নাটোরের ‘তিশীখালী’ মেলা

0
117
তিশীখালী

নাটোর কন্ঠ : পবিত্র ওরস উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী তিশীখালী মেলা আগামী ২৮ ও ২৯ ই মার্চ ২০২৩ খৃষ্টাব্দ রোজ মঙ্গল ও বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও হাজার হাজার দর্শনার্থীসহ ভক্তদের সমাগম ঘটবে। পশরা সাজিয়ে বসবে দোকানদাররা।

নাটোর শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে সিংড়া উপজেলা চলনবিলের মাঝখানে অবস্থিত হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.)-এর মাজার শরিফ, লোকে যাকে ‘তিসিখালি মাজার’ বলে চিনে থাকেন।

ঐতিহ্যবাহী তিসিখালি মেলার প্রচলন বহু বছর আগে থেকে। মাজার তৈরি ও মেলা শুরুর সঠিক ইতিহাস কোথাও তেমন লিপিবদ্ধ নেই। লোকমুখে এই মাজার ও মেলাকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তি শুনতে পাওয়া যায়।

জনশ্রুতি আছে, বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর নির্দেশে হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.) সুদূর আরব থেকে নাটোরে আসেন। তার আসল নাম কেউ না জানলেও হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.) বা ‘ঘাসি বাবা’ নামটি লোকমুখে প্রচলিত।

হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.)-এর জীবনাচরণ ও নামকরণের বিষয়টি সম্পর্কে আরো জোরালো কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। চলনবিলের ফসলি জমিতে একসময় প্রচুর তিসি বা তিল ফলের চাষ হতো।

মাঠে বেড়ানোর সময় একদিন দেওয়ান সাহেব মালিকের অনুমতি ছাড়া একটি তিল মুখে দেন। হঠাৎ দৈববাণীতে তিনি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত বোধ করেন এবং মালিকের কাছে নিজের ক্ষমা লাভের আশায় তাকে খুঁজতে থাকেন।

স্থানীয় ডাহিয়া গ্রামে এক ঘোষ পরিবার ছিলেন সেই জমির মালিক। তার কাছে বারো বছর বিনা বেতনে চাকরের কাজের জন্য আবেদন করেন। উল্লেখ্য, জমির মালিক ছিলেন হিন্দু ধর্মের লোক।

দয়াবশত তিনি দেওয়ানকে রাখালের কাজ দেন। তার কাজ ছিল গবাদিপশুর দেখভাল করা এবং তাদের জন্য চলনবিলের মাঠ থেকে ঘাসের জোগান দেওয়া।কিন্তু ক্রমেই তার কিছু অলৌকিক ঘটনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাইকে অবাক করে দেয়।

এসব অলৌকিক ঘটনা হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.)-কে করে তোলে অনন্য। অবশেষে বারো বছর বিনা বেতনে শ্রমের পর তিনি মুক্ত হন এবং তার আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করে সেই মালিকের পরিবার হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

দেখতে দেখতে তার অগণিত অনুসারী জুটে এবং তিনি এ অঞ্চলে নির্বিঘ্নে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে শুরু করেন ও জনসেবায় ব্রতী হন। পরবর্তী সময়ে তার মৃত্যুর পর সবাই কবরটিকে হজরত ঘাসি দেওয়ান (রহ.)-এর মাজার হিসেবে বিবেচনা করে আস্তানা গড়ে তোলেন।

তখন থেকেইে এখনে, সর্ব ধর্মের মানুষের আনাগোনা বাড়ে। একটা সময় মাজারে যাওয়ার কোন সড়ক না থাকলেও, বর্তমান সরকার মাজারে চলাচলের জন্য সাবমারসিবল সড়ক, এবং কালভাট নির্মাণ দিয়েছেন।

এবং অবকাঠামো উন্নয়নে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিপুল পরিমাণ সহযোগিতা করেন। চলনবিলে ভ্রমণকারী পর্যটকরা সারা বছরই ভিড় জমায় এই মাজার প্রাঙ্গনে।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের একমাত্র ‘নাগলিঙ্গম’ বংশবিস্তারের দাবি
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরে যুবকে গু.লি করে হ.ত্যা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে