অনন্ত জলিল এদেশের যোগ্য নায়ক ! – মোজাফ্ফর হোসেন

0
302

অনন্ত জলিল এদেশের যোগ্য নায়ক ! – মোজাফ্ফর হোসেন

আমাদের চলচ্চিত্র জগত একটা সার্কাসের জায়গা। নায়িকারা হজ করে বোরকা ধরে। কোনো নায়ক মারা গেলে তার অভিনয়ের মূল্যায়নের চেয়ে সে যে শুটিং থামিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত সেটা ফলাও করো ছাপা হয় মিডিয়ায়। বাংলা সিনেমায় ধর্ষকের চরিত্রে অভিনয় করে ‘সুখ্যাত’ ভিলেনও কথায় কথায় যেভাবে আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানআল্লাহ বলে, হুজুরও ফেল মেরে যাবে। এফডিসির নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী নায়ক এফডিসিতে মসজিদ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চান।

এদেশের মুসলমানরাও তেমন, সিনেমা করা লোকজনকে ও ইসলাম প্রচারকের ভূমিকায় দেখতে চায়! এফডিসি আর ইসলামি ফাউন্ডেশন গুলিয়ে ফেলে! কাজেই অনন্ত জলিল সেই হিসেবে ঠিক পথেই আছেন। সিনেমার নায়ক হয়েও তিনি যে মনে করেন, বাংলাদেশের সাধারণ নারীরা পোশাকের কারণে ধর্ষণের শিকার হয়, তাতে আমি মোটেও আশ্চর্য হইনি। তিনি যে বললেন, ‘শালীন পোশাক পরা নারী কখনোই ধর্ষণের শিকার হয় না’, তাতে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমানের যোগ্য নায়ক তিনি। এদেশেই ময়ুরী, মুনমুন, শানু, পলি, মেহেদী, শাহীন আলমদের অশ্লীল সিনেমা সুপারহিট হয়, আবার হাজি শাবানা, নামাজি মান্নার কথা বলে অধিকাংশ মুসলমান তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।

এদেশই মসজিদ এবং নামাজি মুসলমানের দেশ, আবার এদেশই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন দেশ। এদের অধিকাংশ সারাজীবন হারাম চিন্তা করে, হারাম আয় করে আর হালাল সাবান-পারফিউমের বিজ্ঞাপন দেখে আলহামদুলিল্লাহ বলে। পারফিউমও যে হালাল হতে পারে, একমাত্র এই হারাম মগজেরই আবিষ্কার। ফলে আমাদের অধিকাংশ সিনেমার কর্মী(সাংস্কৃতিক কর্মী বলতে চাই না) আচরণে মৌলানা, জীবিকা সিনেমা। এই ভণ্ডদের পেছনে আবার ছুটে বেড়ায় এদেশের মিডিয়া। একজন খ্যাতিমান/নিবেদিত লেখকের মৃত্যুখবরের চেয়ে গুরুত্বপায় কথিত অভিনেত্রীর সকালে নাস্তার মেন্যু, বিকালের সাজগোছ।

শেষ কথা হলো, যেমন জনগণ, তেমন তার সুপারস্টার, তেমন মিডিয়া। এদেশের সিংহভাগ মানুষকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না, ধর্ষণের সঙ্গে মেয়েদের পোশাকের কোনোই সম্পর্ক নেই। সামান্য সম্পর্কটুকুও নেই। মাদরাসার হাজার ছেলেশিশু যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, দশ বছরের নিচে হাজার হাজার মেয়েশিশু যে ধর্ষণের শিকার হয়, বৃদ্ধমা ধর্ষণের শিকার হয়, এমনকী ছাগল-গরুও বাদ যায় না, এগুলোর কথা তারা একবারও বলবে না। ধর্ষণের শিকার যেন একমাত্র বাংলা সিনেমার ভুড়িমোটা টপসপরা নায়িকারা হয়! ধর্ষণের মতো অপরাধের দোষটাও ইনিয়েবিনিয়ে মেয়েদের উপর চাপাতেই হবে। বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাক অশ্লীল নয়, অশ্লীল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, অশ্লীল আমাদের জীবনাচরণ, অশ্লীল কথাবার্তা, অশ্লীল আমাদের চরিত্র, স্বভাব, বাকি যা থাকে সবকিছু।

‘ধর্মপ্রাণ’ মুসলমান ভাইবোনদের খুব রাগ হচ্ছে আমার উপর? দেশে মাদরাসার মতো পবিত্র জায়গায় যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তাও ছেলেশিশু বলাৎকার, তখন রাগ হয় না? মেয়েদের সাধারণ পোশাক দেখেও মুসলমান দেশ বলে ছিছি করেন, মুসলিম দেশ ঘুষে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলে তখন ছিছি করতে ইচ্ছে করে না? নটরডেমে পড়ে পড়ে বলে একঘরে করেন, কটা ধর্ষকের পরিবারকে একঘরে করেছেন? শূকরের মাংসের চেয়ে কি ধর্ষণ কম হারাম?

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“আমি বরিশালের বাঙাল, কোন বিদেশী নই !!” – নচিকেতা
পরবর্তী নিবন্ধবড়াইগ্রামে ভন্ড কবিরাজের খপ্পড়ে প্রতারিত হাজারো মানুষ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে