বলন কাঁইজি : সাঁই God (গড) ‘ﺭﺴﻮﻞ’ (রাসুল)
সারা জগতের পালনকর্তাকে সাঁই বলা হয়। এটি রূপক সাহিত্যের রূপক পরিবারের অন্যতম একটি ‘রূপকসদস্য’। এর মূলক সদস্য ‘পালনকর্তা’, উপমান সদস্য ‘অমৃতসুধা, উপাস্য, গ্রন্থ, চন্দ্র, ধন, ননি, পাখি, ফল, স্বর্গীয়ান্ন’, চারিত্রিক সদস্য ‘লালন’ এবং রূপকনাম সদস্য ‘ঈশ্বর, চোর, পরমগুরু, প্রভু’।
১। সাঁই– অব্য বাতাস চলাচলের অনুচ্চার ধ্বনি {ধ্বন্যা}।
২। সাঁই (রূপ)বি পালনকর্তা, ঈশ্বর, বুদ্ধ, পতি, স্বামী, গার্ডিয়ান (guardian), রব (আ.ﺮﺐ) (আবি)বি উপাস্য, নারায়ণ, নিধি, নিমাই, নিরঞ্জন, স্বরূপ (আদৈ)বি খোদা (ফা.ﺨﺪﺍ), মা’বুদ (আ.ﻤﻌﺑﻭﺪ), মুহাম্মদ (আ.ﻤﺤﻤﺪ), রাসুল (আ.رَسُول) (আপ)বি কাওসার (আ.ﻜﻭﺛﺮ), ফুরাত (আ.ﻔﺭﺍﺖ) (ইপ)বি গড (God), নেক্টার (Necter), ইলিক্সার (elixir) (পরি) এরূপ তরলমানুষ যে এখনো মূর্ত আকার ধারণ করেনি।
সংজ্ঞা:
১.সারা জগতের পালনকর্তাকে সাঁই বলা হয়
২.দ্বিপস্থ জীবের মাতৃজঠরে ভ্রণ লালনপালনকারী শ্বেতবর্ণের জীবজলকে পালনকর্তা বা রূপকার্থে সাঁই বলা হয় (দেপ্র) পালনকর্তা পরিবারের রূপকসদস্য ও রূপক সাহিত্যের একটি দৈবিকা বা প্রতীতিবিশেষ (রূনা)বি ঈশ্বর, চোর, পরমগুরু, প্রভু (চরি)বি লালন (উপ)বি অমৃতসুধা, উপাস্য, গ্রন্থ, চন্দ্র, ধন, ননি, পাখি, ফল, স্বর্গীয়ান্ন (রূ)বি সাঁই (দেত)বি পালনকর্তা {বাং.সাদা+ বাং.ঈশ্বর> (সা+ঈ)> সাঈ>}।
সাঁইচারী– (রূপ)বি সাঁইজি, বৈষ্ণব, সাঁইদর্শনকারী সাধক সাধিকার উপাধি বিশেষ (বিণ) সাঁইবিহারী (প্র) সাঁই বা লালনপালনকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী।
সাঁইজি- (রূপ)বি প্রাণনাথ, প্রাণপতি, প্রাণস্বামী, প্রাণেশ্বর, বিশ্বনাথ, বিশ্বপতি *বিণ বৈষ্ণব, সাঁইবিহারী, সাঁইচারী, Gods (আপ্র) সাঁইদর্শনকারী সাধক সাধিকার উপাধি বিশেষ (প্র) সাঁই বা লালনপালনকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী (পরি)।
১.বাংলা আধ্যাত্মিকবিদ্যার- আউল, বাউল, নাড়া ও সাঁইজি এ চতুর্পথ বা বাংভারতীয় পরাবিদ্যার পূজারী, বাউল, সাধু ও বৈষ্ণব এ চতুর্পথ বা পারস্য এলমে রুহানিয়্যাত (ﻋﻠﻢ ﺮﻮﺤﺎﻨﻴﺔ) এর আবিদ (ﻋﺎﺑﺪ), অলি (ﻮﻟﻰ), গাউস (ﻏﻮﺙ) ও কুতুব (ﻘﻄﺐ) এ চতুর্পথের চতুর্থপথ বিশেষ।
২.জ্ঞানের নৈরাকার ও সিদ্ধিস্তর হতে এবং রসাশ্রয় ও রূপাশ্রয় হতে এ নৈরাকারপন্থী ‘সাঁইজি’ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি (দেপ্র) আধ্যাত্মিকবিদ্যার বাংলা পরিভাষা বিশেষ (ভাপ)বি বৈষ্ণব (আপ)বি নায়িবেরাসুল (ﻧﺎﺌﺐ ﺮﺴﻭﻞ) (ইপ)বি Gods {বাং.সাঁই+ তু.জি.ﺠﻰ}।
সাঁইদর্শন:
(ক্রি) সাঁইয়ের সাথে মিলিত হওয়া, সাধনবলে মানবদেহ হতে সাঁইরস বা জীবজল আহরণ করা {বা.সাঁই>}।
সাঁইবিহারী বিণ সাঁইজি, বৈষ্ণব, সাঁইচারী, সাঁইদর্শনকারী সাধক সাধিকার উপাধি বিশেষ (প্র) সাঁই বা লালনপালনকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী {বাং.সাঁই>}।
সাঁইয়ের উদাহরণ-
১. “সাঁই আমার কখন, খেলে কোন্ খেলা, জীবের কি সাধ্য আছে, গুণেপড়ে তাই বলা” (পবিত্র লালন ৯৩২/১)।
২. “নিঠাঁইয়েতে সাঁই পাড়িতে, কত ভরা ডুবে ডাক্সগাতে, কেউ কেউ পায় সামান্যেতে, বিশ্বাসী গুরুর কৃপায়” (বলন তত্ত্বাবলী ১২৬)।
সাঁইয়ের সংজ্ঞা-
১. সারা জগতের পালনকর্তাকে সাঁই বলে।
২. বিশ্বের লালনপালন কর্তাকে সাঁই বলে।
৩. সর্ব জীবের লালনপালনকারী প্রতীতিকে সাঁই বলে।
সাঁইয়ের আধ্যাত্মিকসংজ্ঞা-
১. দ্বিপস্থ জীবের মাতৃজঠরে ভ্রণ লালনপালনকারী শ্বেতবর্ণের জীবজলকে পালনকর্তা বা সাঁই বলে।
২. বিশ্বের সর্ব প্রকার ও উদ্ভিদের লালনপালনের জন্য গর্ভাশয়ে যে সাদাবর্ণের স্বর্গীয়জলের অবতরণ ঘটে তাকেই সাঁই বলে।
সাঁইয়ের পরিচয়-
মৌমাছি ফুল হতে সুধারস আহরণ করে মৌচাকে সঞ্চয় করলে আমরা তাকে মধু বলি। এ অমৃতরসটিই বিশ্বের সর্বজীবের লালনকর্তা। এ রসটিই প্রকৃত বিশ্বকর্মা এবং এ রসই সর্বজীবের লালনপালনকারী একমাত্র সত্তা। রূপক সাহিত্যে এ রসকেই সাঁই বলা হয়।
কি উদ্ভিদ কি দ্বিপস্থ জীব সর্ব প্রকার জীবের জঠরে জীবভ্রুণ লালন পালনের পরিপূর্ণ কাজটি একমাত্র সাঁইই করে থাকেন বিধায় সাঁইকে বিশ্বের প্রতিপালক বলা হয়। বলা হয় “সবার ওপরে সাঁই, তার ওপরে নাই।
” আরো বলা হয় কেবল সাঁই বিশ্বের সব প্রশংসা পাবার যোগ্য বিধায় বিশ্বের সব রূপকসাহিত্য বা সাম্প্রদায়িক শাস্ত্রের সব রূপকাররা কেবল সাঁইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এ সত্তাটিকে আরবি ভাষায় রূপক সাহিত্যের চরিত্ররূপে মুহাম্মদ (ﻤﺤﻤﺪ), রব (ﺭﺐ) ও রাসুল (ﺮﺴﻮﻞ) এবং পানীয় বস্তুরূপে কাওসার (আ.ﻜﻭﺛﺮ), ফুরাত (আ.ﻔﺭﺍﺖ), সালসাবিল (ﺴﻟﺴﺒﻴﻞ) ও যানজাবিল (ﺯﻧﺠﺒﻴﻞ) বলা হয়। আবার ফার্সি ভাষায় রূপক সাহিত্যের চরিত্ররূপে খোদা (ফা.ﺨﺪﺍ) এবং পানীয় বস্তুরূপে ও আবকাউসার (ﻜﻭﺛﺮ ﺁﺐ), আবজমজম (ﺯﻤﺯﻢ ﺁﺐ) ও আবহায়াত (ﺤﻴﺎﺖ ﺁﺐ) বলা হয়।
আবার ইংরেজি ভাষায় রূপক সাহিত্যের চরিত্ররূপে গড (God) এবং উত্তম পানীয় বস্তুরূপে তাঁকে নেক্টার (nectar) বা ইলিক্সার (elixir) বলা হয়। এছাড়াও সংস্কৃত ভাষায় এঁকে বিষ্ণু এবং পালি ভাষায় এঁকে বুদ্ধ বলা হয়। আবার বাংলা ভাষায় রূপক সাহিত্যের চরিত্ররূপে দয়াল, গুরু, গোঁসাই, মনেরমানুষ, ভাবেরমানুষ ইত্যাদি এবং উত্তম পানীয় বস্তুরূপে এঁকে অমৃত, অমৃতসুধা, অমৃতমেঘের বারি ও মিষ্টিবারি বলা হয়। এছাড়াও বড়পির, খাজাবাবা, নেংটাবাবা, লালন ও লোকনাথ ইত্যাদি আধুনিক নামাদি দ্বারাও কেবল সাঁইকেই বুঝায়।
এবার বলা যায় বিষ্ণু, বুদ্ধ, লালন, সাঁই, খোদা, মুহাম্মদ, রব, রাসুল ও গড ইত্যাদি শব্দের মধ্যে কেবল ভাষাগত পার্থক্য ব্যতীত সত্তাগত বা অভিধাগত কোন পার্থক্য নেই।
সাধুগণ অটল সাধনবলে সাঁইয়ের সন্ধানলাভ করেন। রূপক সাহিত্যে সাঁইকেই জীবের স্বরূপ বা সাকার বলা হয়। বর্তমান চিকিৎসকরা যদিও পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণু ব্যাপারে অনেক অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তবুও সাধুশাস্ত্রের প্রাথমিক ধারণা হতেই সাঁইকে মানুষ বলা আরম্ভ হয়েছে এবং তা আজও বলা হচ্ছে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানিই সাধুদের বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করতে পারেননি।
কারণ বাস্তবেও দেখা যায়; ডাবের জলই ক্রমেক্রমে গাঢ় হয়ে শাস হয় এবং শাস হতে অংকুর গজিয়ে ডাবগাছে পরিণত হয়। তদ্রুপ ডিমের মধ্যে অবস্থিত তরল পদার্থই গাঢ় হয়ে পরবর্তিকালে কুক্কুটের সদ্যোজাত ছানা হয়ে বাইরে আসে বিধায় আমরা প্রাথমিকভাবে বলতে পারি জঠরের সুমিষ্টজল ক্রমেক্রমে কঠিন হতে কঠিনতর হয়ে জীবাকৃতি ধারণ করছে। ফলে বলা যায় সাঁই নিজেই জীব।
সাঁই স্বরূপ হতেই ক্রমেক্রমে জীবরূপে আত্মপ্রকাশ করছেন। অর্থাৎ আমিই সাঁই ও সাঁইই আমি।
আমরা আলাপী ও গণকযন্ত্রের বেলা দেখতে পাই; যন্ত্রাদি হার্ডওয়ার (hardware) ও সফটওয়ার (software) দুভাগে বিভক্ত। হার্ডওয়ার (hardware) যন্ত্রাদির কঠিন অংশ এবং সফটওয়ার (software) যন্ত্রের কোমল অংশ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়; যন্ত্রের কোমল অংশই যন্ত্রের প্রকৃত চালিকাশক্তি।
কেবল কঠিন অংশ সংযুক্ত করে ছেড়ে দিলেই যন্ত্রাদি সচল হয় না। তার মধ্যে অনেক কোমল অংশ সংযুক্ত করার পরই কেবল যন্ত্রাদি সচল হয়।
তদ্রুপ আমাদের মানবদেহ নামক এ কাঠামোটিকে সচল করার জন্য এর মধ্যে আত্মা, মন ও জ্ঞান নামক অদৃশ্য সত্তাদি সংযুক্ত করা হয়।
একমাত্র সাঁইই আমাদের মানবদেহের মধ্যে এ অদৃশ্য সত্তাদি পুনঃ সংস্থাপন করে থাকেন। কামযজ্ঞে গিয়ে শুক্রপাতের মাধ্যমে আন্তযোগাযোগ ব্যবস্থাশূন্য অবস্থায় যখনই একটি শুক্রাণু পুনঃ গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ভ্রণরূপ দেহ ধারণ করে, তখনই আবার নতুন করে উক্ত দেহের মধ্যে সাঁইজি আন্তযোগাযোগ পদ্ধতি বা সফটওয়ার (software) সংস্থাপন করে দেন এবং দীর্ঘ সময় ভ্রুণ লালনপালন করে সন্তান ভূমিষ্ঠ করিয়ে দেন।
অর্থাৎ শূন্যদেহ নামক হার্ডওয়ারের (hardware) মধ্যে সাঁইজি আবার আন্তযোগাযোগ পদ্ধতি বা সফটওয়ার (software) লোর্ড করে দেন। তাই জীবদেহ আবার সচল হয়।
সব জীব জন্মান্তর গ্রহণের পর বাহ্যিকভাবে কেবল চামড়াটা পরিবর্তন করে বটে, কিন্তু দৈহিক কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। শিশু জীবের মধ্যে আত্মা, মন ও জ্ঞান সংস্থাপন করা একমাত্র সাঁইয়ের কাজ। এজন্যই সাঁইকে বিশ্বকর্মা বলা হয়।
সাঁই সর্ব জীবের জঠরে বসে কেবল দেহবিশ্ব সৃষ্টি করেন এবং আবার নতুন করে জীবের মধ্যে আত্মা, মন ও জ্ঞান সংস্থাপন করে থাকেন। তাই এককথায় বলা যায় কেবল সাঁইই একমাত্র জগৎকারক, জগৎকাণ্ডারী ও বিশ্বের প্রতিপালক। সাঁই প্রতীতি দ্বারা নির্মিত একটি চমৎকার (মু’জিযা) (miracles)
একদিন সাঁইজি কিছু শিষ্যভক্ত নিয়ে এক নদির পাড়ে গিয়ে উপস্থিত হোলেন। নৌকার সন্ধান না পেয়ে তিনি একটি গাছের নিচে বসে পড়লেন। একজন শিষ্য বললেন “সাঁইজি নৌকা না পেলে আমাদের যাওয়ার কী কোন পথ নেই?” সাঁইজি বললেন- “আছে যদি তোমরা সবাই নিচে- ওপরে- ডানে- বামে- সামনে-পিছনে না তাকিয়ে কেবল আমার প্রতি তাকিয়ে থাকতে পারো, তবে জলের ওপর দিয়েই নদী পার হওয়া যাবে।
” সাঁইজির এরূপ কথা শুনে সবাই সাগ্রহে বললেন- “সাঁইজি আমরা তাই করব।” সাঁইজির পিছে পিছে শিষ্যরা সবাই সাঁইজির মুখপানে চেয়ে জলের ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে ওপারে গেলেন।
হরিণের যদি কুস্তরী হয়, গরুর যদি গোরস হয়, ঝিনুকে যদি মুক্তা হয় তবে মানুষের মধ্যে এরূপ মূল্যবান পদার্থ না হওয়ার কি-বা কারণ থাকতে পারে!
সাঁই প্রতীতিকে অবতার বলার কারণ কী?
অবতার বিণ প্রকাশক, বাহক, মূর্তিমানরূপ, অবতরণকারী (প্র) দেবতারা সময়ে সময়ে মানুষ্যমূর্তি পরিগ্রহ করে পৃথিবীতে আগমন করেন বা আবির্ভূত হন। পৌরাণিক যুগে বিষ্ণু নিম্নোক্ত দশবার অবতরণ করেন- ১.মৎস্য ২.কূর্ম ৩.বরাহ ৪.নৃসিংহ ৫.বামন ৬.পরশুরাম ৭.রামচন্দ্র ৮.কৃষ্ণ ৯.বুদ্ধ ও ১০.কল্কি (আবি) নরদেহে দাড়ি, গোঁফ ও দন্ত এবং নারীদেহে স্তন, দুগ্ধ, রজস্রাব, সাঁই, কাঁই ও দন্ত ইত্যাদি দেবতা।
অবতারের সংজ্ঞা
১.শ্বাস, কম্পন ও ভাবযোগে যে মহামনীষিগণ ঐশিবাণী, ঐশিবার্তা, দৈববাণী ও দৈববার্তাদি অনুধাবন করে বিশ্বাবাসির কল্যাণে তা প্রচার প্রসার করেন তাকে যাজক বা অবতার বলে।
২.মানুষরূপে জন্মগ্রহণ করে জ্ঞান ও সাধনা দ্বারা অর্জনকৃত দৈহিক ও মানসিক সূক্ষ্ম তত্ত্বাদি মানবসমাজে রূপকার্থে প্রচারকারী যাজক বা রূপকারকে অবতার বলে।
অবতারের গুণাগুণ-
একজন ঐশী অবতারের ৫টি গুণ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। যথা-
১.সৃষ্টির আদিপর্ব ও অন্তপর্বের ওপর সম্যকজ্ঞান অর্জন করা।
২.সমসাময়িক শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যক্রমাদির যে কোনো একটিতে সর্বোচ্চ উপাধি অর্জন করা।
৩.সমসাময়িক প্রচলিত বিজ্ঞান, দর্শন ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অন্তত সাধারণজ্ঞান অর্জন কর।
৪.বিশ্বের যে কোন একটি শাস্ত্রীয়সংস্কার সম্পর্কে অন্তত ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করা।
৫.স্ব স্ব ভাষায় চতুর্পথ, চতুর্স্তর, ষড়াশ্রয় ও অষ্টসত্তা এবং মূলক, রূপক, ব্যাপক, প্রপক, বৈক্তিকসদস্য, মূলকসংখ্যা ও সংখ্যাসূত্রাদি সম্পর্কে সম্যকজ্ঞান অর্জন করা।
অবতারের প্রকারভেদ-
অবতার দুই প্রকার। যথা- ১.দৈবাবতার ও ২.মানুষাবতার।
১. দৈবাবতার
মানবসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর হতে ক্রমেক্রমে মানবদেহে যেসব স্বায়ম্ভু সত্তা আগমন করে তাদেরকে দৈবাবতার বলে। যেমন- দাড়ি, গোঁফ , শুক্র ও রজ ইত্যাদি।
২. মানুষাবতার
যাজক কিংবা রূপকসাহিত্যের সুমহান রূপকারগণকে মানুষাবতার বলে। যেমন- বুদ্ধ।
মানবকুলে মানুষবেশে জন্মগ্রহণ করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করে মানুষ ও সৃষ্টিজীবের কল্যাণার্থে যারা আজীবন চেষ্টা-সাধনা করে অসংখ্য অমূল্যবাণী নির্মাণ করেন তারাই প্রকৃত মানুষাবতার। যেমন- লালন সাঁইজি ও বলন কাঁইজি। ঐশিবাণী বা ঐশিবার্তা ধারণ ও প্রচারের দিক দিয়ে মানুষাবতার তিন প্রকার। যথা- ১.রূপকার ২.প্রপকার ও ৩.প্রচারক।
১. রূপকার
যে মহামনীষিগণ ঐশিবাণী বা ঐশিইঙ্গিতের ওপর ভিত্তি করে রূপকার্থে দৈবসত্তাদি ও লৌকসত্তাদি নির্মাণ করে বিশ্বাবাসিকে নৈতিক ও চারিত্রিক শিক্ষা প্রদান করে থাকেন তাদেরকে রূপকার বলে। যেমন- বেদব্যাস ও বাল্মীকি।
২. প্রপকার
যে মহামনীষিগণ মহান রূপকারগণের নির্মিত দৈবসত্তাদি ও লৌকসত্তাদি ব্যবহার করে বিশ্বাবাসিকে নৈতিক ও চারিত্রিক শিক্ষা প্রদান করার উদ্দেশ্যে আরো অভিনব লৌকসত্তাদি ও মহাগ্রন্থাদি রচনা করেন তাদেরকে প্রপকার বলে। যেমন- লালন সাঁইজি ও জারির তাবরি।
৩. প্রচারক
যেসব মহামনীষী, সুমহান রূপকার ও প্রপকারগণের নির্মিত দৈবসত্তাদি, লৌকসত্তাদি ও রূপকার্থে রচিত মহাগ্রন্থাদি বিশ্ববাসির বোধগম্য করানোর জন্য টীকা, টীপ্পনী বা সরল ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ প্রণয়ন করে প্রচার ও প্রসার করে থাকেন তাদেরকে প্রচারক বলে। যেমন- জালালুদ্দীন রুমী ও ইমাম গাজ্জালী।
দৈবাবতার ও মানুষাবতারের মধ্যে পার্থক্য
১. বৈক্তিকসদস্যদের রূপকনামাদিকে দৈবসত্তা বা দৈবাবতার বলে। যেমন- দক্ষিণারায়। (দৈবাবতার )
১.মতবাদযাজক বা রূপক-সাহিত্যের রূপকারগণকে মানুষাবতার বলে। যেমন- লালন সাঁইজি। (মানুষাবতার)
২.দৈবাবতার হলো কোন না কোন বৈক্তিকসদস্য। যেমন- ‘সাঁই’। (দৈবাবতার)
২.মানুষাবতার হলো সুবিজ্ঞ মনীষী বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তিগণ। (মানুষাবতার)
৩.এটা বৈক্তিকসদস্যের রূপকনাম। যেমন- জীবজল এর রূপকসদস্য সাঁই। (দৈবাবতার)
৩.এটা রক্তমাংসে গড়া দেহধারী মানুষ। (মানুষাবতার)
৪.এটা বৈক্তিকসদস্যের বিষয়, বস্তু, অবস্থা ও শক্তির রূপকনাম। (দৈবাবতার)
৪.এটা দেহধারী মানুষ ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (মানুষাবতার)
৫.এটা বৈক্তিকসদস্যের মধ্যেই বর্তমান। (দৈবাবতার)
৫.এটা দেহধারী মানুষ। (মানুষাবতার)
৬.এদের কোন জন্ম-প্রয়াণ নেই বরং এঁরা নিত্য ও অবিনশ্বর। (দৈবাবতার)
৬.এদের জন্ম-প্রয়াণ রয়েছে বরং এঁরা অনিত্য ও নশ্বর। (মানুষাবতার)
৭.এঁদের মানুষ নির্মিত বিদ্যা বা প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষার প্রয়োজন হয় না বরং এঁরা সনাতনী শিক্ষায় শিক্ষিত। যেমন- জিহ্বা টক, ঝাল, মিষ্ট, তিক্ত, কটু, লবণ ও কষা স্বাদাদি আপনিই বুঝতে পারে। (দৈবাবতার)
৭.মানুষাবতারকে বিদ্যালয়ে গিয়ে রীতিমত বিদ্যার্জন বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে হয় এবং যে কোন আধ্যাত্মিক গুরুর নিকট অবশ্যই দীক্ষা ও ভেদজ্ঞান অর্জন করতে হয়। (মানুষাবতার)
৮.এঁদের দ্বারা রূপকসাহিত্যের চরিত্রাদি নির্মাণ করা যায়। (দৈবাবতার)
৮.এঁদের দ্বারা রূপকসাহিত্যের চরিত্রাদি নির্মাণ করা যায় না। (দৈবাবতার)
তথ্যসুত্র- “আত্মতত্ত্ব ভেদ” -বলন কাঁইজি