উপন্যাস লেখায় ফকনারের ৭টি টিপস

0
230

উপন্যাস লেখায় ফকনারের ৭টি টিপস

‘যে তরুণ লেখক কোন মতবাদ অনুসরণ করে সে একটা আস্ত বোকা।’ কথাটি বলেছিলেন নোবেল বিজয়ী লেখক উইলিয়াম ফকনার প্যারিস রিভিউর একটি সাক্ষাৎকারে। ‘নিজের ভুল থেকে শেখো, মানুষ ভুল করেই শেখে। একজন ভাল শিল্পী মনে করে তাকে উপদেশ দেয়ার মত তার চেয়ে যোগ্যতর আর কেউ নেই।’
মজার ব্যাপার হল, ফকনার ১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে তরুণ লেখকদের মাঝে প্রচুর উপদেশ বিলি করেছেন। তিনি তখন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আবাসিক লেখক’ (writer in residence) পদে ছিলেন। তার অনেক বক্তৃতা, অভিভাষণ, আলোচনা টেপ রেকর্ড করা হয়েছিল। এগুলো ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফকনার অডিও আর্কাইভ’-এ সংরক্ষিত। আমরা এগুলো থেকে বাছাই করে ফকনারের সাতটি মজার উক্তি বের করেছি। ফিকশনের উপর তার ঐ কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে রেকর্ডগুলোতে। ফকনারের তোতলামির স্বভাব ছিল এবং একই শব্দ একাধিকার উচ্চারণ করত। এখানে আমরা তার পুনরুক্তি বাদ দিয়েছি।

১. অন্য লেখক থেকে যা নেওয়ার নিয়ে নাও
অন্য লেখক থেকে কাজের জিনিস চুরি করা ফকনারের মতে দোষের কিছু নয়। ১৯৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে লেখালেখির একটি ক্লাসে তিনি বলেছিলেন—
‘‘এটা আগেও বলেছি যে আমি মনে করি লেখকরা চোর-বাটপার। অন্যদের থেকে প্রয়োজনমত সে চুরি করে নেয়। এটা অনেকটা প্রকাশ্যে সততার সাথে করে থাকে। তবে এ চুরির মাহাত্ম্য হলো এই যে, সে ও তার চেয়ে (যার থেকে চুরি করেছে) ভালো কিছু উপহার দিতে চায়। যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোন নতুন চোর তার থেকে চুরি করে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।’’

২. স্টাইল নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়
একজন খাঁটি লেখক তার লেখা নিয়েই চরম ব্যস্ত। স্টাইল নিয়ে মাথা ঘামানোর এত সময় কই! ১৯৫৮ সালের ২৪ এপ্রিল আন্ডারগ্যাজুয়েটদের লেখালেখি ক্লাসে ফকনার বলেন—
“আমি মনে করি কোন গল্প নিজেই স্টাইল ধরে নেয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। লেখককে এত দুশ্চিন্তা করতে নেই। স্টাইল নিয়ে অতি দুশ্চিন্তার ফলে একটা মহামূল্যবান (!) ‘বাজে সাহিত্য’ জন্ম নিবে। ঐগুলো আসলেই অর্থহীন। হয়তোবা দেখতে সুন্দর, শ্রুতিমধুর মনে হবে কিন্তু ভেতরে মাল (সার) নেই।”

৩. অভিজ্ঞতা থেকে লিখ আর অভিজ্ঞতার দরজা খোলা রেখো
ফকনার এই পুরনো তত্ত্বে বিশ্বাস রেখেছেন। আর যাই হউক অভিজ্ঞতার বাইরে লেখা তো অসম্ভব। তবে অভিজ্ঞতা নিয়ে তার ধারণাটা মজার। ১৯৫৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান ফিকশন এর উপর গ্যাজুয়েটদের ক্লাসে ফকনার বলেছিলেন—
“আমার মতে তুমি যা-ই অনুধাবন করতে পারে তা-ই অভিজ্ঞতা। এটা বই থেকেও আসতে পারে। এটা এমন বই, এমন গল্প এবং এতই জীবন্ত যে, যা তোমাকে নাড়িয়ে দেয়। আমার মতে এটা তোমার অভিজ্ঞতাসমূহের একটি। এটা এমন নয় যে ঐ বইয়ের চরিত্রগুলো যা করে তা নিজে করে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। চরিত্রগুলোর কাজ যদি বাস্তবসম্মত মনে হয় এবং মনে হয় মানুষ এমনটিই করে তাহলে এটা একটা অভিজ্ঞতা। তাই আমার অভিজ্ঞতার সংজ্ঞা হচ্ছে এই যে অভিজ্ঞতার বাহিরে লেখা অসম্ভব। কারণ যা তুমি পড়, শুন, অনুভব কর, কল্পনা কর— এ সবই অভিজ্ঞতার অংশ।”

৪. তোমার চরিত্রগুলোকে ভাল করে জানো— তাহলে গল্পটা নিজেই নিজেকে লিখবে
ফকনার বলেন— যখন কোন একটা চরিত্র সম্পর্কে তোমার স্পষ্ট ধারণা থাকবে, গল্পের ঘটনা পরিক্রমা প্রয়োজনের তাগিদেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রবাহিত হবে। চরিত্র রূপায়ন নিয়ে এক ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে ফকনার তার ১৯৫৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আমেরিকান ফিকশনের ঐ ক্লাসটিতে বলেন—
“আমি বলব তোমার মনে বানানো চরিত্রটি নাও। তোমার মনে যেভাবে ধরা দিয়েছে তা-ই সঠিক, তা-ই সত্য। তোমার কাজ শুধু সঙ্গ দেয়া। সে যা করে, যা বলে তা-ই লেখা। এটা হচ্ছে প্রথমে গলাধঃকরণ তারপর গর্ভধারণ। তোমাকে অবশ্যই চরিত্রকে জানতে হবে। তাকে বিশ্বাস করতে হবে। তোমাকে অনুভব করতে হবে যে জীবন্ত। তারপর অবশ্যই তুমি তার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করবে, সাজাবে। তোমার ইচ্ছে মতো। এরপর তো গল্পটা দাঁড়ানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। কাগজ নাও, লিখে ফেলো, ব্যাস।”

৫. আঞ্চলিক শব্দ এড়িয়ে চলো
অনেকগুলো স্থানীয় রেডিও প্রোগ্রামে ফকনার আঞ্চলিক শব্দের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেছেন। এগুলো ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির ওই অডিও আর্কাইভেই সংরক্ষিত।
১৯৫৮ সালে ৬ মে ‘কোনটি ভাল শব্দ’ এই সম্প্রচারে ফকনার লেখকদেরকে সতর্ক করে দেন— লেখকরা যেন স্রোতে ভেসে না যান এবং নিজের হাতে যেন হাল ধরে রাখেন। তিনি বলেন— “আমি মনে করি যত অল্প সংখ্যক আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল। আঞ্চলিক শব্দ পাঠককে বিভ্রান্ত করে। কারণ ওগুলো তার কাছে পরিচিত নাও হতে পারে। এজন্য কোন চরিত্রকে সম্পূর্ণভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে দেয়া উচিত নয়। দুয়েকটা সহজ ও পরিচিত শব্দ ব্যবহার করা যেতেই পারে।”

৬. তোমার কল্পনা শক্তি ফুরিয়ে ফেল না
“কোন কাহিনী বা চিন্তার শেষটা লিখে ফেল না।” এ উপদেশটি ফকনার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আলোচনাতেই একাধিকবার দিয়েছেন। আর্নেস্ট হোমিংওয়ের সাথে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। (আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ৭টি টিপস প্রকাশ করা হবে আগামী সপ্তাহে)।
১৯৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লেখালেখির ক্লাসে ফকনার বলেন— “আমি বলব, গরম থাকতে থাকতেই ছেড়ে দাও। শেষটা লিখে ফেল না। ভাল থাকতে থাকতেই ছেড়ে দাও। এরপর নতুন করে ধরা সহজতর। যদি তোমাকে ফুরিয়ে ফেল, তোমার লেখা বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক সমস্যায় পড়বে।”

৭. কোনো অজুহাত নয়
ঐ ক্লাসটিতেই (২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭,) ফকনার কিছু তেঁতো কথা বলেন, ওই সব হতাশ লেখকদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা তাদের ব্যর্থতার জন্য (লেখক হিসেবে) পরিবেশকে দায়ী করে, গালি দেয়।
“আমার রাগ ওঠে যায় ওইসব অকর্মা ‘প্রতিভাধর লেখক-কবিদের’ প্রতি যারা চিৎকার করে বলে বেড়ায় তার এই নেই, সেই নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের অনেকে বলে— আমি যদি এই কাজ না করতাম, তাইলে লেখক হতাম। কেউ বলে— আমি যদি বিয়ে না করতাম, বাচ্চা-কাচ্চা না থাকত, তাইলে লেখক হতাম।
আমার এদের কথায় এক দণ্ডও বিশ্বাস নেই। আমি মনে করি— তুমি যদি লিখতে চাও, তুমি লিখবে। আর কোনো কিছুই তোমাকে থামাতে পারবে না।”

অনুবাদ: সাবিদিন ইব্রাহিম

সূত্র- মাসউদ আহমাদ এর ফেসবুক ওয়াল থেকে। 

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের সিংড়ায় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত ৩০ টি ঘরবাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধসিংড়া তাজপুর ইউপি ভবন উদ্বোধনের ১ যুগ পার হলেও পরিত্যক্ত! প্রশাসনকে দুষছেন সাধারণরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে