বসতসাক্ষী
কবি বেনজীর শিকদার
বাতাসে সাইরেনের সুর!
গুলিবিদ্ধ শালিকের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
ষোলো–লেনের সুবিস্তৃত পিচঢালা শরীর।
ঘড়ির কাটা যৌবন খুইয়েছে—
পৌঢ় স্তনের ঘুমহীন নীরব নিথর পৃথিবী
সময়ের মুখেও ঠোকর খাওয়া বুড়ো মানুষি ছাপ!
স্বপ্নের চাষ নয়;
নহলী মৃত্যুর দামামা বাজিয়ে—
ঘরে ঘরে অমানিশার ভয়ার্ত শ্মশান !
প্রেমিক ভুলে গেছে ছুঁয়ে দিতে প্রেমিকার আহ্লাদী ঠোঁট
রমনে স্বাদ নেই—পুরুষ ভুলে গেছে অপ্রতুল চাষের হিসেব
নারীর জঠর—বীজহীন, অনাবাদী, উড়ির চর।
বিজন রাত্রি
বাতাসের গায়ে নেই সুকোমল স্পর্শ ;
অনিশ্চয়তার উল্লাসে মেতে নিবুনিবু দূরের তারা;
শোকময় চিতার ন্যায় কিছু সময় অন্তর—
শব দেহের স্পর্শী কাঙাল বাঁকা ঠোঁট, সুরতহীন—
এক একটি এ্যাম্বুলেন্সের স্বকরুন মরণস্পর্শী আর্তনাদ।
প্রবল ঘূর্ণন কাল
অনিদ্রা মিশে যাচ্ছে ঘ্রাণহীন বোধে
বুকে বুক মেলাতে অক্ষম, হাতের তালুতে হাত
সুরম্য প্রার্থনায় রোজ সঘন স্পন্দন-—
সবুজ ধানের ফাঁকে সারসের ন্যায় বড় আলগোছে
নামাজ ঘর হতে আসে মায়ের অশ্রু মাখা ক্রন্দন !
ক্ষরণের লাল স্রোত
মানুষে মানুষে বইছে বিষ ! ছড়াচ্ছে—বিষের কুহক !
দিন তলিয়ে যাচ্ছে দিনের গর্ভে, রাত তলিয়ে যাচ্ছে রাতে;
অদূরে বিউগল, দমকলের মতো নৃত্যে বাজছে ভয়ার্ত সুর !
নিথর চোখ, পয়মন্ত খোয়াব নেই—হিম হয়ে আসে শ্বাস;
কখন জানি খাটো হয়ে আসবে জগতের দীর্ঘশ্বাস?
বিষন্ন তন্দ্রালু চোখ
সুবর্ণলতার বিশ্বাস নয়; আর্তনাদের পেয়ালা হাতে
আঙ্খির নদীর মতোই নিশ্চল, নিশ্চুপ, অনড় সাক্ষী—
মানুষের পৃথিবীতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা-—
শুভ্র-শান্ত খই রঙা বাড়িটি !
•••বসতসাক্ষী•••
বেনজীর শিকদার