মা মাছ শিকার, চলনবিলের জন্য অশনি সংকেত-আবু জাফর সিদ্দিকী
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিলে এসেছে বর্ষার নতুন পানি। পানি আসার সাথে সাথে মা মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন জেলেরা। নিষিদ্ধ বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে তারা। তবে এই মা এবং ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকরী প্রদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনে চলনবিলে মাছ উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের।
নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দেশের সর্ববৃহৎ বিলাঞ্চলে এখন চলছে অবৈধ নানা উপায়ে মা মাছ ও পোনা শিকার। আর এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা বিলের বিভিন্ন পয়েন্টে বাদাই ও কারেন্ট জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দিনে ও রাতে মা মাছ শিকার করে হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও দেখার কেউ নেই। গত এক সপ্তাহে চলনবিলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন নদী ও খালে বন্যার পানি আসায় বিভিন্ন হাট বাজার, তাড়াশ ও সিংড়া মৎস্য আড়তে দেখা গেছে ডিমে পেট ভরপুর টেংরা, পাতাসী, পুটি, মলা, বোয়াল, শোল, মাগুড়সহ দেশীয় প্রজাতির ২০ থেকে ২৫ প্রকার মা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছগুলো। বর্ষা শুরু হলেই চলনবিলের মাছগুলো ডিম ফুটাতে থাকে। কিন্তু এই সময়টাতে মাছ ধরা একেবারেই নিষিদ্ধ। ১৯৫০ সালের মৎস্য আইন অনুযাযী ডিম এবং মা মাছগুলো শিকার আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিলে পানি আসার সাথে সাথে মাছ শিকারে নেমে পড়েন জেলেরা। এতে করে জেলেদের জালে ধরা পড়ে নষ্ট হচ্ছে ডিমগুলো।
চলনবিলের মাছ নিয়ে গবেষনা করা আবু বক্কর সিদ্দিক এর মতে, এই সময়টা চলনবিলের মাছের জন্য বিপদজনক সময়। বিলে নতুন পানি আসার সাথে সাথে মা মাছগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। বর্তমানে ডিমগুলো পরিপক্ক রয়েছে। বর্ষা শুরু হলেই ডিম ফুটানো শুরু হবে। কোন ভাবেই এই সময় মা মাছ শিকার করা যাবে না। কিন্তু চলনবিলে তার উল্টোটা ঘটে। এই নিধন বন্ধ করা না হলে চলনবিল এক সময় মাছ শুন্য হযে পড়বে।
চলনবিলের বিভিন্ন মৎস্য আড়তে প্রতি কেজি টেংরা ৭’শ টাকা, পাতাসী ১২’শ টাকা, মলা ৫’শ টাকা, বোয়াল ১ হাজার টাকা, শিং মাছ ৭’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমওয়ালা মাছ শিকারের ফলে মৎস্য উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চলনবিলবাসী। চলনবিলে নির্বিকারে মা মাছ নিধন বংশ বৃদ্ধিতে বাঁধার সৃষ্টি করছে। এ কারণে দেশীয় প্রায় ৩৯ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এ এলাকায় মা মাছ নিধন রোধে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।
আবু জাফর সিদ্দিকী শিক্ষার্থী, সিংড়া জি এ সরকারি কলেজ, নাটোর।