বাগাতিপাড়ায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন! কিভাবে হয়েছে শ্রেণী পরিবর্তন?

0
3643
nATORE KANTHO

নাটোর কণ্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের সপ্তম পর্ব

নাটোর কণ্ঠ : নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাটোর কণ্ঠ সরোজমিনে যায় পরিদর্শনে। নাটোর সদর উপজেলার সুগারমিল এলাকার লেংগুড়িয়া থেকে বাগাতিপাড়া উপজেলার যোগীরমোড় পর্যন্ত সরু রাস্তা জুড়ে পড়ে আছে মাটি। মাটিবাহী দুইটি ট্রাক্টর পাশাপাশি চলাচলের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। অতিষ্ঠ পথচারীরা আশঙ্কা করছেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এই পথ চলাচলের অযোগ্য হবে।

বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের কোয়ালিয়া গ্রামের মো. আনছার আলী নাটোর কণ্ঠকে জানান, এইটা পুকাপাড়া বিল। এই বিলের জমিতে বছরে দুই থেকে তিনটা করে ফসল হয়। যে জমিতে পুকুর খনন হচ্ছে সেই জমিতে বছরে এক থেকে দুইটা ফসল হত।জমির মালিক গতবছর এই পুকুর খনন করা শুরু করেছিল।  হয়তো সম্পূর্ণ খনন করা বাঁকি ছিল। তাই বাঁকি অংশটুকু এই বছর খনন করছেন বলে তিনি জানালেন।

পোকাপাড়া বিলের খননকৃত জমির পাশে পেঁয়াজের জমিতে ঘাস তুলছিলেন বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের কাঁইচানি বেগম। তিনি নাটোর কণ্ঠকে জানালেন,  জমির মালিক আলী হোসেন আবাদ থেকে যে টাকা পায় তার চেয়ে বরং মাছ বিক্রি করলে বেশি টাকা রোজগার হবে। সেই কারনেই তিনি পুকুর খনন করছেন। এই বিলে কোন পুকুর ছিল না। গত দুই বছর যাবত পুকুর কাটা শুরু হয়েছে বলে তিনি জানালেন।

কোয়ালি পাড়া গ্রামের মো. আব্দুস সালাম নাটোর কণ্ঠকে জানান, পুকাপাড়া একটি আবাদি বিল। তিন ফসলী আবাদি জমির এই বিলে একসময়ে পানি নিষ্কাশনের পথ ছিল। গত দুই বছর আগে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পথে একটি পুকুর খনন করা হলে বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে একের পর এক খনন করা হচ্ছে পুকুর।এখন পুকুর খননের কারণে জলাবদ্ধতা আরো সৃষ্টি হবে। কারণ খননকৃত পুকুরের পাশে জমি আগামী বছর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে উর্বরতা হারাবে জমি। এইভাবেই একদিন বিলের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।

পুকুর খননকারী মাটি ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম নাটোর কণ্ঠকে জানান, এই পুকুর খননের জন্য প্রশাসনিকভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খননকৃত মাটি নিজ খরচে এতিমখানায় পৌঁছে দিতে হবে। খরচ উত্তোলনের স্বার্থে কিছু মাটি বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে। সর্বমোট প্রায় ছয় (০৬) শত ট্রাক্টর মাটি কাটা হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় আশি (৮০) ট্রাক্টর মাটি সরকারি নির্দেশনায় নিজ খরচে এতিমখানার জন্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বাকি মাটি স্থানীয়ভাবে গ্রামবাসীর মধ্যে বিক্রি করা  হচ্ছে বলে তিনি জানালেন।

এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা পাল এর সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি নাটোর কণ্ঠকে জানান, ফসলি জমির শ্রেণী পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। ওই জমি পুকুর ছিল। সংস্কারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানালেন।

গ্রামবাসী বলছেন, দুই বছর আগে বর্তমান পুকুর ফসলি জমি ছিল। প্রশাসন বলছেন শ্রেণী পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তবে কি গ্রামবাসী সত্য কথা বলছেন না ? কিভাবে এই জমির শ্রেণী পরিবর্তন হলো?

নাটোর জেলায় অবাধে কৃষি জমিতে চলছে পুকুর খনন। কিভাবে হচ্ছে শ্রেণী পরিবর্তন? তাই জানতে আগামী পর্বে নাটোর কন্ঠের সঙ্গে কথা হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তা ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে।

প্রিয় পাঠক ধারাবাহিক এই প্রতিবেদনে অষ্টম পর্ব পড়তে চোখ রাখুন নাটোর কণ্ঠে। চলবে…

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধগোপালপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর গণের দায়িত্ব গ্রহণ
পরবর্তী নিবন্ধবড়াইগ্রামে দু’টি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ গুরুতর আহত ৩

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে