ভাষা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা -সাফিয়া খন্দকার রেখা

0
337
সাফিয়া খন্দকার রেখা

সাফিয়া খন্দকার রেখা : প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলাভাষার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের ইতিহাস ও জাতীয় চেতনাবোধ। বাংলাভাষার ইতিহাস মূলত বাঙালি জাতির অস্তিত্বের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বৃটিশমুক্ত হয়ে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। পাকিস্তান দুই অংশে বিভক্ত হয়, পূর্ব পাকিস্তান – পশ্চিম পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে “তমদ্দুন মজলিস ” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করা হয় এবং এই সংগঠনটি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথমে উত্থাপন করে।

তমদ্দুন তখন তিন বিজ্ঞজনের লেখা নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। ১৯৪৭ সালেই করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি ঘোষণাপত্রে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সুপারিশ করা হয়। সেই দিনই বিরোধিতা এবং প্রতিবাদ শুরু হয়, সেই সমাবেশ থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদার দাবি জানানো হয় এবং গঠন করা হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। তখন সমাজ ছিলো রক্ষণশীল, নারীদের চলাফেরায় ছিলো নানান রকম বাধা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে মেয়েদের একসঙ্গে পড়াশোনায় ছিলো ভিষণ কড়াকড়ি। ক্লাশ শুরুর আগে মেয়েরা কমন রুমে বসে থাকতো, শিক্ষক ক্লাসে ঢোকার পূর্বমুহূর্ত সময়ে মেয়েদের ডেকে আনা হতো। ঠিক এমনই পরিস্থিতিতে মেয়েদের কোন আন্দোলনে যোগ দেয়া কঠিন ছিলো। তবুও ভাষা সংগ্রামের এই আন্দোলনে পুরুষের সাথে নারীরা সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন, কখনও নারীরা নিরবে কখনও আন্দোলনের সামনে থেকে। সুফিয়া খাতুন তখন উইমেন স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা বাচ্চু, নাদিরা বেগম, হালিমা খাতুন, শামসুন্নাহার আহসান, খোরশেদী খানম ভাষাসংগ্রামের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে কাজ করেছেন। বাহান্নর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে স্কুল কলেজের মেয়েরা খণ্ড খণ্ড দলে বিভক্ত হয়ে আমতলার সভায় যোগ দিতে এসেছিলো। বর্তমানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশার সঙ্গে নারী শিল্পী নভেরার নাম স্মরণ করতে হবে আমাদের। কেবল মাত্র ঢাকায় নয় ঢাকার বাহিরে সিলেট, চিটাগাং, বগুড়া, নারায়নগঞ্জ শহরে ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিলো।

ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু মনে করেন ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের ইতিহাস যথাযথ ভাবে উঠে আসেনি এখনও ইতিহাসের পাতায়।”বাংলা ভাষা ও ভূখণ্ড” নামে একটি বই তিনি লিখেছেন। ভাষা সৈনিক সুফিয়া আহমেদ মনে করেন ভাষা আন্দোলনের এতো বছরে বাংলা ভাষার যেমন উন্নতি হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি। যদিও তিনি মনে করেন বাঙালি নারীদের অগ্রগতির বড় ধাপ ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ততা এবং ভাষা আন্দোলনের সাহসিকতাই মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশীদারিত্বে সাহস যুগিয়েছে।

২০.২.২০২১ ঢাকা।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধভাষা ও বাংলাদেশ -অলিউল্লাহ্ শোভন
পরবর্তী নিবন্ধএকুশ থাকুক বুকে বাংলা থাকুক মুখে -আজিজা রুপা‘এর কবিতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে