মধ্যবয়সী সন্ধ্যা
কবি সাফিয়া খন্দকার রেখা
দেনা পাওনার হিসেব চুকিয়ে একদিন -বহুদিন বাদে
হৃদয়ের উদঘাটনে ব্যস্ত হবে তুমি,
ইতস্তত চামড়া কোচকানো হাত, ভ্রুর পাকা চুল নিয়ে
কতকালের পুরনো চিঠি খুঁজতে
হাজার পাওয়ারের চশমার কাঁচও ঘোলা লাগবে।
নগরীর বুকে সেদিন এতোটা যানজট থাকবেনা,
মেট্রো রেলের সাঁই সাঁই ব্যস্ততায় আমরা জোৎস্নাফুলের ক্রন্দন শুনবো,
তুমি চারুকলার গেটে অপেক্ষা করবে আভিজাত্যের লাঠিতে ভর দিয়ে
চশমার আড়ালে খুঁজবে খুব কাছের কোন বন্ধুর ভুলে যাওয়া মুখ।
পাব্লিক লাইব্রেরির আবৃত্তি সন্ধ্যাটা পাশাপাশি বসেই কাটবে,
ফেরার সময় আমরা মুখোমুখি…
না বলা কথায় তৃষ্ণারা বলে যাবে
ফের দেখা হবেতো!
তুমি মনে মনে কোন কবিতা পড়ছো তখন আমি জানি
সেই প্রিয় শক্তি চট্টোপাধ্যায়
” মালবিকা হাতে হাত রাখো
আমি বহুদূর যাবো
তোমার সাহায্য বিনা এ বয়সে হাঁটতে পারিনা
একটি চুম্বন দিও সকালের দান
আমি তার সম্মানে এগুবো”
আমাদের ঘরে ফেরার সময় হয়ে এলে
আমরা বিপরীত পথে পা রাখবো
তুমি পিছু ফিরে চেয়ে জেনে যাবে আমি তখন পড়ছি মহাদেব সাহা..
” তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই দেখো আমি আজও সব কাজে মনোযোগহীন
সবখানে খাপছাড়া,
তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে
কতো প্রগাঢ় ইমেজ ঝরে গেছে
তোমার সামান্য স্নেহের অভাবে ”
রাখিনি কেউ খোঁজ অতৃপ্ত আত্মার
মন ছুঁয়ে তবুও নিশিগন্ধ্যার ঘ্রাণ।
অজস্র বিস্ময়বোধক চিহ্নের ভেতর দিয়ে
যেতে যেতে সেদিনও আমরা
দারুণ এক দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাবো,
দূরত্ব বেড়ে যায় আয়ু শূন্য – হাঁটতে থাকে চোখের ভেতর চোখ
মধ্যবয়সী এক ক্লান্তপ্রাণ সন্ধ্যায়।