চলনবিলের শুটকি রপ্তানি বন্ধ, লোকসানের আশঙ্কায় চাতাল মালিকরা

0
414

চলনবিলের শুটকি রপ্তানি বন্ধ থাকায়
লোকসানের আশঙ্কা চাতাল মালিকদের

খন্দকার মাহাবুবুর রহমান : মৎস ভান্ডার খ্যাত চলন বিল। এই বিলটি নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলা জুঁড়ে অবস্থিত। চলতি বছর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে খাল, নদীতে প্রচুর পরিমানে দেশী মাছ পাওয়া যায়। আর বেশি দেশি মাছের পাওয়ার কারনে বিলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে সেইসব মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরির চাতাল।

নাটোর জেলার চলন বিল জুঁড়ে বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৪০টি অস্থায়ী শুঁটকি চাতাল গড়ে উঠেছে। মৎস বিভাগের তথ্য মতে অন্তত তিনশত নারী-পুরুষ শুটকি চাতালে কাজ করছে। জেলায় ৫০০ মেট্টিকটনের অধিক শুটকি উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারশত মেট্রিকটন শুটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে। এ অঞ্চলের শুঁটকি দেশের প্রতিটি জেলার মানুষের আস্থা অর্জন করে এখন ভারতেও রফতানি হত বলে জানান শুটকি ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে চলনবিলের সিংড়ার নিঙ্গইন শুটকি চাতালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাতালে মাছ কাটা-বাছাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন শ্রমিকরা। বাঁশের মাচায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে আধা-শুকনো চিংড়ি, টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসী, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈসহ বাহারী দেশী প্রজাতির মাছের শুঁটকি।

শুঁটকি চাতালের মালিক নাসির উদ্দীন জানান, কয়েক বছর আগের তুলনায় এবার মাছ ও শুঁটকির চাহিদা বেশি। এবার চলনবিলে ব্যাপক মাছের উৎপাদন হয়েছে। শ্রমিকরা দিনপ্রতি ১৫০ টাকা মজুরিতে আধাবেলা মাছ কাটেন। কেউবা মাছ কাটার পর কিছু বাড়তি টাকার বিনিময়ে চাতালের মাচাগুলো রাখা শুঁটকি রোদে শুকাতে দেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় উল্টে-পাল্টে শুঁটকি বাছাই করেন তারা।

শুটকি চাতালের মালিক আব্দুল মান্নান বলেন,
মাছভেদে প্রতিকেজি শুঁটকির দাম সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। রুপচাঁদা মাছের শুঁটকি প্রতিকেজি ২০০০ টাকা, লইট্টা ৭০০ টাকা, ছুঁরি ১১০০ টাকা, ইলিশ আকারভেদে ৭০০ থেকে ১৬০০ টাকা, মলা ও কাচকি ৭৫০ টাকা, শৈল ১৫০০ টাকা, টাকি ৭০০ টাকা, পুঁটি ২৫০ টাকা, খলসে ও বাতাসি ৩০০ টাকা, বাইম ৮০০ টাকা, কই ৬০০ টাকা ও টেংরা ৮০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। তবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনও প্রকার কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় প্রকৃত স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে।

আব্দুল মান্নান আরও বলেন, করোনার কারনে এখন শুটকি ভারতে যাচ্ছে না। এবার মাছের আমদানি বেশি। শুটকিও উৎপাদন বেশি। কিন্তু রপ্তানি না থাকায় মোকামে দম কম হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিন চাতাল থেকেই ১০ থেকে ১৫ মণ শুঁটকি বিক্রি হয় এবং রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দিনাজপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে শুঁটকি কিনে নিয়ে যান।

শুঁটকির সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মাছ সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা থাকলে বর্ষা মৌসুমে মাছগুলো ধরে রেখে শীতের শুরুতে শুঁটকি তৈরি করা যেত। একটি মাছ সংরক্ষণাগার তৈরী হলে চলন বিলের মাছ কেন্দ্রিক অর্থনীতির নতুন দিগন্ত হবে।

সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ওয়ালীউল্লাহ বলেন, চলনবিলে মাছের উৎপাদন বিগত দিনের চেয়ে ভালো। এবার উৎপাদন আরও বাড়বে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রফতানি হচ্ছে শুঁটকি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম নাটোর কন্ঠকে বলেন, শুঁটকি শ্রমিক ও মালিকদের আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। মৎস্য বিভাগ এ বিষয়ে সজাগ আছে বলে জানালেন তিনি।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর বিলের অভয় আশ্রম ঘোষণার দাবি
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে বড়দিন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে