সেল্ফ রেস্পেক্ট (আত্মসম্মানবোধ)

0
370
Marin Naznin

শ্রীমতী মেরিন সাহেব : প্রতিটি মানুষের এই একটা বিষয় ভীষণ ভাবে থাকে সেটা হউক ৩ মাস বয়সী মানুষ, কিংবা ৮০ বছর বয়সী।এই একটা বিষয় এর জন্যই শতকরা ৭০/৭৩ ভাগ অপরাধ সংঘটিত হয়।যার নিয়ন্ত্রণ আপনার আমার হাতেই।এই একটা বিষয়ের জন্যই বহু মানুষ কর্মহীন, গৃহহীন হয়ে পরে।

লোকের অজান্তেই ঘটে হার্ট অ্যাটাক কিংবা ব্রেইন স্ট্রোক, খুন কিংবা ধর্ষণ এর মতো অপরাধ। আমার বাসায় ২ জন গৃ্হসহায়িকা ৪ জন নিরাপত্তাকর্মী, একজন ধোঁপা, অর্ধশত খাবার পরিবেশনকারী (শিফট) ডিউটিতে আছেন, মায়ের বাসায় আছেন আরো ২ জন এঁরা সবাই আমার আবার আমার উনার কাজ গুলো নিষ্ঠার সাথেই করেন। কখনো তেমন কিছু বলতে হয়নি।

আমার আর আম্মুর বাসার গৃহসহায়িকা ছাড়া কেউই ফুলটাইম নয়।তাদের মুল কাজের পাশাপাশি তারা আমাদের সার্ভিস দিতে ভালোবাসে। আমি আর উনি যদি একসাথে কোথাও যাই বা বসি মাছির মতো ঘিরে থাকে কি লাগবে আমাদের কি দিবে।ব্যাপারটা আনন্দ এবং ভীষণ রকম ভালোলাগার। বাসায় যারা সাহায্য করছেন তারাও একই রকম।

এখন বলবেন কীভাবে??? যেখানে একজন লোক পাওয়া যায়না সেখানে এতো মানুষ কীভাবে কী??? ওই যে একটাই গোপন সূত্র প্রত্যেক মানুষকে আলাদা ভাবে, একক ভাবে সম্মান প্রদর্শন।তাঁর বা তাদের সাথে এমন ভাবে কথা বলা যাতে সে শুধু আপনার সামনেই লজ্জিত হয়। তার ভুল শুধু আপনিই জানেন।

প্রত্যেকটা মানুষই এক একটা ভুলের ভাণ্ডার কেউ এর উর্ধ্বে নই।না আপনি, না আমি না আমার সন্তান ৩ মাসের শিশুও।আমি নিজে এই আচরণ টা আমার বাবা,মা,তিমি(স্বামী) আমার প্রাক্তন ও বর্তমান বসদের থেকে শিখেছি। প্রাক্তন কাজে অনেক বার, অনেক কাজে ভুল করেছি রুমে ডেকে নিয়ে এককভাবে ঠান্ডা গলায় শান্ত স্বরে বুঝিয়ে বলেছেন, কড়া শব্দ নিয়ে খেলেছেন।

কিন্তু যতই বকা খেতাম বা খেয়েছি তাদের শ্রদ্ধা করি কারণ তারা কেঊই আমার আত্মসম্মানবোধ এ আঘাত করেননি, রাগ হয়ে দূটো কথা শোনালেও শ্রদ্ধা বেড়েছে তাদের প্রতি হাজার গুণ যে তিনি কারো সামনে আমাকে ছোট হতে দেননি এবং আমার ভুল গুলো আমাকেই বলেছেন।

তিমি কে দেখি সে যখন কাঊকে টিপস দেয় তখন এমন ভাবে দেয়, যেটা সামনে থাকা কেউই টের পাবেনা আপনি দেখবেন উনি তাদের সাথে করমর্দন করছেন কিন্তু আসলে তাদের দুজনের হাতের মধ্যেই থাকে ছোট্ট ভালবাসা যা তাকে অন্যের সামনে লজ্জিত করেনা।

গভঃমেন্ট স্কুলের ছাত্রী, পরীক্ষায় ফেল করা আমার নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো কিন্তু কোন শিক্ষক আমার অভিভাবকের সাথে তার সন্তান এর সামনে এমন ভাবে কোন কথা বলেননি যাতে তিনি অসম্মানবোধ করেন বরং বিষয়টা ছিলো বাবাকে ডেকে পরিচিত হওয়া চায়ের দাওয়াত আমার অন্যান্য কারিকুলাম এর প্রশংসা করে তাকে আন্দোলিত করে ফেল করা বিষয়ে একটু মনোযোগ বাড়ানো।

মূল কথা হলো আপনি কারো উপর বিরক্ত হলে সাথে সাথেই সেই বিরক্তি বা রাগ নিয়ে তারসাথে কথা বলবেন না। কিছু সময় নিয়ে নিজেকে আগে শান্ত করার চেষ্টা করুন। তাকে কি কি বলবেন সেটা মনে মনে ঠিক করুন তার মানসিকতা বুঝে কিছু সময় পরে তাকে একান্তে ডেকে তাকে তার ভুল গুলো বুঝিয়ে বলেন আর সময় বেধে দিন।

সমাধান আসবেই কারণ সে মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত।কাঊকে উপহার দিবেন, টিপস অথবা কোন কাজের স্পীড মানি তাতে যেন শিল্পবোধ থাকে যাকে দিচ্ছেন তিনি যেন আনন্দের বদলে অপমানিত বোধ না করেন বিষয়টি খেয়াল রাখা আপনারই দায়িত্ব।

বাসায় সুন্দরী বউ আছে জব্দ করতে হবে, বড় বড় কথা বলছেন নিজের বাড়ির লোকের সামনে পুরুষগিরি দেখাচ্ছেন ছোট করে কথা বলছেন।তার বাড়ির লোকের সামনে তাকে হেয় করছেন তার নামে বিচার দিচ্ছেন, উটের উপর থেকে তাকের নামার জন্য হাদিস মারছেন কেনরে ভাই নিজে উটের উপর উঠেন প্রত্যেকবার স্ত্রীকেই কেন আসতে হবে।

আপনি বাড়ির মালিক হতে পারেন তাই বলে ভাড়াটিয়ার বাসায় কিংবা বেডরুমে যখন তখন তার পূর্ব অনুমতি ছাড়া ঢুকে যেতে পারেন না, এটা আপনার একটা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আর আপনার ভাড়াটিয়া আপনার সম্মানিত গ্রাহক তার কোন আচরণ আপনার ভালো না লাগলেও আপনি তাকে সুন্দর শান্ত স্বরে ২/৩ বার বুঝিয়ে বলুন।

প্রয়োজনে সময় বেঁধে নোটিশ দিন বাড়ি ছাড়ার। আপনার বাসায় ভাড়া দিচ্ছেন, মাসে মাসে ভাড়া নিচ্ছেন প্রতি ১/২ বছরে একবার হলেও পুরো বাসার ত্রুটি সাড়ানোর দায়িত্ব আপনার কারন এখান থেকে আয় উপার্জন করছেন। খুব বড় রকম ক্ষতি হলে এবং সেখানে ভাড়াটিয়া দায়ী হলে তার সাথে বস্তির মতো চিৎকার না করে সমঝোতা করে সমাধান করুন।

সবচেয়ে বড়কথা নিজের ভেতর থেকে অহম বোধ দূর করুন এই বাড়ি বা টাইলস ফিটিং সিড়ি নিয়ে আপনি কবরে যাবেন না তাই এতো ঠুনকো নগন্য বিষয় নিয়ে ভাড়াটিয়াদের কটু কথা শুনাচ্ছেন কেয়ামত এর ময়দানে কি উত্তর দেবেন জানা আছে তো?

গৃ্হসহায়িকা ছুটি চাচ্ছে মেজাজ গরম, কীভাবে কী করবেন। একবার ভেবে দেখেন আপনি ছুটি দিলেন না খুবই রাগারাগি করলেন মন খারাপ করে বসে বুয়ার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছেন কিন্তু ছুটি আপনি না দিলে কী হবে সে মিথ্যা বলবে, না বলেই ছুটি কাটাবে।

গৃহসহায়িকা মানেই ২ দিন বলে ৪ দিন গায়েব তাই আপনিই নিজে থেকেই সে ২ দিন বললে আরো বাড়িয়ে ৩/৪ দিন করে দিন দেখবেন মিথ্যা বলে আপনাকে বিপদে ফেলছে না। তাকে নরম ভাবে ইমোশনালি বুঝান, দেখবেন সে নিজেই আপনার জন্য অন্য কাজের লোক প্রক্সি হিসেবে ঠিক করে দেবে।

ঈদের মধ্যে উনাদের ৭ দিন ছুটি কিছুই হয় না বলবে ৭ দিন কিন্তু আসবে ১০/১৫ দিন পর তাই আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে তাকে ছুটি দিন যাবার বেলায় বাড়তি কিছু টাকা এবং গিফট, হউক সেটা যত ছোটই সাথে কিছু সুন্দর সুন্দর কথা এই যেমন ধরুন তাড়াতাড়ি চলে এসো, ঠিকমতো সাবধানে যেও, আপনি না বল্ললেও সে যাবেই অযথা কেন তার বিদায় বেলায় মানসিক অশান্তি দেবেন।

বিশ্বাস করুন আমার বাসার আগের যিনি ছিলেন তিনি ওমান গেছেন কিন্তু আমার বাসার কাজের সাথে না হলেও ৭/৮ বাসার কাজ বদলেছে কিন্তু আমাকে ছাড়েনি। কারন একটাই আমি তাকে ছাড় দিয়েছি।

আসলে জীবন চলেই ছাড়ের উপর, যতোটুকু ছাড় দিবেন জীবন ততো সুন্দর হবে। তাই বলে বলছিনা যে ছাড় দিতে দিতে আপনার লাইফ এ বাঁশ ছাড়া আর কিছুই নেই। কী দরকার লোকজন কে প্যাড়া দিয়ে নিজে প্যাড়া খাওয়ার কারন আত্মার অভিশাপ হলো বড় অভিশাপ।

আপনার বাসায় ছোট্ট যেই নবজাতক যার বয়স ৩ মাস তাকেও ধমক দিলে সে কাঁদবে ঠোঁট ফুলিয়ে তাই অন্যের সামনে শিশুদের একদম শাসন করে তার সেল্ফ রেস্পেক্ট নষ্ট করবেন না তাহলে বড় হয়ে সে অন্যের সামনে আপনার সাথে তর্ক করবে এমনকি আরো বাজে পরিস্থিতিতে পরতে পারেন।

Advertisement
উৎসMarin Naznin
পূর্ববর্তী নিবন্ধবিরহের মাস -কবি শাহারা খান‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধপরিচয় -মলয় কর্মকার’এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে