নাটোরেও গরম বাতাসে পুড়েছে হাজারো কৃষকের কপাল

0
218

এবার নাটোরেও গরম বাতাসে পুড়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান

স্টাফ রিপোর্টার নাটোর কণ্ঠ:
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো নাটোরে ও শত শত হেক্টর জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে গেছে। কোথাও কোথাও কৃষকরা এর জন্য স্থানীয় ইট ভাটাকে দোষারোপ করলে কৃষি বিভাগ বলছে সম্প্রতি দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গরম ঝড়ো হাওয়ার কারণে ধানের এমন পরিস্থিতি। সর্বস্বান্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও কৃষি বিভাগ বলছে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

নাটোর সদর উপজেলার বারোঘরিয়া এলাকার কৃষক মোঃ সাহেব আলী। জমির পাশে বসেই পুড়ে যাওয়া ধান হাতে নিয়ে বিলাপ করছিলেন তিনি । কথা হলো তার সাথে তিনি জানালেন, চলতি বোরো মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে করেছিলেন ধানের আবাদ। আর কদিন পরেই ঘরে উঠবে সোনার ধান , কিন্তু বিধিবাম। হঠাৎই তার ক্ষেতের সমস্ত ধান সাদা আর চিটা হয়ে গেছে। এখন সমস্ত বছর কিভাবে চলবে এই চিন্তায় দিশেহারা তিনি।

শুধু আবদুল আলিম ই নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলায়, এমনকি চলনবিল হালতির বিল সহ বিভিন্ন বিলেজুড়ে শতশত কৃষকের একই অবস্থা। এমতাবস্থায় কোন কোন কৃষক স্থানীয় ইট ভাটাকে দায়ী করেছে। জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় হাহাকার উঠেছে প্রতিটি পরিবারে। তাই ক্ষতিপূরণ ও সহায়তার দাবি করেছেন কৃষকরা।

স্থানীয় ভাটার মালিক হাজী মামুন নাটোর কণ্ঠকে জানান, ভাটার ধোয়া গরম বাতাস থেকে এ ধরনের ক্ষতি হয়নি। কারণ এখন আমাদের ভাটা আধুনিক প্রযুক্তিতে করা এখান থেকে গরম বাতাস কালো ধোঁয়া নির্গত হয় না। এ বছর সারাদেশে ধান পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তারই ধারাবাহিকতায় এমন ঘটে থাকতে পারে।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম নাটোর কণ্ঠকে জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি ফসল নষ্ট হওয়ার পেছনে ভাটাগুলো দায়ী হয় তাহলে ভাটা কতৃপক্ষের থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দেওয়া হবে । এছাড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ মহোদয়ের নির্দেশে ভাটার যদি বৈধ কাগজপত্র না থাকে তবে আমরা সিলগালা ও বন্ধ করে দেব। এছাড়া কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষকদের ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করেছি। ক্ষয় ক্ষতির কারণ নিরূপণ চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আমরা উপর মহলের যোগাযোগ করেছি এ সমস্যার সমাধান এ কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।

এদিকে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার নাটোর কণ্ঠকে জানান, প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।  এছাড়া ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম পটাশ সার মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া সরকারের উপর মহলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার জন্য আবেদন করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি বিভাগের উচ্চপর্যায়ের এরই মধ্যে যোগাযোগ ও তাদের পরামর্শ মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এবছর জেলায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কত হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে ৪৮০০ লিটার পাম ওয়েল উদ্ধার : ব্যবসায়ীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধআসাদজামান এর দুটি কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে