নাটোরের পাখাপল্লীর কারীগররা ব্যস্ত পাখা তৈরিতে

0
219
nATORE KANTHO

মামুনুর রশিদ মাহাতাব : নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর তালপাতার পাখাপল্লী হিসাবে পরিচিত। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে হাতপাখার চাহিদা। তাই কারিগররা সারাদিন কর্মব্যস্ত।

উপজেলার জামনগর ইউনিয়নে সবুজ বৃক্ষরাজির সুশীতল ছাঁয়ায় ঘেরা হাপানিয়া গ্রাম। এর এক অংশ তালপাখা পল্লী নামে পরিচিত। এখানকার অর্ধশত পরিবার পৈত্রিক পেশা তালপাতার হাতপাখা শিল্পে জড়িত।

গ্রীষ্মকালে এ পাখার বেশ কদর বাড়ে। তাল গাছের পাতা থেকে তৈরি হাত পাখার শীতল বাতাসে ক্লান্ত মন শান্ত হয়। বিদ্যুৎ শূন্য পরিবারে হাত পাখা পরম বন্ধু। প্রচন্ড দাবদাহ, ভ্যাপসা গরম ও বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হলে হাতপাখার চাহিদা বাড়ে।

প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে এ পল্লী থেকে ৩ লক্ষাধিক হাত পাখা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ি ও কারিগরদের স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলে। এ পল্লীর প্রতি বাড়ির আঙ্গিনায় রৌদ্রে ছড়ানো-ছিটানো হাতপাখা বানানোর নানা উপকরণ। প্রতি বাড়ির পুরুষ ও নারী পাখা তৈরির কাজে সংপৃক্ত। পুরুষরা সংগ্রহকৃত তালপাতা কেটে পাখার আকার করেন।

মেয়েরা নিপূণ হাতে পাখার কারুকার্য করেন। এ পেশায় জড়িত আলাউদ্দিন ও রবিউল ইসলামের বাড়িসহ বিভিন্ন বাড়ির ঘর, বারান্দা ও গোডাউনগুলোয় স্তরে স্তরে সাজানো হাতপাখা শোভা পাচ্ছে। এগুলো চাহিদা মোতাবেক ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পর্যায়ক্রমে সরবরাহ করা হবে।

এই পল্লীর মকলেসুর রহমান জানান, চাঁপাই-নবাবগঞ্জ ও নঁওগা থেকে ছোট তাল গাছের পাতা সংগ্রহের পর রৌদ্রে শুকিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। কিছুদিন পর ভেজা নরমপাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখানে দূ’খন্ড করা হয়।

প্রতি তালপাতা থেকে দূ’টি পাখা তৈরি হয়। পাতা সংগ্রহসহ প্রতি পিচ পাখার তৈরিতে খরচ হয় দশ টাকা থেকে বারো টাকা। এগুলো ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় খুরচা ও পাইকারি বিক্রি হয়। প্রকার ভেদে প্রতি পিচ পনেরো টাকা থেকে বিশ টাকায় বিক্রি হয়।

হাতপাখা শিল্পী ছানোয়ারা (৬০) জানান, তিনি সাংসারিক কাজের ফাঁকে হাতপাখা’র কারুকার্য করেন। ১শ’ পাখা সেলাই ও রঙ করলে মজুরি পান ৭০ টাকা। তিনি প্রতিদিন ১শ’থেকে দেড়শত হাতপাখার কারুকার্য করেন।

কারিগর ও ব্যবসায়ি শফিকুল ইসলাম জানান, বিগত দূ’বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হাতপাখা শিল্পে ধব্স নেমেছিল। বর্তমান করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকায় হাতপাখার ব্যবসা ভালোভাবেই চলছে।

তিনি আরো জানান, কয়েক বছর আগে এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে আড়ানি-পুঠিয়া পাকা সড়কের দূ’ধারে, বড়াল ও মূসাখাঁ নদীর তীরে ষোল হাজার তালের আঁটি লাগানো হয়। এগুলোর সিংভাগের চারা গজালেও অবহেলা ও অযত্নে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে ব্যয় হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরের সিংড়ায় মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১লা এপ্রিল
পরবর্তী নিবন্ধনাটোরের নদ-নদী’র মরণফাঁদ স্লুইসগেট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে