“চলমান অসঙ্গতি” – ডন শিকদার

0
262
ধর্ষন চেষ্টা

“চলমান অসঙ্গতি” – ডন শিকদার

প্রথমেই একটা প্রশ্ন রেখে শুরু করছি, ধর্ষিতা নারী কি কখনো তার ধর্ষক স্বামীকে ভালবাসতে পারবে?

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। অনেকে ভালবেসে বিয়ে করে, অনেকে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে। তবে যেভাবেই হোক, বিয়ের পরে দুটি মানুষের মাঝে ভালবাসা তৈরি ও চর্চা না থাকলে সম্পর্ক টিকে থাকে না। ধর্ষক ও ধর্ষিতার বিয়ে একটা পাপকে জোর করে পবিত্র করার প্রয়াস মাত্র। এটা কখনোই কোন অপরাধের সঠিক বিচার হতে পারে না।

ধরি, একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে কিন্তু মেয়েটা ছেলেটিকে পছন্দ করে না। এখন যদি সমাজের প্রচলিত নিয়ম মনে করে ছেলেটি তার পছন্দের মেয়েকে পাবার আসায় ধর্ষন করে তাহলে এই দায় কার? ” অবশ্যই সমাজের “আমাদের সমাজ আজ শুধু ভুলের উপর ভুল করে যাচ্ছে। ধর্ষিত নারীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার পরিবার জোরপূর্বক/বাধ্য হয়ে তাকে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু একবারও তারা ভাবছেন না সেই দূর্বিষহ মুহূর্ত, যেটা ভুলিয়ে দেয়া দরকার, সেটা তারা তাদের মেয়ের উপর সারাজীবনের জন্য চাপিয়ে দিচ্ছেন। তারা একবারও ভাবেন না, যে অমানুষটি এতবড় অঘটন ঘটালো সে তাদের মেয়েকে সুখে রাখবে কি করে? সেই মানুষটি প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ভবিষ্যতে তাদের মেয়ের আরো অনেক বড় ক্ষতিও তো করতে পারে।

হ্যা, অভিভাবকরা এমনটা ভাবতে পারেন না। কারন, আমাদের সমাজ তাদের এভাবে ভাবতে শেখায়না, ভাবতে দেয়ও না। আমাদের সমাজ শুধু পারে চাপিয়ে দিতে।

যদি কোন ব্যক্তি কোন ধর্ষিতা মেয়ের পাশে দাড়ায় তাহলে সমাজ ধরেই নেয় ব্যক্তিটি কোন সুযোগসন্ধানী! তাই কেউ চাইলেও ধর্ষিতার বিপদে তার পাশে দাড়াতে পারে না, ধর্ষিতা নারী হয়ে যায় পতিতা। বিয়ে করাতো ভাবনারও বাইরে। কেউ যদি কোন ধর্ষিতা নারীকে বিয়ের কথাও ভাবে সে হয়ে যায় সমাজচ্যুত সর্বোপরি পরিবারহারা। আবার বিবাহিত কোন নারী ধর্ষিত হলেও তাকে সংসারহারা হতে হয়। অথচ ধর্ষনে নারীর কিছুই করার থাকে না, অসহায়ত্বের অভিশাপে সে থাকে জর্জরিত।

একাত্তরের ধর্ষিত নারীরা অনেক দুঃখ কষ্ট সয়ে আজ শুধুমাত্র ‘বীরাঙ্গনা’ নামক এক শব্দে সীমাবদ্ধ। সমাজ তাদের এখনও বাঁকা চোখে দেখে, তাদের আত্মত্যাগ দেখে না, তাদের সম্মান করেনা। তারা পাকিস্তানি হায়েনাদের অত্যাচারের শিকার হয়েছিল, আমাদের পূর্বপুরুষ বীর বাঙালিরা অত্যাচারী পাকিস্তানীদের দেশছাড়া করেছে। আজ আমরা কি করছি? আজ আমরা শুধু নাক সিটকিয়ে বাঁকা চোখে তাকানো ছাড়া কিছুই করি না।

আমাদের উচিত ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া, অপরাধীর দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা। ধর্ষিতা নয় ধর্ষককে সমাজচ্যুত করা। ভেঙে পড়া বাঙালি জাতি কি পারবে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করে সুন্দর আগামী ভবিষ্যত গড়তে? পারবে, এই আশা নিয়েই শেষ করছি।

ডন শিকদার, পথচারী।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ ১৩ ডিসেম্বর লালপুর মুক্ত দিবস
পরবর্তী নিবন্ধসিংড়ায় স্মৃতিসৌধে দুর্নীতিকে লাল কার্ড দেখিয়ে বিজয়ের শপথ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে