‘মহামারি প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন’- কামরুল হাসান কামু

0
664
kamu
‘মহামারি প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন’

ভাইরাস খালিচোখে দেখা যায়না।কে কিভাবে জীবাণু বহন করে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছে তা শনাক্তের আগে বলা যাচ্ছেনা।বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি ছোট ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ সুতরাং এখানে সংক্রমিত হবার পথ অবারিত।এক ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তার পাশের মানুষগুলো নিমেষে আক্রান্ত হবে।করোনা ভাইরাস নিয়ে রাজনীতিকরণের চিন্তা করাটা একদম বোকামি হবে। কে কোন কোন দল করছেন,কিংবা কে কোন পেশায় নিয়োজিত আছেন সেটা মুখ্য নয়।আপনার নিজের পরিবার সহ আপনার সুরক্ষার জন্যে কাজ করতে হবে।এই মুহূর্তে নাগরিক হিসেবে আমার আপনার অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে।করোনা ভাইরাসের যেহেতু প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি সুতরাং প্রতিরোধ ই আমাদের ভরসা।শহর গ্রাম সব জায়গায় একসাথে কাজ করতে হবে।দেশে প্রায় ৬ লাখের ওপর প্রবাসী এসেছেন।তাদের হোমকোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা কিন্তু আদতে তারা মানছেননা।নাগরিক হিসেবে আমার,আপনার দায়িত্ব তাদের বিষয়টি বুঝানো,প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনকে জোরালো ভাবে জানানো নতুবা গ্রামের পর গ্রাম,শহরের পর শহর সংক্রমিত হতে দেরী লাগবেনা।শুধু সরকারের ওপর নির্ভর নয় আপনার নিজের বাঁচার জন্যে আজ জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন।শত্রুমিত্রের ভেদাভেদ ভুলে আপনি যে এলাকায় অবস্থান করছেন সেখানকার মানুষকে সচেতন করুন।ধনী ভাইয়েরা গরীবদের সহায়তা করুন।দেশের বড় বড় কোম্পানি গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে,অনেক ব্যবসা করেছেন,এবার দেশকে কিছু দিন,আপনার কোম্পানিতে নিয়োজিত মানুষদের অগ্রিম এক মাসের বেতন দিয়ে সহায়তা করুন,তাদের ঘরে থাকতে বলুন। ব্যাংক,শেয়ার বাজার,উন্নয়ন প্রকল্প হতে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা যারা লোপাট করেছেন তাদের পাপমোচনের সময় এসেছে।আর কতো অমানবিক হবেন?আমাদের মনে রাখতে হবে এই ভাইরাস ধনী- গরিব কাউকে চেনেনা,আপনি আক্রান্ত হলে আপনাকে কেউ দেখতেও যাবেনা,আপনি মারা গেলে আপনার জানাজায় লোক হবেনা।কী হবে আপনার সেই টাকার পাহাড় দিয়ে?আগামী পনের দিনের খাবার দিয়ে শহরের রিক্সাচালক,পথশিশু,ভাসমান মানুষদের পাশে দাঁড়ান,তাদের ঘরেই অবস্থান করতে বলুন। শিক্ষিত যুব সমাজকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।এখন ফেসবুক শহর গ্রাম সকল জায়গার মানুষ ব্যবহার করছে,আপনি আপনার কমিউনিটির জন্যে একটা গ্রুপ খুলে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েও সবাইকে সাহায্য করতে পারেন।গ্রাম অঞ্চলে ধর্মীয় নেতাদের ওপর ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা বেশি।এই মুহূর্তে তাদের গুরুত্বের সাথে কাজ করা উচিত।মসজিদ হতে মাইকিং করে প্রচার করা উচিত।সময় খুবই কম,প্রত্যেক ওয়ার্ডের মেম্বার,ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে উদারভাবে কাজ করতে হবে।ভোটের সময় যেমন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন তেমনি দেশের ক্লান্তিকালে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে নেমে পড়ুন পাড়ায় পাড়ায়,মহল্লায় মহল্লায়।হাট-বাজারে বিরতিহীনভাবে মাইকে প্রচার করতে হবে।কে কোন দল হতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সেটা মুখ্য বিষয় নয়,এই জনপদের মানুষকে রক্ষার জন্যে একসাথে কাজ করার মোক্ষম সময়।গ্রামের মানুষ গুলো কোনমতেই বিষয়টা আমলে নিচ্ছেনা,অহেতুক ভীড় করছে চায়ের স্টলে,হাট-বাজারে।ভাবতেই কেমন অদ্ভুত এক কাঁপুনি লাগে।এইদেশের মানুষ একটা সময় কথিত ওলাবিবির(কলেরা) ভয়ে ঘর হতে বের হতোনা।যে গ্রামে কলেরা লাগতো সে গ্রামের পাশ দিয়ে যেতোনা।যে বাড়িতে কলেরা হতো অধিকাংশ মানুষই আক্রান্ত হয়ে মারা যেতো।সেই ভয়ংকর দৃশ্যের কথা মানুষ কী ভুলে গেছে?সেই মৃত্যুর মিছিলের কথা এখনই মানুষকে স্মরণ করে দিতে হবে।সরকার যে পদক্ষেপ গুলো নিয়েছে তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে হবে নতুবা চোখের সামনে মৃত্যুর মিছিল দেখতে হবে।এই এমন মৃত্যু যা এক পলক মৃত ব্যক্তিকে দর্শন করার ও সুযোগ থাকবেনা।কতোটা ভয়ংকর,মর্মান্তিক দৃশ্য তা আপনারা ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ করেছেন।সরকার দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ দিয়েছে ঘরে অবস্থান করার জন্যে অথচ এদেশের অসচেতন মানুষ গুলো ঈদের উৎসবের মতো ভীড় ঠেলে ফিরছে গ্রামে,আহা এই মানুষ গুলোকে কীভাবে বুঝানো যাবে তা ভাবতে গা শিউরে ওঠে।আপনারা যারা এই মুহূর্তে গ্রামে যাচ্ছেন বাড়িবাড়ি ঘুরাফেরা না করে অন্তত চৌদ্দ দিন ঘরেই থাকুন নতুবা আমাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে।এই যুদ্ধ শারীরিক শক্তি প্রয়োগের যুদ্ধ নয়,এই যুদ্ধ সচেতনতার।মহান স্রষ্টার কাছে একটাই কামনা এই জনপদের মানুষ গুলোকে রক্ষা করো।

লেখক-
কৃষিবিদ কামরুল হাসান কামু

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধমরীচিকা -শাপলা জাকিয়া‘র ভৌতিক গল্প -পর্ব-১০
পরবর্তী নিবন্ধবাঘার মনিগ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত -১ অগ্নিদগ্ধ ৮

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে