আজ মহানবমী : আগামীকাল বিসর্জন : সমাপন হবে বাসন্তী পূজোর

0
234
nATORE KANTHO

নাটোর কন্ঠ : বিপদকালে অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে আদ্যাশক্তির আরাধনা পুরাকাল থেকেই চলে আসছে। মহাপুরুষরাও তাই করে এসেছেন। রামায়ণ অনুসারে, অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছিলেন, যা অকাল বোধন হিসেবে খ্যাত।

পুরাণ অনুযায়ী, চন্দ্র বংশীয় রাজা সুরথ বসন্ত কালে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। কালের পার্থক্য হলেও আরাধনা কিন্তু দেবী দুর্গারই। শরৎকালে শারদীয়া দুর্গা পূজা, আর বসন্ত কালে দেবীর আরাধনা বাসন্তী পূজা হিসেবে প্রসিদ্ধ। উভয় পূজার রীতিও প্রায় একই।

ইতিহাস বলছে- চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই প্রকৃত দুর্গা পুজো। যদিও একালে আশ্বিন শুক্লপক্ষের বা শরতের দুর্গা পুজোই অন্যতম প্রধান পুজোর স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু তবুও বাঙালি আদি দুর্গাপুজোকে কোনওদিনই পুরোপুরি ভুলে যায়নি। তাই এখনও বাংলায় দুর্গা পুজোর আদিরূপ বাসন্তী পুজোর আয়োজন করা হয়। চলতি বছর বাসন্তী পূজার ষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হয় ৮ এপ্রিল শুক্রবার ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।

বাসন্তী প্রতিমা প্রণাম করতে আসা ভক্ত যোগোমায়া চক্রবর্তী জানান, ‘দেবী বাসন্তী’র কাছে প্রার্থনা করলাম, যুগে যুগে দেবী যেভাবে অশুভ শক্তির বিনাশ করেছেন। অসুর বংশকে ধ্বংস করেছেন। তেমনি ভাবে বিশ্বের সকল ভক্ত প্রাণীকুলকে দেবী মায়ের চরণে আশ্রয় দেবেন সেই কামনা।’

জেলা কেন্দ্রীয় মন্দির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীলমণি কর্মকার জানান, ‘রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী শাস্ত্রমতে প্রতি বছরেই নাটোর জয়কালী বাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বাসন্তী পূজা। তবে গত দুই বছর করোনাকালীনার কারণে ভক্ত সমাগম ছাড়াই পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বছরে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ভক্তদের বেশ, উপস্থিতির দেখা মিলছে।’

জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের পুরোহিত পঞ্চানন ভাদুড়ী জানান, ‘পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে বাসন্তী পুজো নামে প্রসিদ্ধ হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পুজোরী হিসাবে চণ্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে।

সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন। কোনও যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হারেননি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। এই সুযোগে তাঁর সভাসদরাও লুটপাট চালায়। কাছের মানুষের এমন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরথ। বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছোন।

ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তাঁর সমাধির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন, সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি বৌ-ছেলের ভালোমন্দ এখনও ভেবে চলেছেন।

তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন, যাদের কারণে তাদের সব কিছু হারিয়েছে, তাদের ভালো আজও তারা চেয়ে যাচ্ছেন। ঋষিকে একথা বলায়, তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন। ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন।

গত ৫ এপ্রিল ২১ চৈত্র মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ৪৭ মিনিটে পঞ্চমী তিথি আরম্ভ হয়। পঞ্চমী তিথি শেষ হয় ৬ এপ্রিল, ২২ চৈত্র, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ০২ মিনিটে। ৬ এপ্রিল, ২২ চৈত্র, বুধবার, সন্ধ্যা ৬টা ০৩ মিনিটে ষষ্ঠী তিথি আরম্ভ হয়।

ষষ্ঠী তিথি শেষ হয় ৭ এপ্রিল ২৩ চৈত্র বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩৩ মিনিটে। সপ্তমী তিথি আরম্ভ ৭ এপ্রিল, ২৩ চৈত্র বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩৪ মিনিটে। সপ্তমী তিথি শেষ হয় ৮ এপ্রিল, ২৪ চৈত্র শুক্রবার রাত ১১টা ০৬ মিনিট।

অষ্টমী তিথি আরম্ভ হয় ৮ এপ্রিল ২৪ চৈত্র শুক্রবার রাত ১১টা ০৭ মিনিটে। অষ্টমী তিথি ৯ এপ্রিল ২৫ চৈত্র শনিবার রাত ১টা ২৪ মিনিটে। রাত ১টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে সন্ধি পূজা শেষ হয়। নবমী তিথি আরম্ভ হবে ৯ এপ্রিল ২৫ চৈত্র শনিবার রাত ১টা ২৫ মিনিট।

নবমী তিথি শেষ হবে ১০ এপ্রিল ২৬ চৈত্র রবিবার রাত ৩টা ১৬ মিনিটে। এবং দশমী তিথি আরম্ভ হবে ১০ এপ্রিল ২৬ চৈত্র রবিবার রাত ৩টা ১৭ মিনিটে। দশমী তিথি শেষ হবে ১১ এপ্রিল ২৭ চৈত্র সোমবার রাত ৪টা ৩১ মিনিটে। তিথি অনুযায়ী আগামীকাল বিসর্জনের মধ্যদিয়ে এবছরে সমাপন হবে বাসন্তী পূজোর।’

আগামী বছর মহা জাঁকজমক পূর্ণ অবস্থায় উদযাপিত হবে বাসন্তী পূজা। আর দেবী বাসন্তী‘র আদ্যা শক্তি দ্বারা বিশ্ব থেকে সকল অশুভ শক্তি মুছে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা ভক্তকুলের।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে সমকাল সুহৃদ সমাবেশের ইফতার মাহফিল
পরবর্তী নিবন্ধবনপাড়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে