নাটেরের অসহায় রুহুল আমিনের কবুতর খামার ?

0
1904
nATORE KANTHO

খন্দকার মাহাবুবুর রহমান : দুপুরের সূর্যটা তখন মাথার উপর থেকে হেলে পড়েছে পশ্চিম দিগন্তে। শীতকালের মিষ্টি রোদের ছোঁয়া, স্পর্শ করে আছে প্রকৃতিতে। দৃশ্যপট ছিল নাটোর সদর উপজেলার হালশা ইউনিয়নের নবীন কৃষ্ণপুর গ্রামের চার মাথার মোড়। প্রায় সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ বহু কবুতরকে খাদ্য দিচ্ছে। কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও যাত্রাবিরতিতে কথা হলো তার সাথে।

নাম রুহুল আমিন। এই গ্রামেই যার জন্ম। বৃদ্ধ রুহুল আমিন নিঃসন্তান সহধর্মিণীনিকে নিয়ে, চার রাস্তার মোড়ে একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে তার মাথা গোজার ঠাই গড়ে তুলেছেন। সেখানেই রয়েছে তার ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একই সাথে পোষা কবিতরেরও বসবাস।দোকানের পাশে ছোট্ট একটা পাটকাঠির বেড়ার ঘরে তার বসবাস। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কোন সম্পত্তি তার নেই। কুড়ি বছর যাবৎ তিনি এই কবুতর পালন করছেন।

আয়-ব্যয়ের হিসাব তিনি জানেন না। প্রায় একশত কবুতর তার খামারে বর্তমান। কবুতর গুলোকে আশ্রয় দেওয়ার সম্বল তার নেই। তাই তার এই ক্ষুদ্র খামারের কবিতর আশেপাশের ডাব গাছ, মেহগনি গাছে বসবাস করে। এমনকি ডাবের গাছেও কখনো কখনো ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটায় তার কবুতর। কবুতরকে ঘর বানিয়ে দেওয়ার সম্বলও তার নেই।

রুহুল আমিনের একটি কথা আমার মাথায় আলপিনের মতন বেঁধে আছে। “বাবারে আমারতো সন্তান নেই! তাই আমি মনে করি আমার শত শত সন্তান। ওদেরকেই আমি লালন পালন করি।ওদেরকে খাওয়ার দিয়ে আমি তৃপ্তি পাই।ওদেরকে আশ্রয় দিতে পারিনি। তা নিয়ে ওদের কোনো আক্ষেপ নেই।এখন কবুতর কমে গেছে। জমিতে রাসায়নিক আর কীটনাশক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে যে কবুতরগুলো খাবার খায় তাদের মধ্যে অনেকেই মারা যায়।”

আমাদের নাটোরে রুহুল আমিনের সংখ্যা খুঁজলে হয়তো কম পাওয়া যাবেনা। রুহুল আমিনেরা আছে নাটোরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মোড়ে, মোড়ে। গ্রামীণ সড়কের মেঠো পথ গুলো এখন ইট, সুরকি  আর পিস দিয়ে ঢালাই হয়ে গেছে। উন্নয়ন হচ্ছে অনেক কিন্তু যে বটবৃক্ষের নিচে রুহুল আমিনেরা পথিকের জন্য অপেক্ষা করতো। সেই বটবৃক্ষ এখন আর  তেমনভাবে  দৃষ্টিতে পরেনা। আশির দশকের কথা মনে আসতেই পারে। গ্রাম বাংলার মাটির রাস্তা। অনেকদূর পেরিয়ে গেলে, তিনমাথা অথবা চার মাথার মোড়ে বটগাছের নিচে রুহুলেরা পানি ও খাদ্যের দোকান নিয়ে বসে থাকতো।

রুহুল আমিনদের ভাগ্যের পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে? ওদের জন্য নির্ধারিত অর্থটাই কি পাচার হয় বহির্বিশ্বে? রুহুল আমিন আর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের দূরত্ব কি যোজন যোজন মাইল? সমাজসেবা অফিস অথবা ইউনিয়ন পরিষদ কি রুহুল আমিনের থেকে অনেক দূরে? এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বা ইচ্ছা হয়তো কোনদিন কারো ছিল না! আজও হয়তো নেই! রুহুল আমিনেরা হয়তো নিজের জন্যই জন্মেছিল এই নিজালয়ে…

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধসিংড়ায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন আর নেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে