একুশের ডায়েরি -বিপ্লব কুমার পাল -পর্ব-০১

0
157

একুশের ডায়েরি

বিপ্লব কুমার পাল

পর্ব-০১

একুশে টেলিভিশন বাংলাদেশে তথ্য-বিনোদন জগতে বিপ্লব এনেছিল। বাংলাদেশে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের ১৪ এপ্রিল। এই অগ্রযাত্রায় চুল পরিমাণ হলেও আমি যুক্ত ছিলাম মফস্বল থেকে। ২০০২ সালের ২৯ আগস্ট সম্প্রচার বন্ধ হওয়া আগ পর্যন্ত একুশে টিভির নাটোর প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেছি। অনেক ভাঙ্গা-গড়ার মধ্য দিয়ে এখনও কোনো মতে টিকে আছে একুশে টিভি। কিন্তু যারা সেসময় একুশে কাজ করেছেন তারা এখনো আবেগ তাড়িত হন।

এই টেলিভিশনে ২০২০ সালের ১২ মার্চ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হয়ে যোগদান করেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। যার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ২০ বছরের। তবে পীযূষদা মনে করতেন আমাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ৮ বছর আগে একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বললেন- “পুরনো ডায়েরি ঘাটতে গিয়ে দেখলাম- নাটোরে তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছে। মাত্র ১২ বছর আগে! কিন্তু আমার মনে হয় অনেক দিনের পরিচিত তুমি।”
এই সম্পর্ক শুধু দেখা সাক্ষাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা। ভালো-মন্দ সময়ে দাদার সাথে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। বিএনপির শাসনামলে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটকে অভিনয় পর বিপদে পড়েছিলেন তিনি, তখনও তার সাথে ছিলাম। দুদকের মামলার জালে পড়েছিলেন তখনও ছিলাম। তাঁর বিয়ের সময় আমি ছিলাম। আবার আমার বিয়েতে নাটোরে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন।

তিনিও আমার পাশে থেকেছেন। সমকালের সম্পাদক আলমগীর হোসেন ভাইয়ের সাথে পীযূষদা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলন, তখন তিনি বাংলানিউজ করছিলেন। পরবর্তীতে বাংলানিউজে জয়েন্ট করি। তাছাড়া একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে একাত্তর টিভিতে কাজের সুযোগ পেয়েছি। কাজ করেছি টানা সাড়ে ১১ বছর।

এতো গভীর সম্পর্কের মানুষটি যখন একুশে টিভির সিইও তখন সবাই ভেবেই নিয়েছিল, আমি একুশে টিভিতে যাচ্ছি। একুশে টিভিতে আমার চাকরি নিয়ে প্রথম দিকে পীযূষদার সাথে কোনো আলোচনা হতো না। আমি তখন একাত্তর টিভির নিউজ এডিটর। আমি প্রায় দিনই একাত্তর থেকে ফেরার সময় একুশের টিভির দাদার কাছে যেতাম। দীর্ঘ সময় থাকতাম। একুশে টিভি নিয়ে আলোচনা হতো। কে কি কাজ করে, কে ষড়যন্ত্র করে, কে টাকা পয়সা চুরি করে, কে কার এজেন্ট ইত্যাদি।

একদিন পীযূষদার মন খারাপ। কেন জিজ্ঞেস করলাম। বললেন, ব্রডকাস্ট ও, ট্রান্সপোর্ট-এ কেনাকাটা এতো চুরি, কীভাবে ঠেকাবো। একটি নাট কিনতেও চুরি করে। বললেন, সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয় ব্রডকাস্ট ডিপার্টমেন্টে। দাদার দুঃখ আরেকটি কারণে, তার বিশ্বাস হিন্দু লোকেরা দুর্নীতি-চুরি কম করে। অথচ ব্রডকাস্ট ডিপার্টমেন্টের হিন্দু মানুষটি সবচেয়ে বেশি চুরি করছে। তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেবেন বলে জানালেন। যদিও তাকে ব্রডকাস্ট থেকে সরিয়ে দেননি। পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠেছেন পীযূষদার ঘনিষ্টজন। ঠিক যেন রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকির দস্যু থেকে সাধক হয়ে ওঠার গল্পের মতো। সেসব নিয়ে আরেক পর্বে বিস্তারিত কথা হবে। এবার ফিরি পীযূষদা প্রসঙ্গে।

পীযূষদা একুশে টিভিতে যোগদানের ছয় মাসের পর প্রথম বারের মতো আমাকে ইটিভিতে জয়েন্ট করার কথা বলেন। হঠাৎ ফোন দিয়ে বললেন, কালকে তোমাকে জয়েন্ট করতে হবে। আমি বললাম- এভাবে জয়েন্ট করা যায় নাকি? আমি আসছি- বাকী আলোচনা সাক্ষাতে হবে দাদা।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

(চলবে..., বাকি অংশ, পর্ব -২ এ)

Advertisement
উৎসBiplob Kumar Paul
পূর্ববর্তী নিবন্ধরাণী খাল খনন -সরদার মোহাম্মদ আলী‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে মামলা নিতে পুলিশের গড়িমশি : থানা পুলিশকে মামলা নিতে নির্দেশ আদালতের

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে