সেনাবাহিনীর গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা: ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে স্ত্রী

0
199

সেনাবাহিনীর গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা: ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে স্ত্রী

কামাল মৃধা
সেনাবাহিনীতে চাকরি করা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। এরপর ১৯৮৬ সালে অবসরের পর ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ। নিহতের বিধবা স্ত্রী চার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়দের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পর ২০০৫ সালে ওই সেনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র বসবাসের ঠিকানা পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে আজও ভাতা দেওয়া হয়নি ওই সেনার পরিবারকে। ওই সেনা সদস্যের স্ত্রীর বর্তমান বয়স ৬৮ বছর।

চার ছেলে মেয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে মেয়েকে হারিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। ছেলেরাও যৌবন পেরিয়ে মধ্য ময়সে পৌঁছেছেন। এমন অবস্থায় বার্ধক্যভারে জর্জরিত সাবেক সেনার স্ত্রীর একটাই জিজ্ঞাসা, জীবিত অবস্থায় কি তিনি তার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবেন না?

সদর, উপজেলার বড়হরিশপুর এলাকার অধিবাসী আমেনা বেগম জানান, তার স্বামী আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা স্যাপার পদে চাকরি করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তার জন্মস্থান ছিল বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বাউশিয়া গ্রামে। সেখানেই তারা স্বপরিবারে বাস করতেন। ১৯৮৫ সালে নদী ভাঙনে তাদের বাড়িঘর বিলিন হয়। এরপর ঢাকায় বসবাস করতেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। এরপর একটি ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার সুবাদে তারা নাটোরে বসবাস ও পরে স্থায়ীভাবে বাড়িঘর করেন। ১৯৯৯ সালে তার স্বামী মারা যান। এরপর ২০০৫ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ গ্যাজেটের অতিরিক্ত সংখ্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত সেনাবাহিনী গ্যাজেটে আব্দুল কুদ্দুস মোল্লাকে বরিশাল ঠিকানা উল্লোখ করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম প্রকাশ করা হয়। কিন্তু নাটোর সদর উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কাছে বর্তমান ঠিকানায় ওই ভাতা চেয়ে বার বার আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিলেও আজও ভাতা পাননি।

বৃদ্ধার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, তার বর্তমান বয়স ৫১ বছর। তার অপর দুই ভাইয়ের বয়স ৪৯ ও ৪৭ বছর। তার ছোটবোন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বর্তমান বসবাসের ঠিকানার অনুকূলে সমস্ত কাগজাদি দেওয়া হলেও তা ঠিকমতো না দেখেই ঠিকানা ভিন্ন উল্লেখ করে তাদের ভাতা চালু করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের যুগ্ম-আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গেজেটভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তার সম্মানী ভাতার জন্য বিধবা স্ত্রীর আবেদন করেও ভাতা না পাওয়া একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি জেনে আমরা লজ্জিত। এ বিষয়ে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দ্রুততার সঙ্গে তার সম্মানী ভাতা বরাদ্দের জন্য দাবি জানাচ্ছি।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবেদন ও গেজেটের ঠিকানা মিল না থাকায় এর আগে মন্ত্রণালয় থেকে ঠিকানা ভিন্ন উল্লেখ করে সম্মানি ভাতার আবেদনটি ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি হিজলা উপজেলা প্রশাসনে আবেদন করলে তারা এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে রেজুলেশনভুক্ত করবেন। ওই কপি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে বর্তমান ঠিকানায় ভাতা চালু হতে পারে।

আমেনা বেগম জানান, প্রশাসনের চাওয়া মতে এর আগে হিজলায় বসবাস করা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়ন, হিজলা উপজেলা সমাজসেবা থেকে প্রত্যয়নসহ নাটোরে বসবাসের প্রমাণ হিসেবে সমস্ত কাগজাদি জমা দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি বয়সে বৃদ্ধ। তার ছেলেদের পক্ষেও আর বরিশালে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় হয়তো তিনি জীবিত অবস্থায় ভাতা পাবেন না। তবে সেনা সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ করার যাবতীয় প্রমাণ থাকার পরও সম্মানী ভাতা না পাওয়া কি দেশপ্রমিকদের অবহেলার মাধ্যমে দেশকেই খাটো করা নয়?

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী ও প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ কামনা করেন আমেনা বেগম।

Advertisement
পূর্ববর্তী নিবন্ধনটী – অনসূয়া যূথিকা’র গল্প
পরবর্তী নিবন্ধবাগাতিপাড়ায় প্রকৃত ভাতাভোগীর তালিকা তৈরিতে ইউএনও’র বিশেষ উদ্যোগ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে