আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা, গুরুদাসপুরে অবাধে চলছে পুকুর খনন

0
3230

নাটোর কণ্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্ব

নাটোর কণ্ঠ : আগে যেখানে দেখা যেত দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ। এখন সেখানে দেখা মেলে শুধু পুকুর, দীঘি আর জলাভূমি। উর্বর তিন ফসলী কৃষি জমি কেটে তৈরি করা হয়েছে মাছ চাষের পুকুর। এতে নাটোরের গুরুদাসপুরে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে কৃষি জমি। যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে ফসলের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফসলী জমি,সরকারী রাস্তায় ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন বাস্তব ভিক্তিক কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে,পুকুর খননের সাথে পুকুর খননের সাথে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী ও রাজনৈতিক দলীয় কিছু নেতার ছাত্রছায়ায় উপজেলাজুড়েই পুকুর খনন চলছে।
খুবজীপুর ইউনিয়নের পিপলা গ্রামে উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রাজিব দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তার ভগ্নিপতি মুর্শিদ আলী প্রামানিক তার ভাই মামুনের ৫ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন। পুকুর খননের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিব জানান,প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশ রয়েছে।

মশিন্দা ইউনিয়নের সাহাপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মতি আকন্দের ছেলে মনির হোসেন শ্রীপুর-চরপিপলায় অন্তত ৭ বিঘা জমিতে পুকুর কাটছেন। তিনি সংস্কারের মানে নতুন সম্প্রসারন করছেন। তার পুকুর সংলগ্ন সরকারী পাকা রাস্তার কিছু অংশ ধ্বসে পরেছে। বাঁকি অংশও হুমকির সম্মুখিন। পুকুর খননের অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে মনির সংবাদ মাধ্যমকে জানান,সাংবাদিকদের সেটা জানার বিষয় নয়।একই ইউনিয়নের শিকারপুর গোরস্থানের পাশে ৪ বিঘা ফসলী জমিতে পুকুর খনন করছেন বাচ্চু ও তার সহযোগীরা। সে মাটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইট ভাটায়।

নাজিরপুর ইউনিয়নের কুশুমহাটি গ্রামের মিনু সরদারের ছেলে মোবারক সরদার আদালতের নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে পুকুর খনন চলমান রেখেছেন। মাটি ব্যবসায়ী জাফর পুকুর খননের ইজারা নিয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে এস্কেবেটর দিয়ে পুকুর খনন করছেন।
নাজিরপুর ইউনিয়নের তুলাধুনা ইটভাটার পুর্বপার্শ্বে পাশাপাশি দুটি পুকুর শেষ করে তৃতীয়টি চলমান রেখেছেন দেলবর হোসেনের ছেলে রাজু। তার সহযোগী পুরুলিয়ার গ্রামের জাহাঙ্গীর। খনন করছেন ৬ বিঘা পুকুর। এতে মাঠজুড়ে জলাবদ্ধতার আশংঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

একই ইউনিয়নের চন্দ্রপুর কালীবাড়ি গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে তালেব,আলতাব,মোতালেব ভেকু দিয়ে পুকুর খনন চলমান রেখেছেন। নেতৃত্বে রয়েছেন একই এলাকার প্রভাবশালী খান সাহেবের ছেলে ফিরোজ। তারা ওয়াবদা বাজারের পাশে ১০ বিঘা জমিতে বীরদর্পে পুকুর কাটছেন কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই।

বিয়াঘাট ইউনিয়নের বাবলাতলা গ্রামে পুকুর খনন করছেন সেলিম। সেলিম মাটি বিক্রি করছে। ভেকু মালিক রাজিব মুকুল।
ধারাবারিষা ইউনিয়নের সোনাবাজু ওয়াবদা বাঁধ এলাকায় মকছেদ সরদারের ছেলে বজলুর রহমান ও আব্দুল মান্নান তাদের ৫ বিঘা তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন। ওই মাটি নাজিরপুর-গুরুদাসপুর সড়ক নির্মানের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। এমন দাবী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সরকার কনষ্ট্রাকশনের তত্তাবধায়কের।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাবমতে, বিগত ৪ বছরে জেলায় আবাদি জমি কমেছে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর। তিন ফসলি ও চার ফসলি এসব আবাদি জমি এমন আশঙ্কাজনকহারে কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নাটোরের জেলা প্রশাসন এবং কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের মতে, জেলায় নির্বিচারে পুকুর খনন চলতে থাকায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদনও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুকুর খননে ভূমির শ্রেণী বদল হচ্ছে।

এতে পরিবেশগত প্রতিকূলতার আশঙ্কা বাড়ছে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাজুড়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফসলী জমিতে অবাধে চলছে পুকুর খনন। কৃষিজমি,সরকারী রাস্তায় ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন কিছুই দেখছে না।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, পুকুর খনন বন্ধে তাঁরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

চলবে…

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধবড়াইগ্রামে করোনা টিকা প্রদান ও নিবন্ধনের উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধগুরুদাসপুরে আড়াই কেজি গাঁজাসহ ২ জন আটক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে