কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ‘এর একগুচ্ছ কবিতা

0
280
Shame Ara Pervin

যদি ভালোবাসতে

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

যদি ভালোবাসতে,
কারো চোখে চোখ রেখে
পারতে কি হাসতে!
যদি ভালোবাসতে,
আর কোন শিহরণে
পারতে কি ভাসতে!
যদি মন বুঝতে,
আর কোন মন কি
কোন দিনও খুঁজতে!

একবার ডেকেই দ্যাখো

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

একবার ডেকেই দ্যাখো,
কেমন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠি
শূককীট-মূককীট এর জীবনচক্র ছেড়ে
ডগমগে প্রজাপতি হয়ে উঠি,
রঙিন ডানা মেলে কেমন মুঠোবন্দী হই।

একবার ডেকেই দ্যাখো,
আজন্ম রাতজাগা চোখে
কেমন এনেদি বিরল ঘুম,
ঝলমলে ভোরে শিশিরের আয়নায় দেখায় টলটলে দিন।

একবার ডেকেই দ্যাখো,
মুমূর্ষু দেবদারুর মত দাঁড়িয়ে থাকা জীবনে কেমন ক্লোরোফিল ছড়িয়েদি,
সালোক-সংশ্লেষণে জাগিয়ে তুলি হরিৎ হৃদয়।

একবার ডেকেই দ্যাখো,
পুঞ্জীভূত মেঘমালা থেকে কেমন বৃষ্টিবতী হয়ে ঝরে পড়ি তোমার উষর জীবনে,
রঙে- রসে সারিয়েদি পুরাতন সব ক্ষত।

অতঃপর

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

একটু একটু করে সরে যাচ্ছে মেঘ,
দেহের আলস্য সরিয়ে হেসে উঠছে আকাশ।
বহুকাল অন্ধের মত অন্ধকারে হেঁটেছি একা,
আকাশের কাছ থেকে আবেগ ধার নিয়ে
এবার ভিজবো মায়াবী আলোর ধারায়,
অথবা কোন বিরলতম জ্যোৎস্নায়।
জীবন মানে তো উত্তাপ বুঝে নেওয়া;
চারিদিকে মনের সুবাস,
একটু একটু করে ঘনীভূত হচ্ছে প্রেম,
একটু–
একটু–
একটু করে।

হাতছানি

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

মায়াবী হাতছানি,
ভিজবার প্ররোচনা
বৃষ্টি!
অথচ আমি যে বৃষ্টি বুঝি না,
আকাশের রং বুঝি না
বাতাসের ঢং বুঝি না
মাটির ঘ্রাণ বুঝি না
বৃষ্টির সুর বুঝি না
জলের স্পর্শ বুঝি না
ভিজবার শিহরণ বুঝি না
আমি যে বৃষ্টি বুঝি না।
চোখ বুঝি না
মন বুঝি না
বৃষ্টি বুঝি না
আমি যে কবিতাও বুঝি না।

আষাঢ়

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

কখনও তুমুল বৃষ্টির গান
কখনও রোদের ঝলমলে শান,
কখনও উদাস আকাশ-
মুখ করে রাখে ভার,
এর নাম-ই কি আষাঢ়?

কখনোই ফিরবো না

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

জ্যোৎস্নার প্রস্রবণে যদি ভেসে যায় জমাট অন্ধকার ;
পাখির পালকে করে হাওয়ায় যদি ভাসিয়ে দাও আহ্বান,
তোমার আঙুলের ডগা থেকে যদি কবিতায় ঝরে পড়ে শব্দ-তরঙ্গ,
সড়কের বুকে খোদাই করে যদি লিখে রাখো তোমার অভিব্যক্তি
তবু আমি ফিরবো না।
যত খুশী ডাকো;
যত ভাবেই ডাকো,
আমি আর ফিরবো না।
ঢেউয়ের দোলায় যদি দুলতে থাকে তোমার চোখের জল;
মিহি সিলিকনে মিশে যায় তোমার দুঃখের রঙ,
যদি একা থাকো
তবুও আমি ফিরবো না।
ওয়াইন-শপে টাকিলার গ্লাস আর মুঠোবন্দী লেবুর রসে যদি ডুবে যাও
তবু ভালো থেকো,
আমি আর ফিরবো না।
ইজেলে টাঙিয়ে দাও জীবনের ক্যানভাস;
তুলির টানে এঁকে যাও পিছনের স্মৃতি,
ফুটে উঠবে এক কাকতাড়ুয়ার ছবি
তোমারই প্রতিচ্ছবি—-
যার ভয়ে পালিয়ে গেছে জীবনের মনোরম সন্ধ্যা,
ক্রুর -হাসিতে নিভে গেছে ল্যাম্পপোস্টের সব মোহনীয় বাতি।
উপেক্ষার ব্যান্ডেজে মোড়ানো ক্ষত আজও যা তরতাজা–
তার ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে জং ধরা পেরেকে।
প্রণয় সংকলনে মুদ্রণের অপেক্ষায় না থেকে মুক্ত করে দাও মুঠোবন্দী প্রজাপতি–
আমি আর কখনোই ফিরবো না।

নিদারুণ ফাঁকি

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

খাঁচার ভিতর আটকে রেখে
আদর করে নাম দিয়েছো পাখি,
উদার আকাশ–
মুক্ত জমিন–
সবই ছিল কথার কথা,
নিদারুণ এক ফাঁকি।

অন্তঃপুরে

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

মাঝে মাঝে মনে হয় তুলেনি সকল নিষেধাজ্ঞা;
ভেঙে ফেলি বাঁধার প্রাচীর,
খুলেদি দখিণের জানালা।
একটু রোদ আসুক–
অন্তঃপুরেের প্রগাঢ় অন্ধকার কেটে কেটে খচিত হোক আলোর উপাখ্যান,
ফুটে উঠুক দুপুরের রূপ।
একটু বাতাস আসুক–
কুচি কুচি দীর্ঘশ্বাস ;
অন্তরের আনাচকানাচে ফুঁটে থাকা ব্যথার ফুল,
ফিনফিনে বাতাসে উড়ে যাক।
একটি পাখি এসে বসুক জানালার কোণে,
মনের আলস্য ছড়িয়ে মিশে যাই পাখির গানের শব্দ -ভরা রূপে।
একটু বৃষ্টি আসুক–
মেঘের কাছ থেকে আবেগ নিয়ে ধূয়ে দিক
জানালার শার্শিতে জমে থাকা অশ্রুর কুয়াশা,
বৃষ্টির শীতল পরশ লৌকিক রাতে চোখে এনে দিক স্বপ্ন -ভরা ঘুম।
যতবার ভাবনার সাথে সঙ্গ দিতে চাই;
অবিশ্বাসের দৈত্য থাবা মেলে এগিয়ে আসে,
আমার ইচ্ছেরা শীর্ণ হয়ে পড়ে থাকে
অন্তরের অন্তঃপুরে।

অণুজীব

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

এইসব রুগ্ন-দিন একদিন হারিয়ে যাবে অতীতের গল্পে,
ইচ্ছায় – অনিচ্ছায় পৃথিবী তুলে নেবে সকল পর্দা।
বুনো ষাঁড়ের মত আবার ছুটবে জীবন;
ইচ্ছেদের গজাবে ডাল-পালা,
মানুষ নিবিড় হবে বৃক্ষের মত।
বারবনিতার ঘরে আবার জমবে আসর,
আবার আগুন- আগুন খেলা!
আবার কোলাহল,
সার্কাসের জীবন,
ভিতরে ফোঁসফোঁস, বাইরে শামুকের মত শক্ত আবরণ তুলে বেঁচে-বর্তে থাকা,
আহা কী জাদুকরী জীবন!
শব্দহীন কান্নারাও চলে যাবে মৃতদের সাথে,
জীবনকে নিরাপদ ভেবে যারা বেঁচে যাবে-
তারা দেখবে সর্দি- জ্বরের উপসর্গে নুয়ে পড়তে কবিতা, গল্প আর ইতিহাসের পাতা।
যুগে- যুগে শুনবে খচ্চরের মুখে অণুজীবকে পরাস্ত করা বীরত্বের কথা।

আশায়

কবি শামীয়ারা পারভীন দীপ

যাকে নিয়ে কোন গল্প নেই,
নিদেনপক্ষে যার কোন নাম-ই নেই;
সে-ও মাঝে-মাঝে নিষেধের দুর্ভেদ্য- প্রাচীর ভেঙ্গে উঁকি দেয় করোটিতে,
যেন বিষন্ন আকাশে মেঘ জমে-জমে তৈরী মুখাবয়ব!
জগতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেয় অর্ধপোড়া মনের কথা, প্রেম ও প্রলয়ের কথা!
চাঁদকে বুকে পাবার আশায় যার নাম-ই মনে নেই;
আজ সে শোনায় মরা কার্তিকের পর ভরা অগ্রহায়ণের কথা,
জবুথবু মাঘের পর চপল বসন্তের কথা।
বেদনার বুক চিরে উঠে আসা এসব শব্দ-
কাঁধ থেকে নামিয়ে দেয় তামাটে দিনের ভার,
মেতে উঠি বসন্তের হলুদাভ আভায়,
গ্রীবা উঁচিয়ে দাঁড়াই ভালোবাসার আশায়।

দুর্ভেদ্য, অগ্রহায়ণ, মেতে ওঠা,তামাটে,স্কন্ধে,মাঘ,নিদেনপক্ষে, হলুদাভ, করোটি,মুখাবয়ব এই শব্দ গুলি নিয়ে কবিতা লেখার চ্যালেঞ্জ। স্কন্ধে শব্দটিকে আমি শুধু বদলে দিয়েছি,কবিতায় ব্যবহার করতে কেমন যেন খটখটে লাগছিল।

Advertisement
উৎসShame Ara Pervin
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে অবৈধ সুতি জাল উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধবন্যার কারণে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইনে যান চলাচলে গতি নিয়ন্ত্রণ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে