“ময়দান বা গড়ের মাঠ নিয়ে কিছুকথা” -লুৎফুন নাহার তিথি

0
1841
www.natorekantho.com

লুৎফুন নাহার তিথি : কোলকাতায় গিয়ে ময়দান বা গড়ের মাঠ দেখব না.. তাতো হয় না..!! কথায় কথায় বলি, আমার পকেট গড়ের মাঠ..!! কথাটার অর্থ হয়তো অনেকেরই জানা। তবুও আবার বলি..গড় অর্থ দুর্গ বা কেল্লা..!! আর মাঠ মানে হলো ফাঁকা জায়গা। তাহলে গড়ের মাঠ বলতে বুঝায় নগরদুর্গ ও নগরভবনগুলির মধ্যবর্তী মাঠ, ময়দান বা সমতল জমি। তাহলে…আমাদের পকেট যখন খালি বা টাকা শূন্য থাকে, তখনই আমরা বলে থাকি পকেট গড়ের মাঠ।

www.natorekantho.com

আসলে এই গড়ের মাঠ বা ময়দান হলো কলকাতা জেলার একটি বিস্তির্ণ ফাঁকা এলাকা…যা ময়দান নামেও পরিচিত। কলকাতা শহরের কেন্দ্রস্থলে, ৪০০-হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত সবুজ এলাকা এটি। ময়দান পশ্চিমে হুগলি নদী থেকে পূর্ব দিকে চৌরঙ্গী এবং পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে উত্তরে রাজভবন এবং ইডেন গার্ডেন পর্যন্ত বিস্তৃত। এই এলাকায় তার নামটি এসেছে বিশাল সবুজ খোলা উদ্যান ও শান্ত প্রকৃতি থেকে।

ময়দানে প্রচুর গাছপালা ও খোলা মাঠ থাকায় এটিকে “কলকাতার ফুসফুস” বলা হয়। ময়দান ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্পত্তি। ফোর্ট উইলিয়ামে সেনাবাহিনীর পূর্ব কম্যান্ডের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ময়দান কলকাতার অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

www.natorekantho.com

পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের এক বছর পর ১৭৫৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গোবিন্দপুর গ্রামের কেন্দ্রস্থলে নতুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের নির্মাণকার্য শুরু করে। উক্ত গ্রামের বাসিন্দাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং তালতলা, কুমারটুলি ও শোভাবাজার অঞ্চলে জমি দেওয়া হয়। ১৭৭৭ সালে দুর্গনির্মাণের কাজ শেষ হয়। “যে ব্যাঘ্র-সংকুল জঙ্গলটি চৌরঙ্গী গ্রাম থেকে নদীকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল, সেই জঙ্গলটি কেটে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। এরই ফলে কলকাতার গৌরব ময়দানের বিস্তৃর্ণ এই তৃণক্ষেত্রটির সৃষ্টি হয়।

এই ময়দান নিয়ে বহু কাহিনী জানা ছিল আমার। এজন্য কৌতুহল ছিল দেখবার। অনেকই হয়তো বলবেন, একটা মাঠ দেখার কী হলো..?? একটা বলছি শুনুন, ১৮৫৯ সালে জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কলকাতায় প্রথম বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

www.natorekantho.com

তখন এই ময়দান নিয়ে রক্ষণশীল কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লেখেন:
“যত ছুঁড়িগুলো তুড়ি মেরে কেতাব হাতে নিচ্ছে যবে,
এ বি শিখে, বিবি সেজে, বিলাতী বোল কবেই কবে;
আর কিছুদিন থাক রে ভাই! পাবেই পাবে দেখতে পাবে,
আপন হাতে হাঁকিয়ে বগি, গড়ের মাঠে হাওয়া খাবে।”

এর কিছুকাল পরেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর স্ত্রী কাদম্বিনী দেবীকে ময়দানে নিয়ে গিয়ে অশ্বচালনা শিক্ষা দেন…এতে বাঙালি সমাজের রক্ষণশীলতায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে এবং বাঙালি সমাজে এক অভূতপূর্ব সংস্কার সাধিত হয়। ইতিহাস সম্বলিত এই মাঠ না দেখে কি পারা যায়..??

www.natorekantho.com

বই পড়ে জেনেছিলাম, ব্রিটিশ শাসনে ইংরেজ সেনারা ময়দানে বাঙালি ছেলেদের দেখলেই লাথি মারত। বাঙালিরা এতটাই ভীরুস্বভাবের ছিল যে.. এর কোনো প্রতিবাদই করত না। সরলা দেবী চৌধুরানী এই ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত হন…তাই তিনি দুর্গাপূজায় বীরাষ্টমী ব্রতের সূচনা করেন।

www.natorekantho.com

এই ব্রতে যুবকদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার শপথ নিতে হতো…এই ঘটনা পরবর্তীকালে নাকি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
মোটকথা… আমি দেখে এলেম তারে…!! নারী জাগরণে তিনিও অবদান রেখেছিলেন আড়ালে আবডালে..!! নতুবা সরলাদের সরলতাই শুধু দেখিত সবে কালে কালে..!!

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“আজ আমার বাবার ১৮তম মৃত্যু বার্ষিকী”- নাসিম উদ্দিন নাসিম
পরবর্তী নিবন্ধ“মিথিলা সংক্রান্ত জটিলতা-৩”-সালেহিন বিপ্লব

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে