কালঘুম -কবি মাহফুজা আরা পলক‘এর কবিতা

0
203
Mahfuza Polok

কালঘুম

কবি মাহফুজা আরা পলক

আবার আইল আষাইঢ়্যা মাস
আসমান জুইড়া মেঘেরা ডাকপারে,
জমিলা বিবি ভীত হইয়া তার জীর্ণ
ভিটার নড়বড়ে খুঁটি খান
শীর্ণ হাতে শক্ত কইরা আঁকড়াইয়া ধরে।
ছাই রঙা মেঘ গুলান চিরশত্রুর চাহনিতে
শাসাইয়া যায় আসমান জুইড়া ঘুরতে ঘুরতে,
মেঘ গুলান বিকট শব্দে বাজ ফাটায়!
জমিলা বিবির অন্তরেতে ডর দেহায়,
এই বাদলায় আইল সে সদলবলে।
চরাচর সব ডুইবাছে তাই অথৈজলে,
তার মাথার ছাউনি খানও কাইড়া নিয়া
তছনছ কইরা নিঃস্ব বানায়া যাইব নিশ্চয়,
দূর্যোগের মইধ্যেও নিজেরে নিজেই দেয় অভয়।
ফকফইক্কা দিনে আচম্বিত যখন আন্ধার হইয়া আসে
জমিলা বিবি আসমানের পান চাইয়া ভাবে,
রেহায় নাই এইবার দুষমন মেঘের তান্ডবে!
ঝড়ো রাইতে দুই চোক্ষেতে নাই ঘুম
মৃত্যু ফাঁদ মনে হয় কুঁড়ে ঘরটারে তার,
খানিক বাদেই যেন হাওয়ায় তোড়ে
হুড়মুড়াইয়া হইব কব্বর সবার।
মরলেও এই মাটি গছবনা তারে
ভিটাটাও যে বন্ধকীতে বান্ধা পইড়া আছে।
যে গেছে-
সে-তো কত্তো গুলান মুখ গছাইয়া বাঁইচ্চা গেছে,
তাই ক্ষুধার জ্বালায় জীবিকার তাগিদে সে ঘরছাড়া হইছে।
পাড়াময় ঘুইড়া গতর খাটাইয়া
দুই মুঠো অন্ন ঘরেতে আনে দিনশেষে,
পাঁচ পাঁচখান মুখ অভুক্ত উদরে
পাখির ছানার লাহান হা কইরা
প্রতিটা লোকমার পানে চাইয়া থাকে।
শেষ লোকমাটাও কখনো কখনো
পড়েনা জমিলার পেটে।
ঝড়ের রাইতে কপাটের পরে আওলা বাতাস ডাকে
বালাইষাট!
বুকে থুথু ছিটাইয়াও অন্য কু চিন্তা থাকে মনে,
পাছে চিল,কাউয়া,শিয়াল,
কুত্তায় থাবা বসায় যদি তার বাছাধন গুলারে,
অজানা শঙ্কায় তার দুই চোক্ষে ঘুম আসে না কোন রাইতে।
অভাবের দূর্বল ঘরের ফাঁক দিয়া
কেবল দুষমনি চোখের চাহনির তাক
তীর হইয়া বিঁন্ধে অসহায় সংসারে।
রাইত বাড়ে, নদীতে বান ডাকে
আকাশ-বাতাস কাঁপাইয়া ঝড় উঠে, ঝড় উঠে, ঝড় উঠে!
ঝড়ের দাপটে ঘরের খুঁটি গুলানও নইড়া ওঠে,
উপায়ন্ত না দেইখা সাদা থানের ছিন্ন আঁচল খানি ঢাকা দিয়া
পাঁচ সন্তানের ভীত মনরে আস্বস্ত করে।
এর পর রাত বাড়ে,মেঘ ডাকে,বাজ পড়ে, ঝড় উঠে
বানের তোড়ে সারা গেরাম হরহর কইরা পানিতে ভাসে,
জমিলা বিবির ঘরের সকলের চোক্ষের উপর
আজন্মকালের কাল ঘুম আইসা বসে।

০৮.০৭.২০২১

Advertisement
উৎসMahfuza Polok
পূর্ববর্তী নিবন্ধএকজন সামিন ও বুলিং
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক যাচ্ছে পুকুরে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে