“এসো দেশ দেখি” -লুৎফুন নাহার তিথি‘র ভ্রমণ কাহিনী

0
595
www.natorekantho.com

লুৎফুন নাহার তিথি : আজ আমি আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব একটি মসজিদ-এর সাথে। মসজিদটির নাম ‘বাইতুল আমান জামে মসজিদ’ হলেও গুঠিয়া মসজিদ হিসেবেই বেশি পরিচিত এটি। এর স্থাপত্যশৈলী বেশ সুন্দর..!! বর্তামান কালে বাংলাদেশ স্থাপিত নিদর্শনগুলোর মাঝে এটি একটি।

বরিশাল শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বানারীপাড়া সড়কসংলগ্ন উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া গ্রামে এর অবস্থান। বরিশাল-বানারীপাড়া সড়ক ধরে এগুলেই উজিরপুর উপজেলা। সড়কের পাশে গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রাম। এ গ্রামেই আছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সেই বৃহৎ গুঠিয়া মসজিদ (Guthia Baitul Aman Jame Masjid Complex)।

২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু চাংগুরিয়ার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির উপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ এবং ঈদগাহ্ কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন। এই মসজিদের প্রদান আকরষণ এর বৃহৎ মসজিদ-মিনার। মসজিদ লাগোয়া মিনারটির উচ্চতা ১৯৩ ফুট।

আরো আছে ২০ হাজার অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি ঈদগাহ্ ময়দান, এতিমখানা, ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা, লেক-পুকুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুলের গাছ। এর লাইটিং ব্যবস্থাও নাকি বেশ সুন্দর। যদিও আমাদের দেখার সৌভাগ্য হয় নি।

জানা যায়, এটির নির্মাণ কাজে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক কাজ করেছে। কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশপথের ডানে বড় পুকুর। পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদ। মসজিদের স্তম্ভটি বিশ্বের বিভিন্ন পবিত্র স্থানের মাটি ও জমজম এর পানি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

যেসব স্থান থেকে মাটি সংগৃহীত হয়েছে সেগুলো হলো কাবা শরীফ, আরাফাহ এর ময়দান, মুযদালিফাহ, ময়দানে মিনা, জাবালে নূর পাহাড়, জাবালে সূর পাহাড়, জাবালে রহমত পাহাড়, নবীজীর জন্মস্থান, মা হাওয়া এর কবরস্থান, মসজিদে রহমত, মসজিদ এ কু’বা, ওহুদের যুদ্ধের ময়দান, হযরত হামজা (রাঃ) এর মাজার, মসজিদে আল কিবলাতাইন, মসজিদে হযরত আবু বক্কর (রাঃ), জান্নাতুল বাকী, মসজিদে নববী, জুলহুলাইফা-মিকাত, বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর হাতের লেখা তাবিজ ও মাজারে পাওয়া দুটি পয়সা এবং হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর মাজারের মাটি।

তবে মূল মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার আছে কিনা জানি না। কারণ সে চেষ্টাটা করিনি আর।
সবচেয়ে আমার যেটি বেশি ভালো লেগেছে, তা হলো মসজিদ সংলগ্ন খোলা জায়গা, নার্সারি, আশপাশের গাছপালা ও ফুলের বাগান। এগুলোর যে যত্নআত্তি ভালোই হয়, এটা বেশ বোঝা গেলো। বেশ কিছু নতুন গাছও নজরে এলো। প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও গাছ পাগল কন্যা বলে তোয়াক্কা করি নি।দেখে এসেছি তাদেরও।

তবে একটি খারাপ লাগার বিষয়ও আছে। যদিও আমি নিয়মটি মানি নি। তাহলো-একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল মসজিদের পুকুর ঘাটে নারীদের প্রবেশ নিষেধ। এতোদিন শুনেছি মসজিদে, গোরস্থানে নারীদের প্রবেশ নিষেধ। এবার এখানেে দেখলাম মসজিদের পুকুর ঘাটও নারীর জন্য নিষিদ্ধ।

অথচ সেখানে কুকুর বিড়ালের অবাধ বিচরণ। মনে প্রশ্ন জাগলো.. হায় বিধাতা..!! নারীরা কি কুকুরের চেয়েও অধম..!!! আল্লাহ কাবা শরীফেই তো নারীদেরকে প্রবেশ এবং ছুঁয়ে দেখার অনুমতি দিয়েছেন, তাহলে একটা মসজিদে এই নিয়ম কেন..??

বরং মসজিদের একটা অংশে নারীদের নামাজে ব্যবস্থা রাখা গেলে ভালো হতো..!!
থাকতেও পারে। আসলে প্রবেশ মূহুর্তে ওই সাইনবোর্ড দেখে মসজিদে নামাজ পড়ার ইচ্ছেটা হারিয়ে গিয়েছিল। মসজিদের ভিতরটাও দেখতে যাই নি আর..!! কী দরকার মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করার। গেলে একেবারে কাবাশরীফেই যাব..!!

তাই নামাজের জায়গা আছে কিনা খোঁজ নেওয়া আর হয়ে ওঠে নি। তবে সব মিলিয়ে খারাপ কাটেনি সময়টা..!! দেশে এমন স্থাপত্যে শিল্প তৈরি হওয়া দরকার। নারীরা না হোক পুরুষরা তো সুন্দর পরিবেশে ইবাদতের সুযোগ পাচ্ছে। তাও বা কম কী..!! কিছু মানুষের মনে অন্তত প্রশান্তি আসুক।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধএমএ পাস করেও তিনি হোটেলে থালাবাসন ধোয়ার কাজ করেন……….
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্না মিত্র’র ‘এমন যদি সত্যি হত’ -সমরজিৎ সিংহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে