ভায়লেট হালদার : আজ আমাদের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস। প্রতি বছর এই দিবসে আমাদের আনন্দিত করলেও স্বজন হারানোর ব্যথায় মনকে করে ভারাক্রান্ত। একটি ভাষার মর্যাদার জন্য, একটি মানচিত্রের জন্য, একটি জাতির শোষণ ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রাণ দিয়েছিলেন। আমরা সেই দেশমাতার সন্তান, যে দেশ স্বাধীনতা ঘোষণার পরে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার এই সোনার বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস ২০২০ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত যে তিনটি সংবাদ আমার চিন্তাশক্তিকে আশংকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সারাটা দিন কেবল প্রশ্ন’রা আমাকে তাড়িত করেছে- এই কি আমার স্বাধীন বাংলাদেশ? স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে আমাদের ৩০ লক্ষ স্বজন। আমরা কি আমাদের অমূল্য স্বাধীনতা রক্ষায় সর্বদা সচেতন আছি? আমরা কি বিদেশী শত্রুদের তাড়িয়ে দেশীয় শত্রুদের অধীন হয়ে পড়ছি?
১। দৈনিক শিক্ষা’য় প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম, ‘সাঈদীর মুক্তি চায় জামাতপন্থী শিক্ষক’। ফেসবুকে ‘বেসরকারী শিক্ষক ফোরাম’ নামে একটি পেইজ আছে। এই পেইজ থেকে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষকেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা, তথ্য ও মতবিনিময় করে থাকে। এখানে কেমন করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্যা রাজাকারের মুক্তি দাবী করতে পারে? যে শিক্ষক আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস গর্বের সঙ্গে পড়াবে ও জানাবে, সেই শিক্ষক কেমন করে সাজাপ্রাপ্ত ও কারাগারে বন্দী যুদ্ধাপরাধী কয়েদীর মুক্তি চাইতে পারে?
২। বরিশাল থেকে প্রকাশিত অনলাইন সংবাদপত্র ‘বরিশাল ট্রিবিউন’ সংবাদ শিরোনাম- ‘পরিবার ও জনপ্রতিনিধিদের দাবী, শরীরে আঘাতের চিহ্ন, শানুকে ‘খুন’ করে আমতলীর দুই ওসি।’ সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামে ২০১৯ সালে বছর ৩ নভেম্বর ইব্রাহিম নামের একজনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলার এজাহারে নিহত শানু হাওলাদারের সৎ ভাই মিজানুর রহমান হাওলাদারকে আসামি করা হয়। ওই আসামির ভাই শানু হাওলদারকে গত সোমবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সহেন্দভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমতলী থানা পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে শানু হাওলাদারের শরীরে আঘাতের চিহ্ন সহ ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু। মানুষ বিপদে পড়লে সবার আগে থানায় পুলিশের কাছে যায়, সেখানেও নিরাপদ নই আমরা। কারা আসছে পুলিশের চাকরিতে? এরা কি …কিদের রেখে যাওয়া বীজ? নাকি স্বাধীন দেশে শাসকেরা স্বাধীন প্রজারা আমৃত্যু পরাধীন?
৩। দৈনিক ইত্তেফাক’এর সংবাদ শিরোনাম,- ‘ধর্ষণের পর খুন করে আযান, ফজরের ইমামতি।’ গফরগাঁওয়ে পাড়াভরট গ্রামের কিশোরীর নাম তাকমীন ভালবেসে প্রেমিক আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। প্রেমিক আশিকুল রাত তিনটার দিকে তাকমীনকে ফোন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মসজিদের কাছে আসতে বলে। মেয়েটি ভালবাসার আবেগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। আশিকুল মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং পরে হত্যা করে মসজিদের লাশ একটি জামগাছের ডালের তাকমীনের ওড়না দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। এরপরে আশিকুল মসজিদে ফজরের আজান দেয় এবং নামাজের জামাতে ইমামতি করে। একজন মানুষকে খুন করে ঠাণ্ডা মাথায় কেমন করে পরবর্তী কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারে? নামাজে জামাতে আসা মুসল্লিরা ঘুণাক্ষরেও তাকে সন্দেহ করতে পারল না!
কোথায় পালালো স্বাধীনতা?
স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের জন্য নয়!
নাকি নিষ্ঠুরের মর্জির নাম স্বাধীনতা?
শুধু একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ নয়, আজও এদেশে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এসব নরপশুদের বিরুদ্ধে মানবিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার চাই। দ্রুত বিচার চাই। বাংলার মাটিতে এদের দ্রুত বিচার করা না হলে আমরা পরাধীন শেকলে বন্দী হয়ে যাবো।