খোলাবাড়িয়া এবং খামার নামের উৎস সন্ধানে -কামাল খাঁ

0
623
কামাল খাঁ

এক.

কামাল খাঁ : সকল স্থানের নামের পেছনে থাকে আলাদা আলাদা ইতিহাস আর থাকে ব্যাখা ও বিশ্লেষণ।
‘খামার’ নামে যেটুকু মূল গ্রামের অংশবিশেষ তা কার্য-কারণের সাথে সাজুয্য রেখেই লিপিবদ্ধ হয়েছে। কেননা আনুমানিক প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে এই বিশেষ সীমানাটুকু কাঁটাতারের বেষ্টনীর ভেতর ছিল। তাই আক্ষরিক অর্থেই ‘খামার’। ভেতরের ভূ-পরিচিত ভিন্ন-পর্বে বর্ণনার প্রত্যাশা রাখি । গ্রামের নামটি ‘খোলাবাড়িয়া’ ।

এই নামটির বুৎপত্তিগত দিক থেকে অনুমান করা কঠিন। তার পাশাপাশি গ্রাম কাঁঠাল বাড়িয়া,বড় বাড়িয়া নামগুলো থেকে সহজেই অনুমেয় যে -‘খোলা’ শব্দের সাথে ‘বাড়িয়া’ বিশেষ শব্দ-যোজনা মাত্র । নামের প্রথম শব্দটি ক্রিয়ামূল বা ধাতু না, তাই দ্বিতীয়টি প্রত্যয় হয়ে যুক্ত হয় নি তবে ‘বাড়ি’ এর সাথে ‘ইয়া’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘বাড়িয়া’ হয়েছে। ‘বাড়িয়া’ বা বাড়ি, নগর,পুর,ভাগ স্থান বোঝাতে যোজনামাত্র। কিন্তু ‘খোলা’ শব্দটির অর্থ যদিও সহজ, তবে কেন? কী অর্থে, কীভাবে এলো তা একটি প্রশ্ন বটে! এইখানে এসে ইতিহাস ও জনশ্রুতির ওপর কিছুটা ভর করতেই হয়। ঊনিশ শত

কুড়ি সালে বিশ্বব্যাপী যে মহামারি হয় এতে এই গ্রামসহ আশপাশের প্রায় দুই তিনটি গ্রাম মড়কে একেবারে জনশূন্য হয়ে যায়। দু’এক ঘর রায়ত যারা জীবিত ছিলো, অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে সহায় সম্পদ থাকলেও কেউ আর এই গ্রামে বসতির জন্য ফিরে আসে নি। ঊনিশ শত আশির দশক পর্যন্ত বেঁচে থাকা অতীশিপর বৃদ্ধ হাজী বয়েন উদ্দিন এর কাছে গ্রামটির কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়।

কিন্ত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি এই গাঁ’য়ে বসবাস করতে আসেন নি । আরো প্রমাণ হিসাবে এখানকার মাইগ্রেটেট পিপলসদের কথা উল্লেখ করা যায়। যদিও এই জনসমষ্টি দেশভাগের কিছুকাল আগে-পরে পঞ্চাশের মন্বন্তের পটভূমিতে এই ভূ-অংশে বৃহত্তর ঢাকা জেলার নরসিংদী মহকুমা হতে স্থানান্তরিত হয়ে আসে।এবং শূন্যস্থান পূরণ হয়।

তার আগ পর্যন্ত এখানে জনবসতি না থাকায়, জায়গাটি খোলা থাকার সপক্ষে ‘খোলাবাড়িয়া’ এই যুক্তিটি হতে পারে। দ্বিতীয় আর একটি মত হতে পারে – গ্রামটির ‘খামার’ মূল অংশে ছিলো মৃত্পাত্র এর ভগ্নাংশ বা কুচি যা ‘খোলা’ নামে আঞ্চলিক ভাষায় এবং মানভাষায় খোলামকুচি নামে পরিচিত। এই অধিক খোলাযুক্ত গ্রাম খোলাবাড়িয়া হতে পারে।

দুই.

জমিদার আমল : বর্তমানে ইউনিয়নের নাম লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া। যদিও লক্ষীপুর একটি পাশাপাশি স্বতন্ত্র গ্রাম।দু’টি গ্রামের নামের যোগসূত্রে ইউনিয়নের নাম। মৌজার নাম ইউনিয়নের নামের সাথে মিল রেখে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া রাখা হয়। মুঘল আমল থেকে যা পরগণায়ে ভাতুরিয়ার অংশ। ভাতুরিয়া নাটোর রাজবংশের শুরুর দিককার ঐতিহাসিক পরগণা যা প্রথমে রামজীবন পরে রাণীভবাণীর অধীনে শাসিত হয়।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এর পর রাণীভবাণীর শাসনামলের শেষদিকে ধীরে ধীরে এইসব পরগণার অংশবিশেষ হাতছাড়া হয়। লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া মৌজা যা ভাতুরিয়ার অংশ হয়েও সম্ভত অবস্থানগত কারণে খাজনা আদায়ের স্বার্থে চাপিলার সাথে যুক্ত হয় । ঊনিশ শত কুড়ি সালের সি. এস খতিয়ান যাহার সাক্ষী। পরগণা ভাতুরিয়া লিখে তপপে চাপিলা লেখা হয়। ইতিহাসের কোন গ্রন্থে সে অর্থে ইউনিয়নের অন্যকোন স্থানের নাম ছিটেফোঁটা হয়েও আসে নি।

তবে ইংরেজ আমলে 1862 খ্রিস্টাব্দে নাটোর সদরে অবস্থিত রাজশাহীর কোর্টের নাজির জামান খাঁ এর পুত্র দোস্ত মোহাম্মদ খাঁ চৌধুরী জমিদারী প্রতিষ্ঠার লগ্নে যে কয়টি তালুক নাটোরে বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে কিনেন সেগুলো মধ্য খোলাবাড়িয়া একটি। অন্যগুলি বিলমারিয়া, কলম, ধানাইদহ, তেবাড়িয়া,পিপরুল উল্লেখ্য। তিনি উক্ত সম্পত্তির মালিক হবার পাশাপাশি ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত হন।

এই পিতাও পুত্র সম্পর্কে the rajas of rajshahi, Calcutta review তে বলা হয়েছে যে – ‘ Mohammad Zaman khan, originally an inhabitants of burdwan, was the nazir of the fouzdari court and in that capacity accumulated large wealth and bequeathed it to his son chaudhuri dost Mohammad Khan, who set himself up as an independent gentleman and bought several zamindaries’ সেই থেকে দেশ বিভাগত্তোর কাল পর্যন্ত আমাদের এই খোলাবাড়িয়া পুরুষানুক্রমে নাটোর চৌধুরীর বংশের সম্পত্তি হিসাবেই ছিলো। ( চলবে)

Advertisement
উৎসকামাল খাঁ
পূর্ববর্তী নিবন্ধবড়াইগ্রামে অবাধে পুকুর খনন ট্রাক্টর চলাচলে ভাঙ্গছে নতুন পাকা রাস্তা !! প্রশাসন নিরব
পরবর্তী নিবন্ধপাথারিয়া পাহাড়ের দুলিচাঁপা -দিগন্ত সৌরভ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে