কবি কাজী জুবেরী মোস্তাক‘এর ছ‘টি কবিতা

0
187
Kazi Zuberi Mostak

অসহায় আমজনতা

কাজী জুবেরী মোস্তাক

তিনি আসলেন ; হ্যাঁ তিনি আবার আসলেন
যিনি পাঁচবছর আগে একবারই এসেছিলেন ,
সাদা পাঞ্জাবী পড়ে ; যাদুর কাঠি হাতে নিয়ে
বৈষম্যের সমাজ বদলের সু-দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ৷
সন্তানহারা পিতাকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন
সুষ্ঠ বিচার পাইয়ে দেয়ার কথা দিয়েছিলেন ,
অথচ;সেই খুনি তার খুব কাছের চেনাজানা
মাঝে মধ্যে একটেবিলেও দু’জনে খায় খানা ৷
সেদিন তিনি যে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন
সে কথাগুলো গত পাঁচ বছরে ভুলেই গেছেন ,
এবারও এলেন নতুন স্বপ্নের ইশতেহার নিয়ে
স্বপ্ন পুরনের স্বপ্ন দেখালেন মাথায় হাত ছুঁয়ে ৷
রাজনীতি মানে আজ শুধু ক্ষমতার মাদকতা
মুখে যার আমজনতার রক্ত সেই আজ নেতা ,
এখানে কেউ মুখ খোলেনা চলেছে গা বাঁচিয়ে
নেতাই সব লুটেপুটে খায় জনতা থাকে চেয়ে ৷
চেতনাই আজ পূঁজি সবার রাজনীতির মাঠে
ভিখারীর বেশে নেতা ঘুরে জনতার চৌকাঠে ,
আমজনতাও ঠিকই সেদিন বুঝবে তার ভুল
ভোটের শেষে নেতাই যখন দেখাবে বৃদ্ধাঙ্গুল ৷

 

চাওয়া

কাজী জুবেরী মোস্তাক

আমি তোমাকে ছুঁতে চাই ;
তোমাকে দেখে মুগ্ধ হতে চাই ।
আমি তোমাকে জানতেও চাই ;
তোমাকে মুখস্থ করতে চাই ।
আমি তোমাকে উপহারেও চাই;
এবং ভালোবাসতেও চাই।
আমি তোমাকে নষ্ট করতে চাই ;
কি নষ্ট হবে নৈমিত্তিক কথোপকথনে?

চিৎকার হবো

কাজী জুবেরী মোস্তাক

আমি ঘন্টা ধ্বনির চিৎকার হবো ,
ইসরাফিলের বাঁশির আওয়াজে ধ্বংস-যজ্ঞ হবো ;
এ সমাজে পাপের সাম্রাজ্য ভেঙে চুরমার করবো
পুরোনো শহরের বুক চিরে আগামী হয়ে জন্মাবো ।
আমি ঘন্টা ধ্বনির চিৎকার হবো ,
নির্যাতিতের ক্রোধাগ্নি নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে জ্বলবো ;
আমজনতার মিছিল নিয়ে রাজপথের দখল নেবো
আমি চে’র মতো শপথ নেবো মরবো নাহয় বাঁচবো ।
আমি ঘন্টা ধ্বনির চিৎকার হবো ,
মানুষ রুপী অমানুষ ধ্বংস করে তবেই ক্ষান্ত হবো ;
আমি নিয়ম করে নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম গড়বো
আমি নিয়মিত হত্যা হলেও নতুন গর্ভে জন্ম নেবো ।
আমি ঘন্টা ধ্বনির চিৎকার হবো ,
আমি নির্ঘুমই থাকবো পৃথিবীর অতন্দ্র প্রহরী হবো ;
ধর্ম বর্ণ বিদ্বেষ ভুলে মানুষের কাতারেই বেঁচে রবো

দুঃখবাজ

কাজী জুবেরী মোস্তাক

আমার চারপাশে অজস্র দুঃখ লুটোপুটি খেলছে
সাগরের বালুচরে যেমন নূড়িপাথররা পড়ে থাকে ,
কেউ আনমনে হেঁটেও চলে যায় দু’পায়ে মারিয়ে
কেউবা আবার তা কুরিয়েও নেয় অতি যত্ন করে ।
চাতকপাখিরা যেমন নদী তীরে মরে পড়ে থাকে
বৃষ্টি জলের আশায় আকাশপানেই চেয়ে থেকে ,
আমার চারপাশেও অজস্র স্বপ্ন মরে পড়ে আছে
একটা চাকরী না পাওয়ার দুঃখ আর হতাশাতে ।
তোমাদের মুঠোফোনে যেমন খুঁদে বার্তারা জমে
আমার মনপাড়াতে তেমনি দুঃখ আর কষ্ট জমে ,
খুঁদেবার্তার মতো করেই তা অনাদরে পড়ে থাকে
অযত্ন অবহেলায় কেউ পড়েই দেখেনা আমাকে ।
আমিও কেমন যেন দুঃখজীবি হয়ে বেঁচে আছি
দুঃখগুলো যে ঘরের ছাদও ছুঁয়েছে তবুও আছি ,
কোন একদিন দুঃখচাপা পড়ে মারা যাবো আমি
কেউ তা জানবে না ; যে জানবে সেতো শুধু তুমি ।

মুখোশ

কাজী জুবেরী মোস্তাক

অনেকটা পথ হেঁটে চলেছি পৃথিবীর বুকে
আদিম পেরিয়ে আজ এসেছি সভ্য নগরে ,
কালের বিবর্তনে নাকি ওরা সভ্য হয়েছে
অথচ সভ্যতার লেশ মাত্র পাইনি খুঁজে ৷
নগড় জুরে অট্টালিকায় সমাজ অাজ সভ্য
বড় বড় মিল কারখানায় বাতাস দূরভেদ্য ,
মনের ভেতরে ক্লেশে ক্লেশে আজও জরাজীর্ন
মুমুর্ষ মানবতা icu তে বন্দী বাঁচার আশা ক্ষীন ৷
সভ্যতার সাথে অন্যায়,নির্যাতন,হানাহানি দেখে
বিবেক আজ মুখ লুকোয় কপাটের আরালে ,
এই সভ্যতার মুখোশে আজ অসভ্যরাও ঘুরে
মুখোশে সবাই ওদের মানুষ ভেবেই ভুল করে ৷
শহরজুরে অট্টালিকা আর বিষাক্ত কালো ধোঁয়া
কান পাতলে শোনা যায় গুমরে কাঁদে হতাশা ,
দুঃখ কষ্ট গুমরে গুমরে কাঁদে দরজার ওপাশে
এপাশে মুখোশে সভ্যতাও সুখের সওদা করে ৷
কেউ এখানে বিশাদ লুকোয় মদের বোতলে
কেউবা আবার মজা লুটতে ভীড় করে এখানে ,
আসলে সবাই আমরা এক মুখোশের আরালে
এই মানুষের মুখেই বাস হাজারো মুখোশের ৷

ওদের বলে দিও

কাজী জুবেরী মোস্তাক

ওরা জানেইনা যে আমার মৃত্যু নেই ;
ওদের বলে দাও ;
ওদের লাঠির আঘাতে আমি ইতিহাস হবো ।
ওরা জানেইনা আমার শক্তির উৎস ;
ওদের বলে দাও ;
ওদের প্রতিটি আঘাতে যে আমি শক্তি পাই ।
ওরা জানেইনা আমিও আগ্নেয়গিরি ;
ওদের বলে দাও ;
একবার জ্বলে উঠলে ওরা ধ্বংস হয়ে যাবে ।
ওরা জানেইনা আমি যে বেঁচে আছি ;
ওদের বলে দাও ;
প্রতিটি নব প্রজন্ম মাঝে আমি বেঁচে থাকি ।
ওরা জানেইনা আমার কি পরিচয় ;
ওদের বলে দাও ;
প্রতিটি নির্যাতিত মানুষই আমার আত্মীয় ।
ওরা জানেইনা আমার দেশ নেই ;
ওদের বলে দাও ;
শান্তি ও বিজয়ের পতাকায় আমি থাকবো ।

Advertisement
উৎসKazi Zuberi Mostak
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে ৩১ দেশের ৭১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধক্ষয়িষ্ণু ক্ষণ -সাফিয়া খন্দকার রেখা‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে