“বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি” -লুৎফুন নাহার তিথি‘এর ভ্রমন কাহিনী

0
866

লুৎফুন নাহার তিথি : মনটা বেশ কয়েকদিন হলো খারাপ। মন খারাপ হলে শরীরও খারাপ হয়ে যায়। বন্ধুরা নানা রকম উপায় বাতলে দিচ্ছে। দাওয়াতের উপর দাওয়াত আসতেছে। কেউ কেউ বাসায় এসে আড্ডা দিয়ে মন ভালো করবার চেষ্টা করছে..!! ইনবক্সে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর প্রস্তাবও আসছে..!! আমি নিজেও বিশ্বাস করি, মন ভালো করতে হলে- আড্ডা দিতে হয়।

প্রকৃতির কাছে যেতে হয়। এমনই এক প্রস্তাবে বিরুলিয়া’ জমিদার বাড়ির সম্পর্কে জানতে পারলাম। জানলাম, ঢাকার পাশেই একটি জমিদার বাড়ি রয়েছে, কিন্তু বন্ধুরা প্রায় সবাই ব্যস্ত, তাদের কয়েকজনকে প্রস্তাব দিলেও দু একজন ছাড়া কেউ সময় বের করতে পারল না, আমারও মনটা কেমন যেন ছুটে গিয়েছে, মন সারাক্ষণ কেমন পলাই পলাই করছিল, তাই সখী দু’জনে মিলে চলে গেলাম বিরুলিয়া।

তুরাগ নদীর তীরবর্তী ছোট্ট একটি গ্রামের নাম বিরুলিয়া, ঢাকা শহরের অত্যন্ত কাছের এই বিরুলিয়া গ্রামটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্য সুপরিচিত। এই গ্রামের শেষ প্রান্তে আছে জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের বাড়ি যা বর্তমানে বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি (Birulia Jamidar Bari) নামে পরিচিত। বাইরে থেকে প্রথম দেখায় নিরাশ হলাম! বারণ শুনেও চলে গেলাম বাড়ির ভেতরে, এবার দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ উঠোনে, অনুরোধ করেও ঘরে ঢুকার অনুমতি পেলাম না!

www.natorekantho.com

জানতে পারলাম..জমিদার নলিনী মোহন সাহার কাছ থেকে ৮৯৬০ টাকা ৪ আনি অর্থের বিনিময়ে রজনীকান্ত ঘোষ এই বাড়িটি কিনে নেন! রজনীকান্ত ঘোষের আরো অনেক সম্পত্তি থাকলেও বর্তমানে শুধু মাত্র বিরুলিয়া জমিদার বাড়িটি বেদখলের হাত থেকে অবশিষ্ট আছে।

তবে এ বাড়িটিও ভেঙে পড়ে পড়ে অবস্থা, কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে শুধুমাত্র! তবে ঘরের মেঝে, সিলিং, দরজা, জানালায় এখনও তৎকালিন আভিজাত্য দৃশ্যমান। নেই শুধু পাইক-পেয়াদাদের হাঁকডাক কিংবা বাইজির নূপুরের আওয়াজ..!!

জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের এই বাড়িতে এখনও বর্তমানে রজনীকান্ত ঘোষের বংশধরগণ বসবাস করছেন! জমিদার বাড়ির সদরঘর, বিশ্রামঘর, বিচারঘর, পেয়াদাঘর এবং ঘোড়াশালাগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, নেই তাদের কোনো জমিদারীর কোনো শোর্যবীর্য..!!

এক সময়ের শান-শওকতসমৃদ্ধ বাড়িটি এখন জরাজীর্ণ ! ভাবলাম, আমাদের জীবনটাও বুঝি এমন, যৌবনে যার সদম্ভে গতিময় পথচলা.. প্রবীণে তারই জরাগ্রস্ত নুইয়ে পড়া! আসলে, এরকম ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে ঘুরতে গেলে, মনের ভেতর একপ্রকার নস্টালজিয়া কাজ করে..!!

www.natorekantho.com

এরপর অটো’য় করে চলে গেলাম সাদুল্লাপুর গোলাপ গ্রামে। হাজার হাজার গোলাপের মাঝে নিজেকে কিছুটা সময় বিলিয়ে দিয়ে মনটাকে কিছুটা হালকা করে নিলাম, এরপর গিয়ে উঠলাম নৌকায়, তুরাগের পানিতে প্লাবিত বিলে নৌকা ভাসে, ওখানেও খড়া..!!পানি শুকিয়ে কাদা..!!

তবে চারপাশের গ্রামগুলো মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। বর্ষায় গেলে হাওর ভ্রমণের আনন্দ অনেকটা বিরুলিয়াতেই পাওয়া যায়, কালো কাদা পানির মাঝে নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে ফিরে এলাম আবার নিজ ঠিকানায়.. হাজারো প্রশ্নবিদ্ধ কর্দমাক্ত নাগরিক জীবনে…!!

বিরুলিয়া ব্রিজ পৌঁছে স্থানীয় যে কাউকে জিজ্ঞাস করলে আপনাকে বিরুলিয়া জমিদার বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দিবে। কাছেই আছে গোলাপ গ্রাম, দুটি স্পটই একই দিনে দেখে আসা সম্ভব, এসব জায়গায় গেলে মন ভালোও যেমন হয়, তেমনি জীবনের অর্থও কিছুটা হলেও খুঁজে পাওয়া যায় !

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধ“শুভম” কবি কামরুন্নাহার‘এর কবিতা
পরবর্তী নিবন্ধ“মায়া” কবি বেণুবর্ণা অধিকারী‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে