নাটোরের চা দোকানী এক যাযাবর মুক্তিকামীর গল্প

0
205
মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন

মাহাবুব খন্দকার : নাম রমিজ উদ্দিন। ১৯৪৮ সালের ১৭ আগষ্ট, নরসিংদী জেলায় মনহরদি উপজেলার বড়চাঁপা ইউনিয়নের পাইকান গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ছোট বেলা থেকে ঘুরে বেড়াতেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজের সন্ধানে।

১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ভারত যুদ্ধের সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজের জন্য যান ঢাকা শহরে। তখন পাকিস্তানীদের নিপীড়নে অতিষ্ট বাঙ্গালীরা। সেখানে থাকতে না পেরে ১৯৬৭ সালে যান গাজীপুর জেলায় এরপর আবার গাজীপুর থেকে ১৯৬৭ সালেই চলে আসেন নাটোরে।

একটা সময় নাটোরের নিচাবাজারে বিভিন্ন খাবার দোকানে কাজ করতেন। এছাড়াও কাজ করেছেন লেপ তোষক সেলাইয়ের। নাটোরের সকলের সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণ শুনতেন গিয়েছিলেন তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উৎসাহিত হয়ে পরিবারের সকলকে রেখে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে নবীনগর হয়ে গোকুল নগর ক্যাম্পে পৌঁছান সেখান থেকে আসাম লোহাবাগ ক্যাম্পে যান সেখানে ২৯ দিন প্রশিক্ষন নেন এবং শপথ গ্রহন করেন।

ক্যাম্প থেকে ১০ জন ১২ জনের দল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার নির্দেশ হয়। প্রথমেই তিনি জন্মস্থান নরসিংদী জেলায় মনহরদি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। সেখানে সম্মুখ যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এরপর চলে আসেন নাটোরে।

নাটোরের তৎকালীন নেতা বাবু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীরর সহযোগিতায় যুদ্ধ করেন নাটোরর ঝলমলিয়ায়, পুঠিয়া, বানেশ্বর এলাকায় এখানেও রমিজ উদ্দিন জয় লাভ করেন তার দল নিয়ে। সেখান থেকে যান রাজশাহীর চারঘাটে, সেখানে পাক বাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধারা। এমন শত শত ছোট ঘটনা ছিল যুদ্ধের সময়।

রমিজ উদ্দিন এখন আর তেমন কিছু মনে করতেও পারেন না। অনেকটা অস্পষ্ট হয়ে গেছে স্মৃতির পাতা। বার্ধক্যের ছাপ পুরো শরীরে। সেদিনের সেই রমিজের শরীর ও মনে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আগুনে পোড়া শরীর হয়ে গেছে তামাটে। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি।

দেশ স্বাধীন হবার পর বাবু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য। সম্বলহীন এই বীর সেই পাঁচশত টাকাকে পুঁজি করে চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। আজও সেই চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন ছয় সন্তানের পিতা রমিজ উদ্দিন।

হয়বতপুর বাজারের এই চায়ের দোকানে বাবু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর প্রায় যেতেন খোঁজ খবর করতেন। চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলেকে করেছেন প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আজও থেকে গেছেন ভুমিহীন। বেঁচে থাকতে নিজের নামে এক টুকরো জমি পেতে চান ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।

শুনেছিলেন ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতে তার নাম রয়েছে। তারপর আর কোন হদিস পাননি তালিকার। এই একটি আক্ষেপ নিয়েই দশ সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও চায়ের দোকানের আয় দিয়ে। বয়স সত্তরের কোটায় তবুও নিজেকে থামিয়ে রাখতে নারাজ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেদিনের সেই তেজদীপ্ত রমিজ উদ্দিন এমনই থাকতে চান বাকিটা জীবন।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে