করোনা নিয়ে বিপন্নের বিপন্ন ভাবনা
সুপ্তি জামান : একটি মাত্র বিষয় নিয়ে তাবৎ দুনিয়া এক প্লাটফর্মে। সকলের আজ একটিই ভাবনা করোনা প্রতিহত করার উপায় কি? উপায় একদিন নিশ্চয়ই মিলবে। কিন্তু মানুষজাতি কি বিবেকের দর্পনে নিজের মুখখানি একবার দেখবে? মানুষের সর্বগ্রাসী ভয়ংকর থাবা থেকে প্রকৃতির বাঁচবার হয়তো আর কোন উপায় ছিল না।
পৃথিবীর নিজেকে বাঁচাবার প্রয়োজনে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে ভাইরাস যা শুধু মানুষকেই তাড়া করবে, মেরে ফেলবে সমতার নিক্তিতে মেপে মেপে। যে এসেছে আগে সে যাবে আগে। পৃথিবীকে যে বেশিদিন ভোগ করছে তার প্রস্থান ঘটবে আগে। ভেনিসের জলের মতো বুড়িগঙ্গায় বয়ে যাবে নীল জল, স্বচ্ছ জলে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ হাসবে, পরিহাস করবে মানুষ নিয়ে। ঢাকা শহরের জ্যাম হবে ইতিহাস!
বুনো জঙ্গলে ছেয়ে যাবে রাজধানী। এই পৃথিবীতে সকলেরই অধিকার আছে সমান। ধনী গরিব,সাদা কালো, হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ খ্রীষ্টান করোনার চোখে সকলেই সমান। এমন সমতা কে কবে দেখেছে আর। যারা দাঙ্গা লাগায়, মানুষেরে করে ভিটে ছাড়া তারাও আজ করোনার ভয়ে আমাদেরই মতো অসহায়।
মানুষ ভেবেছে তারই আছে কেবল নদী, পাহাড়, জলাশয়, আকাশ, পাতাল সব গোগ্রাসে গেলার অধিকার। প্রকৃতি এখন শোধ নিচ্ছে তার। প্রকৃতি আরো সবুজ হবে, নদী হবে দূষনমুক্ত, পাখির কলতানে মুখরিত হবে চারপাশ। পাহার আর ধ্বসে পড়বে না, রোসাঙ্গ থেকে বিতারিত হবে না রোহিঙ্গা। ঘর থেকে বের হলেই প্রকৃতির উপর জুলুম করে মানুষ তাই প্রকৃতি লেলিয়ে দিয়েছে করোনা।
নারীর উপর পৈশাচিক উল্লাসে ঝাপিয়ে পড়ছে না পিচাশ, করোনার ভয়ে সব ভীত আজ! আহারে এমন দিন আগে আসলে তনু আর নুসরাতকে এতটা ঘৃণা বুকে নিয়ে মরতে হতো না। সিরাজ উদ্দীনের লকলকে জিহ্বা শুকিয়ে হয়ে যেতো শুষ্ক মরুভূমি। প্লেগের জন্য দোষ দেয়া হয়েছিল ইহুদীদের, আজ কে দিবে কারে দোষ।
প্রার্থনালয় সব একে একে বন্ধ হলে হোক ওখানে কেবল যে যার শ্রষ্ঠত্বের বড়াই করে, আজ দেখো সকলের একই পরিনতি। একটি মাত্র পৃথিবী, পৃথিবীর সকল সম্পদে জীব এবং জড় সকলের সম অধিকার। ভোগ কর ততটুকু যতটুকু লাগে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে।
কোন কাঁটাতার পারেনি রুখতে করোনা, ওটা নিষ্প্রোয়জন, একটি পৃথিবীতে পৃথিবী নামক একটি দেশ হোক, সব জাতিভেদ খসে পড়ুক, মানুষের কোন জাত নেই, মানবতাই ধর্ম হোক সকলের। এর পরও কি ক্ষুধা নিবৃত্ত হবে দুর্বিত্তের! এমন লোলুপ মানবজাতির এত অত্যাচার সহ্য করার কোন দায় পড়েনি পৃথিবীর!