নাটোরে সরকারি জলাশয় দখল-ভরাটের মহাউৎসব : ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের

0
157
nATORE KANTHO

নাটোর কন্ঠ : নাটোরে ভরাট হচ্ছে সরকারি জলাশয়। অবরুদ্ধ হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের পথ। ব্যাহত হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির শস্য উৎপাদন। সময় মত ফসল উৎপাদন করতে না পেরে লোকসানে পড়ছেন কয়েক লক্ষ কৃষক।

নাটোর জেলার মহাসড়কের দুই পাশের জলাশয় ইচ্ছামত ভরাট করে দখলে নিয়েছে স্থানীয়রা। এমন দৃশ্য দেখা যায় নাটোর শহরের ভেতরে। নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক, নাটোর ঢাকা মহাসড়ক এবং নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের দুই পাশ। প্রশাসন বলছেন অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট কারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিপরীতে, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশের জলাশয় বালু দিয়ে ভরাট করছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক। স্থানীয়রা জানান, জলাশয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। পেছনের ভবনটির মালিক ডাঃ এ বি এম হাসান উজ্জামান হেলাল, দখল করে ভরাট করছেন এই জলাশয়।

সরকারি জলাশয় ভরাটকারি ডাঃ এ বি এম হাসান উজ্জামান হেলাল জানান, ‘জলাশয় ভরাটের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগে, বাড়ি তৈরি করার সময় আবেদন করেছিলাম।’ তবে তিনি সেই আবেদনের কোন কপি দেখাতে পারেননি।

নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের গাজীর বিল এলাকার কৃষক মো. আব্দুর কাদের জানান, ‘গাজির বিলের বুক চিরে এই মহাসড়ক। আর এই মহাসড়কের দুই পাশেই রয়েছে সরকারি জলাশয়। এই জলাশয় দিয়েই সম্পূর্ণ বিলের পানি নিষ্কাশিত হত।

আর খরা মৌসুমে এই জলাশয়ের পানি দিয়েই কৃষি আবাদ করা হতো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবৎ স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই জলাশয় দখল করে ভরাট করে চলেছে। গড়ে তুলছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর সময় মত বিলের পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায, ফসল উৎপাদনে আমরা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।’

জেলা জজ কোর্টের জেনারেল প্রসিকিউটর আলহাজ্ব মো. আসাদুল ইসলাম জানান, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও তা নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে।

ধারা ৬ ঙ এর বিধান লংঘনের প্রথম অপরাধের ক্ষেত্রে অনধিক ২ বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড; পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন ২ বৎসর, অনধিক ১০ বৎসর কারাদণ্ড বা অন্যূন ২ (দুই) লক্ষ টাকা, অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।’

যেহেতু নাটোরে বিভিন্ন স্থানে সরকারি জলাশয় ভরাট চলছে এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কি উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং সেই দপ্তরকে প্রশাসন সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, ‘জলাশয় ভরাটের কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যারা এধরনের সরকারি ঝিল, জলাশয় ভরাট করছে তাদেরকে নোটিশ করে অবহিত করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, ‘যেহেতু জায়গাগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের তাই আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সঙ্গে কথা বলে সরকারি জলাশয় ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করবো।প্রয়োজনে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে।’

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটোরে যুবকের লিঙ্গ কর্তন ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে নারী গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধনাটোর আইটি ইন্সটিটিউট সফলতার সপ্তম বর্ষে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে