“স্মৃতিময় ২১ ফেব্রুয়ারি” – অরুণ চক্রবর্তী

0
300
Arun

২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ ছিল বৃহস্পতিবার। আমি ক্লাশ থ্রি। স্কুলে ঢুকতেই নিখিলদা বুকে সেঁটে দিলেন লাল রঙে ছাপা ব্যাজঃ ‘রক্তাক্ত বৃহস্পতিবারকে ভুলিব না।‘ সেই সময় বৃহস্পতিবার ছিল গুরুত্বের। এক বছর না ঘুরলে ২১ ফেব্রয়ারি তো হবে না। সেদিন ব্যাজ বুকে এক্সাইটেড ছিলাম কী? মনে পড়ে না। হয়ত ছিলাম। কেননা, আমাদের পরিবার ছিল রাজনীতির গন্ধে ভরপুর।

মা-বাবা দুজনেই স্বদেশী, কমুনিস্ট। অত্তটুকুন বয়সে রাজনীতি বুঝি না ঠিকই, তবে ঝান্ডা বুঝি, চাটাইয়ে সাঁটা পোস্টার বুঝি, আকাশে মুঠি তোলা ঘুষি বুঝি। দুটি স্লোগান জানি, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘কালা কানুন বাতিল কর’ (যদিও কালা কানুনের সঙ্গে কালা নূনের তফাৎ ঠাহর করতে সময় লেগেছিল)। স্লোগান দিতে দিতে মা’র পায়ে পায়ে আমিও মিছিলে যেতাম।

এখনো চোখে ভাসে সেই বিশাল মিছিল। আমরা জেলেখানার কাছে তো শেষটা লিলি টকিজ বেঁকে পাহাড়পুরের পেট ফুঁড়ে বেরুচ্ছে। আর মাথা? ইন্সটট্যুটের চত্বরে পাক খেয়ে খেয়ে কুন্ডলী। সেখানে মা বক্তৃতা দিলেন, পাশে আমি। মেজদা ভল্যান্টিয়ারি করছে। বাবা উল্টো দিকে জেলখানার বাগান পেরিয়ে, জেলখানার ভেতরে বন্দী, নিরাপত্তা রক্ষা আইনে। এভাবেই কেটে গেছে একটা বছর। আমি তখন ক্লাশ ফোর। প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের কথা মনে আছে।

সুরেন্দ্রনাথ কলেজের মাঠে রাতারাতি ইঁট গেঁথে মেজদা আর তার লড়াকু বন্ধুরা গড়ে তুললেন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। পিরামিডকে লম্বা করলে যেমন হয়, কিন্তু চারকোণা, ত্রিভুজ আকারের না। আমাদের দু ভায়ের ওপর মেজদা দায়িত্ব দিলেন, একটা রক্তজবার মালা বানানোর। বাড়ির কাছেই কালীভক্ত ক্ষিতীশ মোক্তারের বাড়িতে ছিল অনেক রক্ত জবার গাছ। ফুলে হাত দিলে হাত ভেঙে দেন যিনি, সেই জ্যেঠিমাই ডাল বাঁকিয়ে ধরেন আর আমরা ফুল পাড়ি। অনেক ফুল।

এক সময় জ্যেঠিমা আমাদের কচি হাত সরিয়ে মালা গেঁথে দেন। বিশাল মালা। বি শ শা ল বললেও তা ছোট হয়ে যাবে। একুশের সকালে স্মৃতিস্তম্ভকে আপাদ মস্তক জড়িয়ে ধরল সেই মালা। আমি অত বড় জবার মালা আর দেখিনি কোনদিন। সেই একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“হারুকাকার পদক”- ভাস্কর বাগচী’র রম্য রচনা
পরবর্তী নিবন্ধ“অবিমিশ্র অনুভবের মিশ্র সংস্করণ” – কাজী আতীকের কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে