একুশের ডায়েরি -বিপ্লব কুমার পাল -পর্ব ০৪

0
222

একুশের ডায়েরি

-বিপ্লব কুমার পাল

-পর্ব ০৪

একুশে টেলিভিশনের বোর্ড মিটিং-এ চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়া আরও নতুন পরিকল্পনা করলেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তৈরি করলেন আলাদা বলয়। সেখানে ছিলেন- সিএনই অখিল পোদ্দার, হেড অব ব্রডকাস্ট সুজন দেবনাথ, মার্কেটিং-বিভাগের ফেরদৌস নাঈম পরাগ, অনুষ্ঠান বিভাগের সাইফ আহমেদ। পরাগ তখনও হেড অব মার্কেটিং এর দায়িত্ব পাননি। তবে সেই পথ সুগম করা হচ্ছিলো। কিছুদিন পর মার্কেটিং-এর পুরো দায়িত্ব পেয়ে যান, খুলে যায় কপাল (সেই গল্প অন্য পর্বে)। সেই বলয়ের একজন হয়ে আমিও যুক্ত হতে যাচ্ছি একুশে টেলিভিশনে।

এরইমধ্যে আমার তালিকা দেয়া সাংবাদিকদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় সবার সাথে পীযূষদার সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে উটকো ঝামেলা এসে পড়লো আমার ঘাড়ে। কেন জানি, অনয় মুখার্জীর ওপর প্রচণ্ড রেগে আছেন পীযূষদা। ফোন করে- একগাদা কথা শোনালেন আমাকে। বললেন- “এজন্য তাকে আমি নিতে চাইনি। তোমার কথায় তাকে চাকরি দিয়ে আমার সমস্যা বেড়েছে।” আমি বললাম, সে কি এমন করেছে? দাদা উচ্চ কণ্ঠে বলতে শুরু করলেন, “আমার রুমের সামনে টেবিলে বসে ভাত খায়; দেবাশীষের সাথে আড্ডা দেয়, খাবার খায়; যার তার সাথে আমার নাম নিয়ে প্রভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা করে; সবখানে সে নাক গলায়।” দীর্ঘক্ষণ দাদার কথা শুনলাম। আমি বললাম, আমি অনয়ের সাথে কথা বলছি দাদা। অভিযোগগুলা অনয়কে জানালাম। সে সব কিছু অস্বীকার করলো।

অনয় সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করেছে। সম্প্রীতি বাংলাদেশ সংগঠন করতে গিয়ে তার সাথে পরিচয়। পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতো। পীযূষদার পিএস হতে চেয়েছিল অনয়। দাদাকে তাতেই রাজি করিয়েছিলাম। পিএসের সাথে অনয়ের পদবীতে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট জুড়ে দিতে বলেছিলাম; যাতে সে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে তৈরি করতে পারে। দাদা সেটিও দিয়েছিলেন।

পীযূষদার কাছাকাছি অন্য কেউ থাকুক সেই চায়নি সুজন-অখিল-সাইফ-পরাগ সিন্ডিকেট। সে কারণে অনয়ের বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। এর মোক্ষম অস্ত্র হলো দেবাশীষ রায়ের নামটি জড়ানো। দাদা তখন দেবাশীষকে অন্যতম শক্র বলে মনে করেন। আর এই সুযোগটি নিয়েছিল ওই সিন্ডিকেট।

২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি আবার ফোন দিয়ে অনয়কে নিয়ে নানারকম কথা বললেন। তাঁর বাসায় যেতে বললেন বললেন। একাত্তরের অফিস শেষে সন্ধ্যায় চলে গেলাম বনানী ডিওএইচএসের পীযূষদার বাসায়। ড্রইং রুমে বসে আলাপ শুরু হলো দাদার সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যে চা-নাস্তা নিয়ে চলে এলেন বৌদি। এরপর রুদ্র মূর্তি ধারণ করলেন বৌদি। বললেন, অনয় তোমার দাদার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বুঝলাম- একুশের প্রতিটি ঘটনা বৌদির কাছে আসছে। তবে অফিসের কথা দাদা বৌদির সাথে কখনও শেয়ার করেন না। অন্যকেউ কলকাঠি নাড়ছে।

তাদের অনেক কথা শুনলাম। বললাম, পীযূষদার বিরুদ্ধে কেন ষড়যন্ত্র করবে অনয়? বৌদি বললেন, আরো বড় পোস্ট পাবে, সুযোগ-সুবিধা পাবে ইত্যাদি। আমি বললাম, কয়েক মাস মাস হলো চাকরি করছে। দাদা তাকে যথেষ্ট বেতনের ব্যবস্থা করেছেন, সুযোগ-সুবিধা ভালোই দিয়েছেন। তাছাড়া দাদাকে খুব সম্মান করে সে। কোভিডের সময় দাদা যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, তখন এই অনয় সারাক্ষণ থেকেছে। তখন তো কোভিড হয়েছে জানলে ওই বাড়ির আশেপাশে কেউ যেত না। বাবার লাশ ফেলো রাখতো তবুও ছেলেরা ধরতো না।

এমন পরিস্থিতিতে অনয় কিন্তু হাসপাতালে দিনের পর দিন থেকেছে। বৌদিকে বললাম- সেদিন তো আপনার বন্ধু সাইফ আহমেদ কখনও খোঁজ নেয়নি। যেদিন হাসপাতাল থেকে দাদা বাসায় ফিরেন সেদিন সাইফ প্রথম ফোন করে খোঁজ নিয়ে মায়াকান্না করেছিল। আমি বললাম, অনয় ক্ষতিকর নয়। প্রয়োজনে অনয়কে অনলাইনে পাঠিয়ে দিন, সেখানে সে কাজ শিখতে পারবে। চাকরি থেকে বাদ দিলেই কি সব সমস্যা সমাধান হয়? কিছুক্ষণ দু’জনই চুপচাপ। পরিবেশ দেখে বুঝলাম দু’জন কিছুটা শান্ত হয়েছে।

বৌদি এবার প্রসঙ্গ পাল্টালেন। আমাকে বললেন, তোমার দাদা সবার চাকরি দিচ্ছে অথচ আমার ভাইয়ের বেলায় বলছে চেষ্টা করছি। তোমার দাদাকে বলো- আমার ভাইয়ের চাকরি দিতে। দাদা বললেন, তোমার বৌদিকে বোঝাও আমি একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও হতে পারি, তাই বলে নিজের শ্যালককে চাকরি দেয়া যায়না। সত্যিই তো দাদা কীভাবে একুশে টিভিতে নিজের শ্যালককে চাকরি দেন, সবাই তখন বলবে, দেখ নিজের শ্যালককেও চাকরি দিয়েছেন।

আমি তখন বললাম, তাহলে রাজীবকে (দাদার শ্যালক) সম্প্রীতি বাংলাদেশে চাকরি দিয়ে দিন। পীযূষদা বললেন, সেখানে আবু তালেব চাকরি করে, তাকে কিভাবে সরিয়ে দেই? আমি বললাম, তালেবকে একুশে টিভিতে চাকরি দিন, আর ওই জায়গায় রাজীবকে নিয়ে নিন। দাদা কিছুক্ষণ ভাবলেন। আবার বললেন, তালেব কি একুশে টিভিতে যেতে রাজি হবে। আমি বললাম, কেন হবে না! প্রয়োজনে আমি কথা বলছি। দাদা, তালেবের সাথে আমাকে কথা বলতে বললেন। আমি তালেবকে বললাম। শুনেই এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলো তালেব। বললেন, একুশে চাকরি হলে খুব ভালো হয় দাদা। তখন সবাইকে চাকরির পরিচিয় দিতে পারবো, এখন তো পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে!

এভাবে চললো কিছুদিন। অবশেষে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আমাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেয়া হয়। আমার তালিকা থেকে আরও তিনজনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার হয়। সেই সাথে আবু তালেবের চাকরি হয় প্রশাসন ও মানব সম্পদ বিভাগে।

চলবে

বাকি অংশ, পর্ব -৫ এ

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

Advertisement
উৎসBiplob Kumar Paul
পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান শিক্ষককে হুমকি ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
পরবর্তী নিবন্ধনিউইয়র্কে মাসিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে