“কাদেরের দ্বীপ” শাহিনা রঞ্জু‘এর ভ্রমণ কাহিনী

0
744
www.natorekantho.com

শাহিনা রঞ্জু : সূর্যোদয় দেখে এসে ছোটবাবু টুম্পাকে ঘুম থেকে তুললাম। এর মধ্যে পাশের রুমে স্যার আর ভাবীর আওয়াজ পেলাম। সকালের নাস্তা খেতে হবে আর সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা ছেড়া দ্বীপ যাচ্ছি কিনা। মূলত ভাবী আর ছোটবাবুর সুস্থতার উপর নির্ভর করবে যে আমরা পরবর্তীতে কী করবো।

আমি ভাবীদের রুমে দরজা নক করছিলাম। একটুপর ভাবী এসে দরজা খুলে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন যে তিনি জবাব দিচ্ছিলেন কিন্তু তার গলার অবস্থা এত খারাপ যে আমি শুনতে পাইনি। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই ভাবীর শরীর এত খারাপ অবস্থায় আমাদের আর মুভ করা হচ্ছেনা।

তাও একবার জিজ্ঞেস করলাম ভাবী ছেড়া দ্বীপে যাবেন?
ভাবী- না আপা আমি যাবোনা আপনারা ঘুরে আসেন। ( খুব কষ্ট করে বললেন)
আমি মনে মনে ঠিক করলাম স্যারকে বলবো “স্যার ভাবীর শরীর ভালোনা আমরা বাকি অংশটা বাদ দেই।

এখানে বাকি সময় সমুদ্র সৈকতে কাটিয়ে দেই”। তবে আমাদের জন্য আজ সকালের নাস্তায় খিচুড়ি আর ডিম ভুনা ছিল। কুটিরগুলোর পশ্চিম দিকে সাগরের ধারটায় একটা রান্নাঘর ছিল এবং একটা খাওয়ার ঘর ছিল। সম্পা খবর নিয়ে এল খাবার রেডি আমাদের খেতে যেতে হবে।

www.natorekantho.com

ইতমধ্যে শেখ মুজিব সার রুম খুলে বেরিয়ে এলেন। আমি তাকে কিছু জিগেস করার আগেই বললেন – “শাহিনা আমরা ছেড়া দ্বীপে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নাও।
স্যার ভাবি তো অসুস্থ্য কীভাবে যাবেন?

তোমার ভাবী এখন গরম পানির একটা শাওয়ার নেবে এবং নাস্তা খাবে দেখবে কিছুটা সুস্থ হয়ে গেছে।
ঠিক আছে স্যার চলেন নাস্তা খাই।
আমরা সবাই মিলে নাস্তা খেতে গেলাম। স্বভাবত ভাবীর ভাল করে খাওয়া হলোনা।
স্যার ভাবী শাওয়ার নিক এই ফাঁকে আমি একটু বীচ থেকে ঘুরে আসি।
ঠিক আছে দেরী করনা।

আমরা চারজন মিলে বীচে গেলাম। প্রবাল পাথরের উপর দিয়ে হেটে হেটে যেখানে ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছিল সে পর্যন্ত গিয়ে বসলাম। সাগরের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম -হে সাগর তুমি এভাবেই চলবে কিন্তু আমি মরে যাবো, কত দূর্ভাগা আমি তুমি ভেবে দেখো!

অমনি একটা ঢেউ আমাকে একটু ভিজিয়ে দিয়ে গেল। মনে হলো আমার কথা শুনতে পেয়েছে। আমার দুচোখ জলে ভরে গেল। মনে সমুদ্রের বিরহে আমি কাঁদছি। একটা ছোট ছেলে একটা ডাব স্ট্র সহ নিয়ে এসে বললো – আফা ডাব খান
কে পাঠিয়েছে?

আফা ঐ দোকান থেকে এক লোক পাঠিয়েছে।
বুঝলাম শাহিন পাঠিয়েছে। সে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের স্টাফ। আমি ডাবের পানিটা খাচ্ছি এমন সময় খবর এলো দ্রুত যেতে হবে নাহলে আমরা সময়মমত টেকনাফ যাওয়ার জাহাজ ধরতে পারবোনা। তাড়াতাড়ি ডাব শেষ করে এলাম।

এসে শুনলাম রুম ছেড়ে দিতে হবে নাহলে পুরো একদিনের ভাড়া দিতে হবে। কারন একটু পরই যারা টেকনাফ থেকে আসবে তাদের কারো কারো কাছে রুম বুক করা হয়ে গেছে। এদিকে আজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। ছোটবাবু আগে থেকেই আড়ং থেকে বাসন্তী রঙ শাড়ি কিনেছে পরবে বলে।

www.natorekantho.com

যখনি সে শুনলো রুম ছাড়তে হবে সে বললো -” আমাকে শাড়ি পরতে না দিলে আমি সেন্ট মার্টিন্সে থেকে যাবো।” আমি অনেক বুঝালাম যে আমরা হাসপাতালের কোয়ার্টারের কোন এক জায়গায় শাড়ি পরে নেবো। কাদের বললো তার খুব সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে শাড়িতো পরা যাবেই।

আরো আছে তার মেয়ে যে পার্লারের মত করে সাজিয়ে দেবে। এতসব কনভিন্সিং কথাবার্তা শুনে ছোটবাবু শেষমেশ রাজী হলো। আমরা দ্রুত ভ্যানে উঠে রওয়ানা দিলাম।

প্রথমে যাব হাসপাতালের কোয়ার্টারে সেখানে ব্যাগপত্র রেখে স্টেশনে গিয়ে ট্রলারে উঠতে হবে। আমরা ভ্যানে করে হাসপাতালে পৌঁছলাম। ব্যাগগুলো রেখেই আবার রওয়ানা দিলাম। রাস্তায় মসজিদে সাহায্য কামনা করে উচ্চঘরে যে কথা হচ্ছিল তা ছিলো খুবই হাস্যকর ও বিরক্তিকর।

আমরা ভ্যান থেকে নেমে সবজান্তা কাদেরকে দেখলাম দৌড়াদৌড়ি করে ভাল স্পিড বোটে টিকেট কাটার ব্যবস্থা করছে। আমি আর ভাবী দুজনই বললাম যে আমাদের স্পিড বোটে যেয়ে ভয় লাগছে। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনলোনা। ওখানে দু ধরনের স্পিড বোট আছে এর মধ্যে যেটা বড় তার একটা ভারা করলো।

আমরা ছিলাম ১০ জন। রেজাউল, শাহিন, জামাল আর সবজান্তা কাদের। শেখ মুজিব স্যার একটা দুরবর্তী দ্বীপের নাম দিলেন কাদেরের দ্বীপ।

কাদেরের দ্বীপ
১৫/২/২০২০

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“সমুদ্রে সূর্যোদয়” শাহিনা রঞ্জু‘এর ভ্রমণ কাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধ“ছেড়া দ্বীপ” শাহিনা রঞ্জু‘এর ভ্রমণ কাহিনী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে