কোভিড-১৯ মহামারীকালীন সময়ে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা কেন? -ভায়লেট হালদার

0
366
Violet Halder
ভায়লেট হালদার : করোনাকালীন সময়ে স্কুল/বিদ্যালয়/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক শ্রেণী পাঠ্য কার্যক্রম পরিচালনা করলে করোনা খুব দ্রুত সংক্রমণের আশংকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা আছে এই মহামারীর সময়ে। কিন্তু কেন? মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কি শিশু নয়? তাদের সংক্রামিত হওয়ার আশংকা নেই?
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ কি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানে সক্ষম হচ্ছে? কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে যে সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কেন দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার? যে কেউ চোখ বন্ধ করেও বলতে পারবেন, মহামারীর সময়ে মাদ্রাসায় কি পরিমাণ ঝুঁকির মধ্যেও পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ চলছে!
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৯৩টি এবং ৬৮৫৫৪টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাক-বিদ্যালয় বা বিদ্যালয়-পূর্ব উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ- কিণ্ডারগার্টেন। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যথেষ্ট নয় এবং অবৈধভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে কিণ্ডারগার্টেন স্কুল। এই অনিবন্ধিত কিণ্ডার গার্টেন সংখ্যা ৭০হাজারেরও অধিক। এছাড়াও অসচেতন ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকগণ সন্তানকে স্কুলমুখী করার জন্য বাড়ির আশেপাশের এসব কিণ্ডারগার্টেন সন্তানকে ভর্তি করিয়ে থাকেন।
মার্চ’ ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত কতগুলো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে? নতুন করে কয়টি নতুন বিদ্যালয় (সাধারণ শিক্ষা) প্রতিষ্ঠা হয়েছে? কতজন শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে? এই ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কি? কতজন শিক্ষক চাকুরী হারিয়ে বেকার হয়ে গেছে? চাকুরী খুইয়ে শিক্ষক’রা পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছে? এ ব্যাপারে সরকারের কোন ভাবনা ও পরিকল্পনা আছে কি?
বাংলাদেশে আলিয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা এবং স্বতন্ত্র মাদ্রাসা নামে এ তিন ধারার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা দেখা যায়। বাংলাদেশে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা কত এটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। নিবন্ধিত মাদ্রাসার থেকে অনিবন্ধিত মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বহুগুণে বেশী। বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (ব্যানবেইস)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯ হাজার ৩১৯টি আলিয়া মাদ্রাসা এবং কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার।
২০০৯ সালে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের এক তারবার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২৩ থেকে ৫৭ হাজার। ২০১৮সালের বাংলা ট্রিবিউনের একটি সংবাদ থেকে জানা যায় যাত্রাবাড়ি থেকে কাঁচপুর অর্থাৎ ৮কিলোমিটারে ৬৮টি মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। তাহলে ২০২০সালে সরকারী ও বেসরকারী বা ব্যক্তি মালিকানায় অনিবন্ধিত মাদ্রাসা সংখ্যা তাহলে কত হতে পারে?
আমরা প্রায়ই পত্রিকার মাধমে দেখি শিশু নির্যাতন চিত্র। মাদ্রাসায় শিশুরা নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ছেলে ও মেয়ে শিশু ধর্ষণ/বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনের পরে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। তবুও ধর্মের নামে, পুণ্য অর্জনের আশায় অসচেতন ও অর্থনৈতিক ভাবে অসমর্থ পিতামাতারা তাদের সন্তানকে এধরণের প্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা গ্রহণের জন্য পাঠাচ্ছে। শিশু নির্যাতন বাংলাদেশে আইনত নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
শিশু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার? লাগামহীনভাবে গড়ে ওঠা মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় কেবলই বাড়ছে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের উপর বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টির কারণেই কি মাদ্রাসা শিক্ষা হরদমে এগিয়ে যাচ্ছে!? ধর্ষণ/বলাৎকার, করোনা সংক্রমণ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের রক্ষায় কি ব্যবস্থা নিয়েছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দীপুমণি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়?
সারা বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত। সকল মানুষ যখন করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে তখনও বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে নেই কোভিড-১৯ মোকাবেলা বিষয়ক সচেতনতা। সাধারণ আর দশটা ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের মতোই বিবেচনা করছে এদেশের বেশীরভাগ জনতা। হাটবাজার, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, যানবাহনে, মার্কেট, শপিংমল সর্বত্রই মানুষে গিজগিজ করে।
বিয়েশাদী, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, ওয়াজ মাহফিল সহ কোন অনুষ্ঠান বাদ যাচ্ছে না এই সময়ে, জনসমাগম হচ্ছে বেশ। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা নিয়মিত বাইরে যাচ্ছে। কেউ কেউ মাস্ক ব্যবহার করলেও বিশাল সংখ্যক মানুষ মাস্ক ছাড়াই বাইরে বের হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না তারা। প্রতি পরিবারে এক বা একাধিক শিশু রয়েছে।
যারা বাইরে গিয়ে ঘরে ফিরছে তারা কি নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, কোভিড সংক্রামিত না হয়ে তিনি ঘরে ফিরেছেন? শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কি শিশুদের এই কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব? করোনাকালীন সময়ে বন্ধ থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেকার হয়ে যাওয়া শিক্ষকবৃন্দদের (পরিবারসহ) অর্ধাহার ও অনাহারী রেখে করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব কি?
Advertisement
উৎসViolet Halder
পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ‘আপোষহীনতার’ পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে- পলক
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবে আলোচনা ও দোয়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে