কাঁচঘেরা কক্ষে গদিযুক্ত চেয়ারে বেশিমূল্যে চুলদাড়ি কাটানোর সাহস পায় না। তাঁরা কম মূল্যে গ্রাম-গঞ্জে পথে-ঘাটে হাটে-বাজারে কাঠের পিঁড়ে বা ছোট্ট টুল বা মাটির মোড়ায় বসে চুলদাড়ি কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধহয় করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে বাঘার আড়ানি পৌরসভা বাজারে
ফুটপথে চুলদাড়ি কাটানোর দৃশ্য দৃষ্টগোচর হয়। আড়নি পান্নাপাড়া এলাকার শ্রী সুপদ শীল নিপূণ হাতে পার্শ্ববর্তী আড়ানি রেলস্টেশনের ঝিনা এলাকার বৃদ্ধ আমজাদ হোসেনের দাড়ি সেভ করছিলেন। শ্রী সুপদ শীল এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী কালোহাটি বাজারে তাঁর একটি সেলুনের দোকান রয়েছে। সেখানে খৌর কাজের পাশাপাশি পৈত্রিক পেশার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং সাধারণ লোকজনের কম টাকায় চুলদাড়ি কাটার মানসিকতায় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার আড়ানি পৌর সভা বাজারে ফুটপথে চুলদাড়ি কাটেন।

বৃদ্ধ আমজাদ হোসেন জানান, তিনি নিয়মিত ফুটপথে কম টাকায় চুলদাড়ি কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

শ্রী সুপদ শীলের পাশেই খৌর কাজ করেন আড়ানি পৌরসভা বাজার এলাকার শ্রী সমর শীল। পাঁচ সন্তানের
জনক শ্রী সমর শীল জানান,শীল সম্প্রদায়ের ব্যবসা এখন অন্য সম্প্রদায়ের দখলে।

মুসলমান, ঋষি ও মাঝি সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ পেশাকে লাভজনক পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে নাপিত সম্প্রদায়ের অসংখ্য ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জন শেষে উন্নত জীবন যাপন ও জীবিকার আশায় পৈত্রিক পেশা ছেড়ে চাকুরীসহ বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

তিনি আরো জানান,আড়ানি পৌরসভা এলাকায় অসংখ্য সেলুনের দোকান রয়েছে। সে গুলোয় অন্তত ৫০থেকে ৬০ জন কর্মরত থাকলেও নাপিত সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে ৫ থেকে ৬জন।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ মহা শিবরাত্রি
পরবর্তী নিবন্ধদাফনের ২৫ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে