কবি গোলাম কবির‘এর ছ‘টি কবিতা

0
166
Golam Kabir

আহা, মানুষ কোথায় দেখছো

কবি গোলাম কবির

আহা, মানুষ কোথায় দেখছো?
এখানে কেউ নেই!
এই বুকের মধ্যে এখন
গোপনে বাস করছে পরিত্যক্ত বধ্যভূমির
খাঁখাঁ শূন্যতার মাঝে শকুন এবং
শেয়ালের আধিভৌতিক চিৎকার এবং
দোর্দণ্ড প্রতাপে আনাগোনা।
এখানে এখন কোনো ভালবাসা নেই,
কুলকুল করে বয়ে চলা নদী নেই,
নেই কোনো চন্দ্রালোকিত রাত্রিতে
ভীষণ মোহনীয় বেঁচে থাকার আকুলতা!
শুধুই শোনা যায় থেকে থেকে বোমাবর্ষণের
আওয়াজে অসহায় ভয়ার্ত মানুষের
চিৎকার ও আহাজারি, শিশুদের না খেতে
পারার কষ্টের কান্না মিইয়ে এসে
একটা অদ্ভুত শব্দের উদ্বোধনে দখলদার
বাহিনীর সেনানায়কের অট্টহাসিতে
ফেটে পড়ায় মাতৃদুগ্ধ পানরত শিশুর
সজোরে কান্নার শব্দে আকাশের বুক চিরে
নামা প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট অকাল বন্যা।
এতো কিছুর পরও এখানে কোনো
মানুষ নেই, আছে শুধুই লোকালয়ের
ধ্বংসস্তুপের মাঝে কতোগুলো মানুষরূপী
পশুর দল সিরিয়ায়, ফিলিস্তিনে, ইয়েমেনে,
ইউক্রেন এবং পৃথিবীর যুদ্ধরত সমস্ত দেশে!

দোহাই আপনাদের

কবি গোলাম কবির

দোহাই আপনাদের,
দোহাই মহান সৃষ্টিকর্তার!
আমি আর কোনো পুরষ্কার কিংবা ক্রেস্ট
পেতে চাইনা এই মহান তেলেমারার দেশে!
দয়া করে আমার গলায়ও ঝুলিয়ে
দেবেন না গরুর মালার মতো
কোনো মেডেল, দোহাই আপনাদের,
আমার ভালবাসার দোহাই!
দোহাই আমার প্রিয় নদীটিরও দিলাম!
তেলমারার এবং দূর্নীতির ভীষণ
প্রতিযোগিতার এই দেশে ভবিষ্যতেও
কোনো পদক, উপাধি কিংবা কোনো
নামেই ভূষিত করবেন না আমাকে!
দয়া করে আমাকে ঠিক আকিকা করে
পিতামাতার দেয়া নাম ধরেই ডাকুন,
আমি ধন্য হবো, আমি তাতেই খুশিতে
উদ্বেলিত হবো! দয়া করে এই তেলমারার
অতি উর্বর সবুজের দেশে আর কারো
ক্ষতি করবেন না, প্লিজ! দোহাই আপনাদের !

আমার প্রিয় অসুখ

কবি গোলাম কবির

আমার প্রিয় অসুখের নাম, তুমি!
তুমি নামের এই অসুখ থাকুক আমৃত্যু,
অসুখটার তীব্রতা ক্রমেই বাড়তে থাকুক
সারাটা শরীর থেকে হৃদয়ের অলিন্দে,
তারপর শ্বাসের মধ্যে ছড়িয়ে যাক,
এমনকি জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের
মধ্যেও প্রকাশ পাক এই প্রিয় অসুখ আমার!
আমার সকল হর্ষ বিষাদের ছায়ায় লেপ্টে
থাকুক সর্বদাই এই অসুখের অনুভব,
আমার চোখের আলোয়,
থাকুক আমার বিরহের দীর্ঘতম নদীর
উপচে পড়া ঢেউয়ে সৃষ্ট তীরের ভাঙনের
পলিমাটিতে গজিয়ে ওঠা সবুজ ফসলের বুকে,
থাকুক আমার বুকের মধ্যে নিভৃতে যতনে
তোমাকে না পাওয়ার কষ্টে ঝরতে থাকা
অবিরাম শ্রাবণ ধারাপাতে,
এভাবেই সকল সময়ই থাকো
আমার সঙ্গে প্রিয় অসুখ আমার!

একটি প্রস্তাবনা

কবি গোলাম কবির

অনেক ভেবে দেখেছি মানুষ
নামটি কি এখন আর মানুষ কে মানায়?
পাইনি ভেবে কুল কিনারা তার।
এখনো আমি খুঁজছি সে নামের স্বার্থকতা!
দেখলাম, এখন আর মানুষ
কোন সভ্য জাতির নাম নয়!
হয়তো বা একদা পৃথিবীতে মানুষ ছিলো।
ক্রমহ্রাস হতে হতে মানুষের সুকুমার বৃত্তি
গুলো প্রায় মিলিয়ে গিয়ে এখন পুষ্প পল্লবে
ছেয়ে গেছে আগাছার মতো মানুষের পশু বৃত্তি!
মানুষেরা এখন আর মানুষ নাই!
ওরা এই নামটি ধারণ করার যোগ্যতা হারিয়েছে,
তাই এই নামটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে
যুৎসই শব্দ ব্যবহার করা হোক!

আরো একটি তুমি বিষয়ক কবিতা

কবি গোলাম কবির

আমার বুকের মধ্যে তুমি নামের
যে নিরন্তর ঘণ্টা বাজছে, তুমিও জানো তা!
তবু কেনো যে মাঝেমাঝে মনেহয়
আমি একা, ভীষণ একা!
এ নিশ্চয়ই আমারই
একান্ত অক্ষমতার জন্য।
আমার ভালবাসার শূন্য থেকে
অসীম শূন্যতার রেখা গুলো
যেখানে এসে মিশে যায়,
সে তুমি প্রভূ আমার, প্রিয় আমার।
গভীর ভালবাসা এসে যখন
বুকের মধ্যে থাকা যতো জমাট অভিমানী
মেঘ থেকে শুরু করে যতোটা ছিলো
অবিশ্বাস ও ঘৃণা সবকিছু মুছে গিয়ে
তুমি নামের কী এক অপার্থিব ভালবাসায়
হৃদয়ের আকুলতা হয়ে অকুল সমুদ্দুর
হলো চোখের নদী সে তো তোমারই জন্য ।
তুমি থাকো সর্বদাই আমার হৃদগহীনে
সবটুকু ভালবাসায় অনেক যত্ন করে
অসামান্য কারুকার্য খচিত মিহিন সেলাই
করা হালকা শীতের কাঁথায়,
থাকো আমার চোখের অদেখা
সকল সৌন্দয্যময় এবং সকল সুবাসিত
অনুভবের গভীরে এক চরম আবেশে
আবেশিত সময়ের ভাঁজে ভাঁজে।

কবিতা দিবসের কবিতা

গোলাম কবির

শুনলাম আজ নাকি কবিতা দিবস?
কবিতার জন্য আবার কোনো
দিবস টিবস লাগে নাকি?
যখনই মাথার মধ্যে কিলবিল করবে
কবিতার পোকা কিংবা যখন
অক্ষর গুলো নানারকমে সাজুগুজু করে
শব্দের রূপ নিয়ে কবি’র চোখে, মনও
মাথার মগজের গভীরে প্রবেশ করবে
অথবা বলা যায় শব্দ গুলো যখন
কোনো ষোড়শী তরুণীর মতো কবি’র
চারপাশে ঘুরঘুর করবে একটা কবিতার
মধ্যেই স্থান খুঁজে পাবার জন্য তখনই
কেবল একটি কবিতা লিখা হতে পারে!
আবার যখনই কোথাও অন্যায়, অত্যাচার,
অবিচার, যুদ্ধ, মহামারী, প্রাকৃতিক দূর্যোগ
ইত্যাদি ঘটবে তখনই কোনো কবি’র
কলম হতে জন্ম নেবে কবিতা!
তারপরও কবিতার জন্য কোনো
নির্দিষ্ট দিবসের দরকার পড়ে কি?
বরং এরচেয়ে বেশি দরকার হতে পারে –
যা এখন নাই সেইসব বিষয়ের ওপর!
যেমন – মানবতা, নৈতিকতা, মানুষের
অপরিকল্পিত ভাবে নগরায়নের ফলে
পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব,
নারীর মর্যাদা ও অধিকার ইত্যাদি বিষয়েই।
তাই, আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি –
কবিতার কোনো নির্দিষ্ট দিবস নেই,
প্রতিটি দিনই কবি’র জন্য কবিতা দিবস।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন
পরবর্তী নিবন্ধসরকারি স্কুলের পুকুর লিজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে